আয়রনের অভাব পূরণে করণীয়

সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও গত ২৬ নভেম্বর পালিত হলো  Iron Deficiency Day. ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে মিনারেলস বা খনিজ লবণ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আয়রন বা লৌহ। এ উপাদানটির অভাবে দেহে দেখা দিতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। বাংলাদেশে শহর এলাকায় ৬০% এর বেশি ও গ্রামাঞ্চলে ৭০% এর বেশি কিশোরী, নারী ও শিশুরা আয়রনের অভাবে ভুগে থাকেন। আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, ফলে রক্তস্বল্পতাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া যে যে সমস্যাগুলো হতে পারে-

 

বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করা :এ সমস্যাটি আয়রন ঘাটতির অন্যতম বড় লক্ষণ। রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের কাজও ব্যাহত হয়। তখন বুকে ব্যথা হয় ও নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়।
ক্লান্তি ও অবসাদ : কাজ করলে ক্লান্তি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে অল্প কাজ করেই অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার না। শরীরে আয়রন ঘাটতির একটি সাধারণ লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ক্লান্ত হওয়া।

 

 

ভারসাম্যহীনতা : ডোপামিন হরমোনকে বলা হয় ‘মাধ্যম’, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ কম হয়। ফলে হাঁটার সময় শরীরে ভারসাম্য বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পায়ের ভারসাম্যহীনতা সাধারণত বিকাল ও রাতে অনুভূত হয়।

 

ত্বক ফ্যাকাশে ও খসখসে হওয়া :শরীরের লাল রক্ত কণিকাকে হিমোগ্লোবিন বলা হয়। ত্বক সজীব ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে হিমোগ্লোবিন। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হয় না। ফলে ত্বক ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে যায়।

 

মাথাব্যথা : আয়রনের অভাবে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। মস্তিষ্কে যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন তা না হলে মাথাব্যথা হয়। এছাড়া হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তচাপের মাত্রা কমে যেতে পারে।

 

চুল পড়া : অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের গোড়া নরম হয়ে যাওয়া, রুক্ষতা ও চুল ফেটে যাওয়া আয়রন ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ।

 

পরামর্শ : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত না। এছাড়া প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণে আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে তা একজন পুষ্টিবিদ আপনাকে জানাবেন।

 

শরীরে আয়রনের ঘাটতি যাতে না ঘটে তাই যে খাবারগুলো অবশ্যই খেতে হবে তা হলো- শাকসবজি, ছোলা, কলিজা, কুমড়ো বিচি, ডাল, ডিমের কুসুম, পালংশাক, কচুশাক, আপেল, খেজুর, বাদাম, সয়াবিন ও সামুদ্রিক মাছ।

 

দেহে বিভিন্ন কারণে আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে তবে কিছু কিছু অসচেতনতা এর কারণ হিসেবে কাজ করে।

১. উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আয়রন গ্রহণ করলে  ভিটামিন সি জাতীয় কিছু খেতে হবে যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি। না হয় উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রন মানবদেহে শোষিত হবে না তার ফলে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

২. চা অথবা কফি আয়রনের শোষণকে বাধা দেয় তাই আয়রন জাতীয় খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে চা অথবা কফি পান করা উচিত নয়। বিশেষ করে ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়।

৩. দীর্ঘদিন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, কেননা ক্যালসিয়াম আয়রনের শোষণকে ব্যাহত করে। অতএব ক্যালসিয়াম ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।

আসুন নিজে জানি, অন্যকে জানাই আয়রনের ঘাটতি দূর করি। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

-মাহফুজা আফরোজ সাথী, প্রধান পুষ্টিবিদ

ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম। সূএ:বাংলাদেশ প্র্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল বৃদ্ধের

» আওয়ামী লীগের শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল

» বঙ্গবন্ধু সব সময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন : খাদ্যমন্ত্রী

» ট্রাকচাপায় প্রকৌশলী নিহত

» অপহরণকারী চক্রের সদস্য সিরাজকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার

» কেনিয়ায় বৃষ্টি-বন্যায় নিহত বেড়ে ১৬৯

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ২১জন গ্রেপ্তার

» নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য শ্রমিক ও জনগণের জন্য অভিশাপ : ইনু

