সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা আগামীতে একটি সমঝোতার নির্বাচনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থানের অংশীজন রাজনৈতিক দলসমূহ সবাই মিলে একটি সমঝোতার নির্বাচন হবে। যেমন এই আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী থাকবে, অন্য দলের প্রর্থী থাকবে না। ওই আসনে অন্য দলের প্রার্থী থাকবে, গণঅধিকারের প্রার্থী থাকবে না।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তার নিজ নির্বাচনি এলাকা পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক জনসভায় নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা চাই সেই গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনরা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদককে পরাজিত করেছে। আগামীতে সেই গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনরা রাজনৈতিক দলসমূহ ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি নির্বাচন করুক, সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা ওই জাতীয় সংসদে দেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলবে। দেশকে কিভাবে বিনির্মাণ করা যায়, সেটি নিয়ে কথা বলবে। তাই আমরা সেই ঐতিহাসিক নির্বাচনে রাজনৈতিক দল নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি, বলেন নুর। আলাপ-আলোচনা করার কথাও বলেন নুর।
কিন্তু দেখা যায়, আঞ্চলিক পর্যায়ের কিছু নেতৃবৃন্দের অতি উৎসাহী ভূমিকার কারণে এই জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হতে যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি বিনষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে আরেকটি সংকট তৈরি করার পাঁয়তারা চলছে। আমরা সেই ফাদে পাঁ দেব না।
নুরুল হক নুর তার বক্তৃতায় আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এই নির্বাচনে যেন মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগামীর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এই দেশের ছাত্র, শ্রমিক, জনতা, নাগরিকরা জুলাই-আগস্টে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। বন্দুকের নলের মুখে জীবন দিয়েছে। সারা বাংলাদেশে দুই হাজার সাধারণ ছাত্র যুবক তরুণরা জীবন দিয়েছে। একটি স্বৈরাচার কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য। সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হয়েছি।
নুর আরও বলেন, ‘আমি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, শেখ হাসিনার মতো প্রভাবশালী একজন প্রধানমন্ত্রী যার আঙুলের ইশারায় পুরো বাংলাদেশ বসেছে আর উঠেছে। গত ১৬ বছরে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জেলে নিয়েছেন। জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন। সমগ্র বাংলাদেশকে তার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছেন। জুলাই আগস্টের দুই হাজার ছাত্র জনতার হত্যাকাণ্ডসহ গত ১৬ বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষকে রাজনৈতিকভাবে মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন, গুম করেছেন, খুন করেছেন এবং আইনের মাধ্যমে আদালত সেই প্রভাবশালী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও সেখানে নির্বাচন না করে এলাকার মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে আমি এখান থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসাই আমার শক্তি।
নিজের অবস্থান জানিয়ে নুর বলেন, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। পুলিশ-প্রশাসন ও সরকার- কাউকে তোয়াক্কা করি না। সত্যকে সত্য বলেছি, মানুষের পক্ষে লড়াই করেছি। ইনশাল্লাহ, আপনারা পাশে থাকলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
স্থানীয়দের উদ্দেশে করে নুর আরও বলেন, আমাদের চাঁদাবাজি বা ধান্দাবাজির কোনো ইচ্ছে নেই। এই মঞ্চে যারা আছেন- কেউ অতীতে কিংবা বর্তমানে এসবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, ভবিষ্যতেও থাকবেন না। আজ যারা চর দখল করছে, মানুষকে জিম্মি করে টাকা নিচ্ছে, তরমুজের মৌসুমে ট্রলি-ঘাট-ট্রলার থেকে চাঁদা আদায় করছে, জেলেদের মাছ ধরতে গেলেও চাঁদা চায়, আমরা মানুষকে এসব অন্যায় থেকে মুক্তি দিতে চাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে অনেকেই আমাকে নিয়ে কটু কথা বলছে; অথচ তারাই ঢাকায় গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে। এখানকার মানুষকে হুমকি দিচ্ছে, আবার সার্কিট হাউজে গিয়ে বলে- ‘ভাই, বুঝেনই তো, আছি একজনের সাথে’। এসব হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ হবে না। সৎসাহস নিয়ে এগোলে বিজয় আমাদেরই হবে।
জনসভায় দশমিনা উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক লিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম ফাহিম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মিজান হাওলাদার, পটুয়াখালী জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, সদস্য সচিব শাহ আলম সিকদার নেতৃবৃন্দ।







