নামাজে কান্না এলে নামাজের ক্ষতি হবে কি?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক  : নামাজে কান্না আসা নতুন কিছু নয়; বরং এটি খুশু-খুজুর একটি স্বাভাবিক ও প্রশংসনীয় প্রকাশ। আল্লাহর ভয়ে, জাহান্নামের শাস্তির চিন্তায়, কোরআনের আয়াতের গভীরতা বা আখেরাতের স্মরণে চোখে পানি চলে আসা মোস্তাহাব এবং তা ঈমানের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে কখনও এত কাঁদতেন যে যেন চুলায় রাখা পানির ডেকচি টগবগ করে ফুটছে। (আবু দাউদ: ৯০৪)। কখনও নামাজে তাঁর কোল, দাড়ি মোবারক ভিজে যেত; এমনকি চোখের পানিতে জমিন সিক্ত হয়ে ওঠত। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬২০)। এসব হাদিস প্রমাণ করে যে নামাজে কান্না কোনো ত্রুটি নয়; বরং মহান সুন্নাহ।

কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে (সেজদা) দেয় এবং এ (কোরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১০৯) এই আয়াত প্রমাণ করে যে আল্লাহর কথা শুনে কান্না করা ইবাদতের অংশ এবং ঈমানের গভীরতা নির্দেশ করে।

তবে এ কান্না দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমটি- আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতের চিন্তায় বা কোরআনের প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্ত কান্না, যা নামাজের খুশু বাড়ায় এবং নামাজের মান উন্নত করে। দ্বিতীয়টি- দুনিয়াবি দুঃখ, পারিবারিক কষ্ট, শারীরিক ব্যথা বা মানসিক চাপের কারণে কান্না, যা সাধারণত নামাজের পরিপূর্ণতার সঙ্গে যায় না। হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, প্রথম ধরণের কান্নায় নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না, শব্দ হলেও নয়। কিন্তু ‘দুনিয়াবি কারণে কান্না যদি উচ্চস্বরে হয়, তাহলে নামাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ (হেদায়া: (১/১১৮)

সালিহ আল উসাইমিন (রহ) বলেন, নামাজে যদি কান্না আসে আল্লাহর ভয়, পরকালের স্মরণ বা কোরআনের ওয়াদা-ওয়াঈদ আয়াতের প্রভাবে, তাহলে তা নামাজকে ভঙ্গ করে না। কিন্তু যদি কান্না হয় কোনো দুনিয়াবি বিপদ বা বিপত্তির কারণে, তবে নামাজ ভঙ্গ হতে পারে। এজন্য নামাজি ব্যক্তির উচিত এমন কান্না থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নামাজে শুধুমাত্র নামাজের বিষয়গুলোতে মনোযোগী থাকা।’ (ইবনু উসাইমিন; ফতোয়া নূরুন আলাদ-দারব: ১৪১/৯)

এখানে একটি বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন- নামাজে কান্না প্রশংসনীয় হলেও কৃত্রিম কান্না বা লোক দেখানো আচরণ থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে। রিয়া বা দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা নামাজের সওয়াব নষ্ট করে দেয়; বরং এটিকে কঠিন গুনাহ হিসেবে ধরা হয়। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) গোপন শিরকের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ছিলো, অতঃপর কেউ তাকে দেখছে বলে সে নামাজকে খুব সুন্দর করে পড়তে শুরু করল।’ (ইবনু মাজাহ: ৪২৭৯; আহমদ: ৩/৩০; হাকিম: ৪/৩২৯)

সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হলো-আল্লাহর ভয়, আখেরাতের স্মরণ বা কোরআনের প্রভাবে চোখে পানি এলে নামাজ নষ্ট হয় না; বরং এটি একটি উত্তম ইবাদতের নিদর্শন। কিন্তু পার্থিব দুঃখে উচ্চস্বরে কান্না করলে নামাজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নামাজে উপস্থিতি, মনোযোগ ও খুশু বজায় রেখে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘৪১ বছর আগে জামায়াতের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়কের প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়’

» তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, প্রতিক্রিয়ায় যা বললো জামায়াত

» ডিম নিয়ে ৭ ভ্রান্ত ধারণা

» সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ৫ মামলার আসামি গ্রেফতার

» বিরোধিতা সত্ত্বেও অল্প সময়ে এত অর্জন সরকারের নিষ্ঠারই প্রতিফলন

» নামাজে কান্না এলে নামাজের ক্ষতি হবে কি?

