এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি :আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের খাদ্য শষ্যভান্ডার নামে খ্যাতবাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আমন ধানের বাম্পার ফলন সোনালি ধানের শীষে কৃষকদের স্বপ্ন যেন ঝলমল করছে ।সোনালী রোদ আর হিমেল হাওয়ায় ফসলের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ধানের শীষ। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ বর্ণ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১৬ থেকে ২০ মন ধান ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। বাজারদরও চড়া থাকায় প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে সাড়ে ১৪শ’ টাকায়।আমন ধান দেশের অনেক এলাকার প্রধান ফসল বলা যায়, যার ফলন কার্তিক-অগ্রহায়ণে পাওয়া যায়।অনুকূল আবহাওয়া, সময়মতো বৃষ্টিপাত এবং কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ পাওয়ায় এ বছর আমন আবাদ অত্যন্ত সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ও কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের শীষে কৃষকদের স্বপ্ন যেন ঝলমল করছে। এবারে ২৫ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। বাম্পার ফলনে কৃষকের ঘরে ঘরে বইছে উৎসবের আমেজ। সপ্তাহজুড়ে মাঠে মাঠে কর্তন শুরু হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-১১, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫২, ব্রি-৭৫, ব্রি-৭৬, বি আর-২৩, বি আর-১১ সহ একাধিক প্রজাতির আমন ধান।
হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের সানকি ভাঙ্গা কালিকাবাড়ি গ্রামের আবুল বাশার মোল্লা , সবুজমোল্লা, সিদ্দিক মোল্লা, সজলমোল্লাসহ একাধিক কৃষকরা মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তৃপ্তির হাসি দিয়ে ধান কাটা এ কৃষকরা জানান, গতবারের চেয়ে এবারে প্রতি বিঘায় ৩-৪মন ধান বেশী পাবেন। বাজারে দামও রয়েছে ভালো। উৎপাদিত ফসলে বিঘা প্রতি সার, ঔষধ, শ্রমিকসহ খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। সেই খানে বিঘা প্রতি ধান বিক্রি করতে পারছে ১৪ হাজার টাকায়। ফসলীমাঠে পোকা মাকড়ের আক্রমনও এবারে কম হয়েছে বলে কৃষকেরা জানান।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, অন্যসব বছরের চেয়ে এবারে আমনের ফসল খুবই ভালো হয়েছে। তবে বড় ধরনের কোন রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে কৃষক তাদের কাংঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারবে। কৃষি অফিস থেকে ইতোমধ্যে এসব চাষিদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ ও নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক পরামর্শের কারনেই ভালো ফসল ফলাতে সক্ষম হয়েছে কৃষকরা। বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরীব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। এক সময়ে লবণাক্ততার কারনে তার ইউনিয়নের ধান চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন ফসল হতো না। এখন ওয়াপধা ভেরিবাধের কারনে মিষ্টি পানিতে কৃষক নতুন নতুন ফসল ফলিয়ে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে। সরকারিভাবে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, বিনা সুদে লোন, এ ক্ষেত্রে চাষাবাদে কৃষকের আরো আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। এতে কিছুটা ঝুঁকি থাকলেও আগাম সবজি চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী দিনে কৃষকরা যেন আগাম সবজি চাষে আরো আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আশা করছি আগামীতে এই সবজি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এবারে এ উপজেলায় কৃষক ২৬ হাজার ৪১৪ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। এ অঞ্চলে উফশী জাতের ধান একটু আগে ভাগেই কর্তন শুরু হয়। তবে স্থানীয় জাতের আমন কাটা আর দুই সপ্তাহ পর শুরু হবে। বেশীরভাগ জমিতে ভালো ফলন হয়েছে তবে হোগলাবুনিয়া, নিশানবাড়ীয়া, খাউলিয়া, বলইবুনিয়া, রামচন্দ্রপুর, হোগলাপাশা, বনগ্রাম এই সাতটি ইউনিয়নে বেশী ভালো ফসলের আশা করা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমন না হলে কৃষক তাদের সম্পুর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন। প্রকৃতি সহায়ক হওয়ায় কৃষক তার আমন ফসল ঘরে নিতে পেরেছে। শুরু হয়েছে হেমন্তের নবান্ন উৎসব। এই উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। নবান্ন শব্দটির সঙ্গে নতুন ধান ওঠার সম্পর্ক রয়েছে। কিষান-কিষানিদের সব হাসি-কান্নার অবসান ঘটিয়ে অগ্রহায়ণের নতুন আমন ধান ঘরে উঠানোর কাজের মাঝে খুঁজে পায় অপার আনন্দ। গ্রাম বাংলায় নতুন এক আবহের সৃষ্টি হয়। নবান্ন উৎসব যেন সব দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। প্রাচীনকাল থেকেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নবান্নকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতি উৎসবে মেতে ওঠে। একে অন্যের মধ্যে তৈরি হয় সামাজিক সুসম্পর্ক, সম্প্রীতি আর ভালোবাসা। এ উৎসবকে ঘিরে সনাতনী সম্প্রদায়ের আছে নানা রকম লৌকিক পার্বণ বিধি। কার্তিক মাসের শুরুতেই কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানে পূর্ণ হতে থাকে। কৃষক-কৃষাণিরা ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো এবং এরপর সেই ধান ঢেঁকিতে ছেঁটে বহুবিধ পিঠা-পায়েস ইত্যাদি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠে।”ছবি সংযুক্ত আছে।







