ফাইল ছবি
অনলাইন ডেস্ক : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে শাহনাজ বেগম পাখি (৩৮) নামে এক গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত নাছিমা বেগমকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় গৃহবধূর মা হাজেরা বেগম নাছিমাসহ অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা করেছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ আলম।
ঘটনার শিকার শাহনাজ বেগম লাকি উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের উপাদিক গ্রামের খান বাড়ির আমিনুল খানের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া পাখির স্বামী আমিন খান বলেন, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমি বাড়ির পাশে দোকানে বসে ছিলাম। ওই সময় আমার ভগিনা শাকিল জানায় তার মামির গায়ে আগুন লেগেছে। তাৎক্ষণিক আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে ঘরের পাশে ডোবায় পড়ে থাকতে দেখি। তখন তার শরীরে অনেক জায়গা আগুনে পুড়ে গেছে। ওই অবস্থায় বাড়ির লোকজনের সহায়তায় স্ত্রীকে নিয়ে সদর হাসপাতালে আসি। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতেই নিয়ে আসি জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছন, তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। সে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী পাখির সঙ্গে প্রতিবেশি প্রবাসী হাফেজ ফয়েজ আহাম্মদের স্ত্রী নাছিমা বেগমের সুদে নেওয়া টাকা পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। এসব বিষয় নিয়ে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। এর আগে নাছিমা আমার স্ত্রীকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়। এসব ঘটনায় নিয়ে আমার স্ত্রী আদালতে মামলা করেছে। ওই মামলাও চলমান। এরপর নাছিমার তার লোকজনসহ সর্বশেষ পাখির হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যাচেষ্টা করে।
স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য এবং ওই বাড়ির বাসিন্দা নুরজাহান বেগম বলেন, ঘটনার সময় আমি জেনেছি পাখির গায়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে আমি অসুস্থ থাকায় আসতে পারিনি। সকালে এসে ঘটনা জানলাম। আমার জানা মতে পাখি আর নাছিমা আপন বোনের মত সম্পর্ক ছিল। টাকা লেনদেন নিয়ে বাড়ির লোকসহ আরও কয়েকজন বসে স্ট্যাম্প করে লেনদেনের সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। এর বাইরে কোনো লেনদেনের বিষয় আমরা জানি না। তবে মৌখিক লেনদেন অনুযায়ী নাছিমা আরও ৫৩ হাজার টাকা পায় বলে জানাতে পারি।
ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, সুদের টাকা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা দুটি স্ট্যাম্প পাই। একটিতে ২৫ হাজার টাকা। ওই ২৫ হাজার টাকা সুদসহ পাখি ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। আরেকটিতে পাই ৫০ হাজার টাকা। এই টাকার সুদ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। তবে নাছিমা আমাদের কাছে বলে পাখি আরও দুই লাখ নিয়েছে। ওই টাকার পরিমাণ সাদা কাগজে লেখা রয়েছে। তবে ওই কাগজে যাদের স্বাক্ষী করা হয়েছে তারা বলেছেন, তারা টাকা লেনদেন সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং তাদের সামনে লেনদেন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, নাছিমা ও পাখির লেনদেন দিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়েছে। নাছিমা শুধুমাত্র পাখির সাথে নয়, সুদের কারবার নিয়ে তার সঙ্গে অন্যদেরও বিরোধ হয়েছে। এর পূর্বেও পাখির ঘরে রাতে ইটপাটকেল মারে। হাত-পা বেঁধে হত্যার চেষ্টা করে। এসব কথা পাখি আমাদেরকে জানিয়েছে। নাছিমার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় লোকজন কয়েকদিন আগে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।
অভিযুক্ত নাছিমার মা মমিনা বেগম জানান, তিনিও মেয়ের সঙ্গে এই বাড়িতে থাকেন। মেয়ে জামাতা ফয়েজ ও দুই নাতি থাকেন প্রবাসে। গতকাল সন্ধ্যায় তার মেয়ে নাছিমা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন কাজে। রাতে একবার এসে আবার চলে যান। ওই বাড়ির ঘটনার পর তার মেয়ের ঘরের চারপাশের জনালার গ্লাস ভাঙচুর এবং দরজা ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্থানীয়রা কুপিয়েছে। তিনি এই ঘটনায় অপরাধীর বিচার দাবি করেন।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, এই বিষয় জানার পর রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে পাখি ও নাছিমার মধ্যে বিরোধ। এ সব ঘটনায় উভয়পক্ষের অভিযোগ আছে। পুলিশের একাধিক টিম পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। পাখির মা বিকেলে মামলা করেছে। অভিযুক্ত নাছিমাকে গ্রেপ্তার করে চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করেছি।