» ইয়াবা ও ১৫ বোতল ভারতীয় মদসহ তিন জন গ্রেফতার

» কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের নথি প্রকাশের বিলে ট্রাম্পের সই

» আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ফের বসছে ইসি, আলোচনায় ২৩ ইস্যু

» অপরিণত শিশুর বিশেষ যত্ন নেবেন কীভাবে?

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নামাজে কান্না এলে নামাজের ক্ষতি হবে কি?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক  : নামাজে কান্না আসা নতুন কিছু নয়; বরং এটি খুশু-খুজুর একটি স্বাভাবিক ও প্রশংসনীয় প্রকাশ। আল্লাহর ভয়ে, জাহান্নামের শাস্তির চিন্তায়, কোরআনের আয়াতের গভীরতা বা আখেরাতের স্মরণে চোখে পানি চলে আসা মোস্তাহাব এবং তা ঈমানের নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজে কখনও এত কাঁদতেন যে যেন চুলায় রাখা পানির ডেকচি টগবগ করে ফুটছে। (আবু দাউদ: ৯০৪)। কখনও নামাজে তাঁর কোল, দাড়ি মোবারক ভিজে যেত; এমনকি চোখের পানিতে জমিন সিক্ত হয়ে ওঠত। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬২০)। এসব হাদিস প্রমাণ করে যে নামাজে কান্না কোনো ত্রুটি নয়; বরং মহান সুন্নাহ।

কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে (সেজদা) দেয় এবং এ (কোরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১০৯) এই আয়াত প্রমাণ করে যে আল্লাহর কথা শুনে কান্না করা ইবাদতের অংশ এবং ঈমানের গভীরতা নির্দেশ করে।

তবে এ কান্না দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমটি- আল্লাহর ভয়ে, আখেরাতের চিন্তায় বা কোরআনের প্রভাবে স্বতঃস্ফূর্ত কান্না, যা নামাজের খুশু বাড়ায় এবং নামাজের মান উন্নত করে। দ্বিতীয়টি- দুনিয়াবি দুঃখ, পারিবারিক কষ্ট, শারীরিক ব্যথা বা মানসিক চাপের কারণে কান্না, যা সাধারণত নামাজের পরিপূর্ণতার সঙ্গে যায় না। হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, প্রথম ধরণের কান্নায় নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না, শব্দ হলেও নয়। কিন্তু ‘দুনিয়াবি কারণে কান্না যদি উচ্চস্বরে হয়, তাহলে নামাজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ (হেদায়া: (১/১১৮)

সালিহ আল উসাইমিন (রহ) বলেন, নামাজে যদি কান্না আসে আল্লাহর ভয়, পরকালের স্মরণ বা কোরআনের ওয়াদা-ওয়াঈদ আয়াতের প্রভাবে, তাহলে তা নামাজকে ভঙ্গ করে না। কিন্তু যদি কান্না হয় কোনো দুনিয়াবি বিপদ বা বিপত্তির কারণে, তবে নামাজ ভঙ্গ হতে পারে। এজন্য নামাজি ব্যক্তির উচিত এমন কান্না থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নামাজে শুধুমাত্র নামাজের বিষয়গুলোতে মনোযোগী থাকা।’ (ইবনু উসাইমিন; ফতোয়া নূরুন আলাদ-দারব: ১৪১/৯)

এখানে একটি বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন- নামাজে কান্না প্রশংসনীয় হলেও কৃত্রিম কান্না বা লোক দেখানো আচরণ থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে হবে। রিয়া বা দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা নামাজের সওয়াব নষ্ট করে দেয়; বরং এটিকে কঠিন গুনাহ হিসেবে ধরা হয়। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) গোপন শিরকের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ছিলো, অতঃপর কেউ তাকে দেখছে বলে সে নামাজকে খুব সুন্দর করে পড়তে শুরু করল।’ (ইবনু মাজাহ: ৪২৭৯; আহমদ: ৩/৩০; হাকিম: ৪/৩২৯)

সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হলো-আল্লাহর ভয়, আখেরাতের স্মরণ বা কোরআনের প্রভাবে চোখে পানি এলে নামাজ নষ্ট হয় না; বরং এটি একটি উত্তম ইবাদতের নিদর্শন। কিন্তু পার্থিব দুঃখে উচ্চস্বরে কান্না করলে নামাজ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নামাজে উপস্থিতি, মনোযোগ ও খুশু বজায় রেখে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com