সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : সমুদ্র দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকের দৈত্য। সমুদ্র উপকূল থেকেই সংগ্রহ করা পরিত্যক্ত প্রায় ৬ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এই দানব তৈরি করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত এ ভাস্কর্য ৩ মাস প্রদর্শন করা হবে। উদ্দেশ্য একটাই—প্লাস্টিক দূষণে বিপর্যস্ত পৃথিবীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো এবং মানুষকে সতর্ক করা।
৪৫ ফুট উচ্চতার শিল্পকর্মটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তরুণ শিল্পী—অন্তু, আবীর, উচ্ছ্বাস, নির্ঝর ও রিয়াজ—১৫ দিন ধরে কাজ করে পূর্ণতা দিয়েছেন। সহায়তা করেছেন আরও ৮ জন কারিগর।
বুধবার সন্ধ্যায় এই ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান। এসময় উপস্থিত ছিলেন— অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম, পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিদ্যানন্দের সমন্বয়ক মুহাম্মদ মোবারক বলেন, ২০২২ সালে প্রথম প্লাস্টিক দানব তৈরির পর আমরা ভেবেছিলাম সচেতনতা বাড়বে। কিন্তু বরং সমস্যা বেড়েছে। তাই এবার দানবকে আরও ভয়ংকর রূপে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। এমনকি সঙ্গে এসেছে আরও দুইটি প্রতীকী দানব—যা বোঝাচ্ছে প্লাস্টিকের বিপর্যয় বাড়ছেই।
ভাস্কর আবীর বলেন, প্রতিদিন যেসব প্লাস্টিক সৈকতে ভেসে আসে, সেগুলোই প্রতীকী দানব হয়ে আমাদের জীবনে ফিরে আসছে—এটাই এখানে দেখাতে চেয়েছি। মানুষ ভাস্কর্যের ভয়ংকর চেহারা দেখে অন্তত প্লাস্টিক ব্যবহারে দ্বিগুণ সতর্ক হবে। কারিগররা প্লাস্টিক বর্জ্য ছাড়াও বাঁশ, কাঠ, লোহা, পেরেক ও আঠা ব্যবহার করেছেন। পুরো ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট, যা কক্সবাজার সৈকতের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পরিবেশ-প্রতীকী স্থাপনা।
প্রতিদিন কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। বিচকর্মী মাহবুব জানান, অনেক পর্যটক পানীয় বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন ও খাবারের প্যাকেট ব্যবহার শেষে সৈকতেই ফেলে যান। এগুলো সমুদ্রে গিয়ে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে। এই প্রদর্শনী সেই বাস্তবতা সবাইকে সামনে তুলে আনছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আল আমিন বলেন, যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে মানুষের শরীরেও ঢুকছে। এই দানব যেন সত্যিকারের বিপদের প্রতীক।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, গত তিন বছরে সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক রিসাইকেল করেছি। শুধু গত চার মাসে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে সংগ্রহ করেছি আরও ৮০ মেট্রিক টন। এই প্রদর্শনী দেখাবে, প্লাস্টিক যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত ও রিসাইকেল করা যায়—তবে তা বিপদ নয়, সম্পদ। কিন্তু সমুদ্রে ফেললে তা দানবীয় বিপর্যয় ডেকে আনে।
জেলা প্রশাসনের এডিএম মো. শাহিদুল আলম জানান, প্লাস্টিক দানব ছাড়াও আশপাশের বালিয়াড়িতে পরিবেশবান্ধব চিত্রকর্ম স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্লাস্টিক দূষণবিষয়ক ভাস্কর্য প্রদর্শনী, লাইভ সচেতনতামূলক সংগীত পরিবেশনা, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহ অভিযান, পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিয়ে আলোচনা কর্মসূচি থাকছে। এগুলো তিন মাস ধরে পর্যটকদের জন্য থাকবে।
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজারের যুগ্ম আহবায়ক এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন বলেন, সৈকতের বুকে দাঁড়ানো এই বিশাল প্লাস্টিক দানব কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়; এটি মানুষের অসচেতনতার বিরুদ্ধে সমুদ্রের আর্তনাদ। পৃথিবী আর বর্জ্য বহন করতে পারছে না—এ বার্তা নতুন প্রজন্মকে সতর্ক করছে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা এই দানব তাই আমাদের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে—এখনই না থামলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানো যাবে না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, কক্সবাজার সৈকতকে বাঁচাতে বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকর। এটি পর্যটকদের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা গড়ে তুলবে।







