পবিত্র রমজানের সবচেয়ে মহিমান্বিত রাত হচ্ছে ‘শবেকদর’ বা ‘লাইলাতুল কদর’। এ রাতকে বিশ্বের মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ রাতে মানবজাতির মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ১-৩)
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬০; বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
তবে নির্দিষ্ট করে লাইলাতুল কদর চিহ্নিত করা হয়নি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
তবে বিশুদ্ধ হাদিসে কদরের রাত চেনার বেশ কিছু আলামতের কথা এসেছে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক লাইলাতুল কদরের রাত চেনার পাঁচ উপায়-
প্রথম আলামত : আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘ঐ রাতের আলামত বা লক্ষণ হলো, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। তবে সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোনো তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (মুসলিম, হাদিস: ১৬৭০; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৬৫৫)
দ্বিতীয় আলামত :আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠাণ্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লালবর্ণে, তবে দুর্বল থাকবে।’ (ইবনু খুযাইমাহ, হাদিস: ২১৯২)
তৃতীয় আলামত :উবাদাহ ইবনু সামাত (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদর শেষ দশ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাত্রে নিজের (আমলের) হিসেব নিতে দাঁড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বের এবং পরের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর এই রাত্রি আছে বিজোড় রাত্রিগুলোতে: নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।’
নবীজি আরো বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়ায় প্রশান্তি (সাকিনাহ) থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত (আকাশে) কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতের চাঁদের মতোই সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৭৬৫)
চতুর্থ আলামত :এক হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না গরম, না ঠাণ্ডা। সে রাতে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না।’(মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯; সহিহ আল-জামিঈ, হাদিস: ৫৪৭২)
পঞ্চম আলামত : নবী (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রয়েছে সপ্তম, নবম অথবা বিংশ, যে রাতে (পৃথিবীর) নুড়ি পাথরের চেয়ে বেশি সংখ্যক ফেরেশতাগণ জমিনে নেমে আসে।’ (মাজমাউল জাওয়ায়িদ, হাদিস: ৩/১৭৮; সহিহ আল-জামি, হাদিস: ৫৪৭৩)