ফুটবল মাঠে গোলা, ছেলের লাশ জড়িয়ে অঝোরে কান্না বাবার

রক্তমাখা একখানা চাদর। হাসপাতালের বারান্দায় সেই চাদরেই ঢাকা স্ট্রেচারের উপর বছর ষোলোর এক কিশোরের দেহ। আর তার ঠিক মাথার সামনে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন এক ব্যক্তি। ছবিটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের।

 

রুশবাহিনীর বোমাবর্ষণে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। ঘটনাস্থল অ্যাজভ সাগরলাগোয়া বন্দরশহর মারিউপল। মাথার উপর দিয়ে গর্জন করে উড়ে যাচ্ছিল রুশ বাহিনীর বিমান। চারপাশে তখন গোলাগুলির আওয়াজ, আর মাঝেমধ্যেই কানফাটানো বিস্ফোরণ, সঙ্গে বিশাল আগুনের গোলা আকাশে উঠে মিশে যাচ্ছিল।

 

বুধবার। মাঠে তখন বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত ইলিয়া। যে কানফাটানো বিস্ফোরণের আওয়াজ আশপাশে শুনছিল তারা, এবার তেমনই একটা গোলা এসে পড়ল মাঠে। অভিঘাত এতোটাই ছিল যে সবাই ছিটকে পড়েছিল এ ধার ও ধার। ধোঁয়া আর ধুলোয় চারপাশ ভরে গিয়েছিল। একটু পরিষ্কার হতেই দেখা গেল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাঠ। কেউ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে। ইলিয়ার সারা শরীর তখন রক্তে ভিজে গিয়েছিল। খরবটা পেয়েই ছটে গিয়েছিলেন ইলিয়ার বাবা শেরি।

 

আহত কিশোরদের একের পর এক গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা হাসপাতালে ছুটেছিলেন স্থানীয়রা। ইলিয়াকে সোজা অস্ত্রোপচারের ঘরে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে তখন তার বাবা অধীর অপেক্ষায়, আশঙ্কার প্রহর গুনছিলেন। বেশ কিছু ক্ষণ পর শল্যচিকিৎসকরা এক এক করে ওটি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। কারও মুখে কথা নেই।

 

ইলিয়ার বাবার চোখে চোখ না রেখেই তারা এক এক করে বেরোলেন। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক শুধু শেরির হাতটা ধরলেন। অন্য চিকিৎসককে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা গেল। ওটি-র দরজার সামনে তখন ঠায় দাঁড়িয়ে শেরি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল। একটা তীব্র যন্ত্রণায় যেন গলা বুজে আসছিল।

 

চিকিৎসকরা কোনও কথা না বলেই ওটি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে শেরির আর বুঝতে দেরি হয়নি কী ঘটে গেছে। রক্তমাখা চাদরে ঢাকা ছিল ইলিয়া। আপাদমস্তক। না, কোনও হেলদোল নেই শরীরের। অসাড় হয়ে স্ট্রেচারের উপর পড়ে।

 

চিৎকার করে কাঁদার চেষ্টা করেও যেন কাঁদতে পারেননি শেরি। ইলিয়ার মাথার কাছে রাখা চেয়ারটা টেনে নিয়ে ছেলের মাথায় একটা স্নেহের চুম্বন করলেন। প্রাণবন্ত ছেলেটা কয়েক ঘণ্টা আগেও ফুটবল নিয়ে খেলছিল। এখন একেবারেই সব চুপ। ওটি-র নিস্তব্ধতারও যেন শেরিকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনও ভাষা ছিল না। ছেলের মাথায় মুখ ঠেকিয়ে নিঃশব্দেই কেঁদে চলেছেন সন্তানহারা এক বাবা। আর এই দৃশ্যই যেন গোটা বিশ্বের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

» আওয়ামী লীগের শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

» বঙ্গবন্ধু সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন : খাদ্যমন্ত্রী

» ট্রাকচাপায় প্রকৌশলী নিহত

» অপহরণকারী চক্রের সদস্য সিরাজকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার

