সেজদার স্থান নরম হলে নামাজ হবে কি?

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক  : ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম, আর সেজদা হলো এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সেজদা কবুল হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলো- কপাল ও নাক সঠিকভাবে জমিন স্পর্শ করবে এবং জমিনের কাঠিন্য অনুভব হবে।

 

হাদিসে সেজদার নিয়ম স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন- ‘আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সেজদা করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এটিকে (কপালের) অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না নিই।’ (সহিহ বুখারি: ৮১২)

সেজদা সঠিক হওয়ার জন্য কপাল ও নাকের স্থির স্পর্শ এবং মাটির কাঠিন্য অনুভব করা অপরিহার্য। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি সেজদা করবে, তখন কপালকে মাটির সঙ্গে মজবুতভাবে লাগাবে, যাতে করে মাটির কাঠিন্য অনুভব হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৬০৪)

নরম বিছানায় সেজদার বিধান

কম্বল, তোষক, গদি বা এ ধরনের নরম জিনিসের ওপর নামাজ পড়া নিষিদ্ধ নয়। তবে সেজদার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কপাল ও নাক স্থিরভাবে চেপে বসে এবং নিচের কাঠিন্য অনুভূত হয়। যদি সেজদার স্থান এতটাই নরম ও তুলতুলে হয় যে, চাপ দিলেও কপাল স্থির থাকে না বা নিচের শক্ততা অনুভব হয় না, তাহলে এমন স্থানে সেজদা করা বৈধ হবে না।

ফুকাহায়ে কেরামের মতে, ঘাস, তুলা, ফোমের গদি, কার্পেট বা বরফের ওপর সেজদা করার সময় যদি কপাল ও নাক স্থির হয়ে যায় এবং নিচের কাঠিন্য অনুভব হয়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি শক্ততা অনুভব না হয়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘সেজদার স্থান নরম হলে, যদি চাপ দিলে কপাল নিচের শক্ত জায়গায় পৌঁছে যায় এবং স্থির হয়ে যায়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে। নতুবা নয়।’ (রদ্দুল মুহতার: ১/৪৫৪, মাজমাউল আনহুর: ১/১৪৮)

করণীয়

সেজদা নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এতে কোনো ধরনের অবহেলা করা উচিত নয়। নরম গদি বা কার্পেটে নামাজ পড়লে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সেজদার সময় কপাল ও নাক স্থিরভাবে নিচের শক্ত জায়গা স্পর্শ করছে। যদি এমনটা সম্ভব না হয়, তাহলে সেজদার স্থানে কোনো শক্ত বস্তু, যেমন চাটাই, মাদুর বা কাঠের তক্তা রাখা যেতে পারে।

 

নামাজ কবুল হওয়া সরাসরি সেজদার বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত, ফিকহি নির্দেশনা অনুযায়ী নামাজের শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কিশোর গ্যাং চাঁন-মানিক গ্রুপের প্রধান চাঁন মিয়া গ্রেপ্তার

» মাত্র ২২ ঘণ্টায় ৩৭ লাখ টাকা সহযোগিতা পেয়েছেন এনসিপি নেত্রী জারা

» গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নই আমাদের প্রধানতম লক্ষ্য: নাহিদ ইসলাম

» বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে হবে: গোলাম পরওয়ার

» ঢাকা-১৩ আসনে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাওলানা মামুনুল হক

» আগামীকাল রাজধানীর যেসব এলাকায় ৫ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

» কেন ছেলেকে তারকা হতে দিতে চাননি শাহরুখ?

» ভূমিকম্পের আঁতুড়ঘরে নতুন বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, ভীষণ চাপে ভারত!

» ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সরকার কাজ করছে : অর্থ উপদেষ্টা

» টাওয়ার কর্মীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে পারিবারিক সচেতনতামুলক অনুষ্ঠান আয়োজন হুয়াওয়ের

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সেজদার স্থান নরম হলে নামাজ হবে কি?

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক  : ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম, আর সেজদা হলো এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সেজদা কবুল হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হলো- কপাল ও নাক সঠিকভাবে জমিন স্পর্শ করবে এবং জমিনের কাঠিন্য অনুভব হবে।

 

হাদিসে সেজদার নিয়ম স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন- ‘আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সেজদা করার জন্য নির্দেশিত হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এটিকে (কপালের) অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’হাত, দু’হাঁটু এবং দু’পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় গুটিয়ে না নিই।’ (সহিহ বুখারি: ৮১২)

সেজদা সঠিক হওয়ার জন্য কপাল ও নাকের স্থির স্পর্শ এবং মাটির কাঠিন্য অনুভব করা অপরিহার্য। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি সেজদা করবে, তখন কপালকে মাটির সঙ্গে মজবুতভাবে লাগাবে, যাতে করে মাটির কাঠিন্য অনুভব হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৬০৪)

নরম বিছানায় সেজদার বিধান

কম্বল, তোষক, গদি বা এ ধরনের নরম জিনিসের ওপর নামাজ পড়া নিষিদ্ধ নয়। তবে সেজদার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কপাল ও নাক স্থিরভাবে চেপে বসে এবং নিচের কাঠিন্য অনুভূত হয়। যদি সেজদার স্থান এতটাই নরম ও তুলতুলে হয় যে, চাপ দিলেও কপাল স্থির থাকে না বা নিচের শক্ততা অনুভব হয় না, তাহলে এমন স্থানে সেজদা করা বৈধ হবে না।

ফুকাহায়ে কেরামের মতে, ঘাস, তুলা, ফোমের গদি, কার্পেট বা বরফের ওপর সেজদা করার সময় যদি কপাল ও নাক স্থির হয়ে যায় এবং নিচের কাঠিন্য অনুভব হয়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি শক্ততা অনুভব না হয়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৭৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘সেজদার স্থান নরম হলে, যদি চাপ দিলে কপাল নিচের শক্ত জায়গায় পৌঁছে যায় এবং স্থির হয়ে যায়, তাহলে সেজদা শুদ্ধ হবে। নতুবা নয়।’ (রদ্দুল মুহতার: ১/৪৫৪, মাজমাউল আনহুর: ১/১৪৮)

করণীয়

সেজদা নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই এতে কোনো ধরনের অবহেলা করা উচিত নয়। নরম গদি বা কার্পেটে নামাজ পড়লে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সেজদার সময় কপাল ও নাক স্থিরভাবে নিচের শক্ত জায়গা স্পর্শ করছে। যদি এমনটা সম্ভব না হয়, তাহলে সেজদার স্থানে কোনো শক্ত বস্তু, যেমন চাটাই, মাদুর বা কাঠের তক্তা রাখা যেতে পারে।

 

নামাজ কবুল হওয়া সরাসরি সেজদার বিশুদ্ধতার ওপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত, ফিকহি নির্দেশনা অনুযায়ী নামাজের শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com