» শেখ হাসিনার অধীনে কেয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : রিজভী

» যতবার সরকারে এসেছি ততবার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আয়রনের অভাব পূরণে করণীয়

সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও গত ২৬ নভেম্বর পালিত হলো  Iron Deficiency Day. ছয়টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে মিনারেলস বা খনিজ লবণ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো আয়রন বা লৌহ। এ উপাদানটির অভাবে দেহে দেখা দিতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা। বাংলাদেশে শহর এলাকায় ৬০% এর বেশি ও গ্রামাঞ্চলে ৭০% এর বেশি কিশোরী, নারী ও শিশুরা আয়রনের অভাবে ভুগে থাকেন। আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, ফলে রক্তস্বল্পতাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া যে যে সমস্যাগুলো হতে পারে-

 

বুকে ব্যথা ও বুক ধড়ফড় করা :এ সমস্যাটি আয়রন ঘাটতির অন্যতম বড় লক্ষণ। রক্তে অক্সিজেন কমে গেলে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের কাজও ব্যাহত হয়। তখন বুকে ব্যথা হয় ও নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়।
ক্লান্তি ও অবসাদ : কাজ করলে ক্লান্তি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে অল্প কাজ করেই অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার না। শরীরে আয়রন ঘাটতির একটি সাধারণ লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ক্লান্ত হওয়া।

 

 

ভারসাম্যহীনতা : ডোপামিন হরমোনকে বলা হয় ‘মাধ্যম’, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ কম হয়। ফলে হাঁটার সময় শরীরে ভারসাম্য বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পায়ের ভারসাম্যহীনতা সাধারণত বিকাল ও রাতে অনুভূত হয়।

 

ত্বক ফ্যাকাশে ও খসখসে হওয়া :শরীরের লাল রক্ত কণিকাকে হিমোগ্লোবিন বলা হয়। ত্বক সজীব ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে হিমোগ্লোবিন। আয়রনের ঘাটতি থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন হয় না। ফলে ত্বক ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে যায়।

 

মাথাব্যথা : আয়রনের অভাবে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। মস্তিষ্কে যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন তা না হলে মাথাব্যথা হয়। এছাড়া হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তচাপের মাত্রা কমে যেতে পারে।

 

চুল পড়া : অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের গোড়া নরম হয়ে যাওয়া, রুক্ষতা ও চুল ফেটে যাওয়া আয়রন ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ।

 

পরামর্শ : চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আয়রন ট্যাবলেট খাওয়া উচিত না। এছাড়া প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণে আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে তা একজন পুষ্টিবিদ আপনাকে জানাবেন।

 

শরীরে আয়রনের ঘাটতি যাতে না ঘটে তাই যে খাবারগুলো অবশ্যই খেতে হবে তা হলো- শাকসবজি, ছোলা, কলিজা, কুমড়ো বিচি, ডাল, ডিমের কুসুম, পালংশাক, কচুশাক, আপেল, খেজুর, বাদাম, সয়াবিন ও সামুদ্রিক মাছ।

 

দেহে বিভিন্ন কারণে আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে তবে কিছু কিছু অসচেতনতা এর কারণ হিসেবে কাজ করে।

১. উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আয়রন গ্রহণ করলে  ভিটামিন সি জাতীয় কিছু খেতে হবে যেমন- লেবু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি। না হয় উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রন মানবদেহে শোষিত হবে না তার ফলে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

২. চা অথবা কফি আয়রনের শোষণকে বাধা দেয় তাই আয়রন জাতীয় খাবার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে চা অথবা কফি পান করা উচিত নয়। বিশেষ করে ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে চা বা কফি খাওয়া উচিত নয়।

৩. দীর্ঘদিন ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, কেননা ক্যালসিয়াম আয়রনের শোষণকে ব্যাহত করে। অতএব ক্যালসিয়াম ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।

আসুন নিজে জানি, অন্যকে জানাই আয়রনের ঘাটতি দূর করি। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

-মাহফুজা আফরোজ সাথী, প্রধান পুষ্টিবিদ

ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড, চট্টগ্রাম। সূএ:বাংলাদেশ প্র্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com