» কেনিয়ায় বৃষ্টি-বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬৯

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২১জন গ্রেপ্তার

» নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য শ্রমিক ও জনগণের জন্য অভিশাপ : ইনু

» শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : রিজভী

» যতবার সরকারে এসেছি ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফুটবল মাঠে গোলা, ছেলের লাশ জড়িয়ে অঝোরে কান্না বাবার

রক্তমাখা একখানা চাদর। হাসপাতালের বারান্দায় সেই চাদরেই ঢাকা স্ট্রেচারের উপর বছর ষোলোর এক কিশোরের দেহ। আর তার ঠিক মাথার সামনে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন এক ব্যক্তি। ছবিটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের।

 

রুশবাহিনীর বোমাবর্ষণে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে কিশোরের। ঘটনাস্থল অ্যাজভ সাগরলাগোয়া বন্দরশহর মারিউপল। মাথার উপর দিয়ে গর্জন করে উড়ে যাচ্ছিল রুশ বাহিনীর বিমান। চারপাশে তখন গোলাগুলির আওয়াজ, আর মাঝেমধ্যেই কানফাটানো বিস্ফোরণ, সঙ্গে বিশাল আগুনের গোলা আকাশে উঠে মিশে যাচ্ছিল।

 

বুধবার। মাঠে তখন বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত ইলিয়া। যে কানফাটানো বিস্ফোরণের আওয়াজ আশপাশে শুনছিল তারা, এবার তেমনই একটা গোলা এসে পড়ল মাঠে। অভিঘাত এতোটাই ছিল যে সবাই ছিটকে পড়েছিল এ ধার ও ধার। ধোঁয়া আর ধুলোয় চারপাশ ভরে গিয়েছিল। একটু পরিষ্কার হতেই দেখা গেল রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাঠ। কেউ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে। ইলিয়ার সারা শরীর তখন রক্তে ভিজে গিয়েছিল। খরবটা পেয়েই ছটে গিয়েছিলেন ইলিয়ার বাবা শেরি।

 

আহত কিশোরদের একের পর এক গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা হাসপাতালে ছুটেছিলেন স্থানীয়রা। ইলিয়াকে সোজা অস্ত্রোপচারের ঘরে (ওটি) নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরে তখন তার বাবা অধীর অপেক্ষায়, আশঙ্কার প্রহর গুনছিলেন। বেশ কিছু ক্ষণ পর শল্যচিকিৎসকরা এক এক করে ওটি ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। কারও মুখে কথা নেই।

 

ইলিয়ার বাবার চোখে চোখ না রেখেই তারা এক এক করে বেরোলেন। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক শুধু শেরির হাতটা ধরলেন। অন্য চিকিৎসককে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা গেল। ওটি-র দরজার সামনে তখন ঠায় দাঁড়িয়ে শেরি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল। একটা তীব্র যন্ত্রণায় যেন গলা বুজে আসছিল।

 

চিকিৎসকরা কোনও কথা না বলেই ওটি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে শেরির আর বুঝতে দেরি হয়নি কী ঘটে গেছে। রক্তমাখা চাদরে ঢাকা ছিল ইলিয়া। আপাদমস্তক। না, কোনও হেলদোল নেই শরীরের। অসাড় হয়ে স্ট্রেচারের উপর পড়ে।

 

চিৎকার করে কাঁদার চেষ্টা করেও যেন কাঁদতে পারেননি শেরি। ইলিয়ার মাথার কাছে রাখা চেয়ারটা টেনে নিয়ে ছেলের মাথায় একটা স্নেহের চুম্বন করলেন। প্রাণবন্ত ছেলেটা কয়েক ঘণ্টা আগেও ফুটবল নিয়ে খেলছিল। এখন একেবারেই সব চুপ। ওটি-র নিস্তব্ধতারও যেন শেরিকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনও ভাষা ছিল না। ছেলের মাথায় মুখ ঠেকিয়ে নিঃশব্দেই কেঁদে চলেছেন সন্তানহারা এক বাবা। আর এই দৃশ্যই যেন গোটা বিশ্বের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com