খড়ের দামে কৃষক খুশি, বেশি দামে ক্রয় করায় খামারিরা চরম বিপাকে।

আসাদ হোসেন রিফাতঃ লালমনিরহাটে ধানের খড়ের দাম সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে কৃষকদের মুখে হাসি থাকলেও খামারিরা অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন। মৌসুম শেষে ধান ও খড় ঘরে তোলার পর অবশিষ্ট খড় সংরক্ষণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে কৃষকরা ভালো লাভ করছেন। কিন্তু বেশি দামে ক্রয় করায় খামারিরা চরম বিপাকে।
খামারিরা জানান, খড়ের এই উচ্চমূল্যের কারণে এখন গবাদিপশু পালন ও খাবার জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা আগাম জাতের ধান আবাদ করেছে তারা খড়ের আটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ১০০ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, আর ১ হাজার খড়ের আঁটির দাম দাঁড়িয়েছে ৭-৮ হাজার টাকায়। কিছুদিন আগে প্রতি আঁটির দাম ছিল মাত্র ৩-৪ টাকা। খামারিরা আশঙ্কা করছেন, কয়েক দিনের মধ্যে দাম ৯-১০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। শুধু খড় নয়, ভুসি, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য পশুখাদ্যের দামও বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ধানের খড় গরুর অন্যতম ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। সাধারণত খড় কেটে ভুসি ও চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়, যা তাদের সঠিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য অপরিহার্য। তাই খামারিরা সারাবছর খড় মজুত রাখার চেষ্টা করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খড়ের সংকট ও দাম বৃদ্ধির কারণে গরুর খাদ্য জোগান দিতে তারা বিপাকে পড়েছেন।
কালীগঞ্জের কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক মনছুর আলী জানান, তার গোয়ালে দুইটি বাছু ও তিনটি গরু রয়েছে। গবাদিপশুর জন্য খড় প্রতিদিনই প্রয়োজন। আগে প্রতি আঁটি খড় ২-৩ টাকায় পাওয়া যেত, এখন বাজারে ৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খড়ের এমন উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিক্রিও করতে পারছি না।
তিস্তা পাড়ের কৃষক আব্দুল ইসলাম বলেন, গত দুই-তিন মৌসুমে খড়ের সংকট বেড়েছে। আগে ধান মাড়াই হাতে হতো, তাই খড় অক্ষত থাকত। এখন আধুনিক যন্ত্রে ধান মাড়াই ও আকস্মিক বন্যার পানি খড় নষ্ট করছে, যা সংকট আরও বাড়াচ্ছে। এ অবস্থা চললে মাংস ও দুধ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর এলাকার আহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিন বিঘা জমি থেকে তিনি ৩ হাজার ৬০০ আঁটি খড় সংগ্রহ করেছেন এবং তা সংরক্ষণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, খড়ের আঁটিগুলো প্রতিটি ৭ টাকায় বিক্রি করেছি যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এগুলো বাজারে বিক্রি করে আরও মুনাফা করছে। ধানের পাশাপাশি খড়ের ভালো দাম পেয়ে সন্তুষ্ট।
তুষভান্ডারে খড় বিক্রেতা আব্দুল হামিদ জানান, মৌসুমে গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি আঁটি খড় ৪-৩৫ টাকায় কিনি। বাজারে দাম বেড়ে গেলে বিক্রি করে ভালো লাভ করি। বর্তমানে এই ব্যবসায় আমরা সন্তোষজনক আয় পাচ্ছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খড়ের দাম বেড়ে কৃষকরা লাভবান হলেও খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। উন্নতমানের ঘাস চাষ ও সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খামারিরা খরচ কমাতে এবং গবাদিপশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবেন। এতে তারা দীর্ঘমেয়াদে স্বাবলম্বী হয়ে দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জিয়া পরিবারের আদর্শ ধরে রাখতে জীবন দিতেও পিছু হটবো না: এস এম জাহাঙ্গীর

» সালাউদ্দিনের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন আমজনতার তারেক

» সংস্কার আটকে গেলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হবে: আখতার

» হাসপাতালে নেওয়া হলো তারেক রহমানকে

» আ.লীগ ও খুনী হাসিনার বিচার দেশের মানুষ করবে: মীর স্নিগ্ধ

» হেফাজত আমিরের দোয়া নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হুম্মাম কাদেরের

» সেনা আইন নয়, ট্রাইব্যুনালের আইনেই অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হবে: প্রসিকিউটর তামিম

» অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতি, আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে সরকার

» নিবন্ধন পেতে তারেকের দল আপিল করতে পারে: ইসি সচিব

» ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারি: উপদেষ্টা আসিফ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

খড়ের দামে কৃষক খুশি, বেশি দামে ক্রয় করায় খামারিরা চরম বিপাকে।

আসাদ হোসেন রিফাতঃ লালমনিরহাটে ধানের খড়ের দাম সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে কৃষকদের মুখে হাসি থাকলেও খামারিরা অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন। মৌসুম শেষে ধান ও খড় ঘরে তোলার পর অবশিষ্ট খড় সংরক্ষণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে কৃষকরা ভালো লাভ করছেন। কিন্তু বেশি দামে ক্রয় করায় খামারিরা চরম বিপাকে।
খামারিরা জানান, খড়ের এই উচ্চমূল্যের কারণে এখন গবাদিপশু পালন ও খাবার জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা আগাম জাতের ধান আবাদ করেছে তারা খড়ের আটি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ১০০ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, আর ১ হাজার খড়ের আঁটির দাম দাঁড়িয়েছে ৭-৮ হাজার টাকায়। কিছুদিন আগে প্রতি আঁটির দাম ছিল মাত্র ৩-৪ টাকা। খামারিরা আশঙ্কা করছেন, কয়েক দিনের মধ্যে দাম ৯-১০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। শুধু খড় নয়, ভুসি, চালের গুঁড়া ও অন্যান্য পশুখাদ্যের দামও বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাবার সংগ্রহ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ধানের খড় গরুর অন্যতম ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। সাধারণত খড় কেটে ভুসি ও চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়, যা তাদের সঠিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য অপরিহার্য। তাই খামারিরা সারাবছর খড় মজুত রাখার চেষ্টা করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খড়ের সংকট ও দাম বৃদ্ধির কারণে গরুর খাদ্য জোগান দিতে তারা বিপাকে পড়েছেন।
কালীগঞ্জের কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক মনছুর আলী জানান, তার গোয়ালে দুইটি বাছু ও তিনটি গরু রয়েছে। গবাদিপশুর জন্য খড় প্রতিদিনই প্রয়োজন। আগে প্রতি আঁটি খড় ২-৩ টাকায় পাওয়া যেত, এখন বাজারে ৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খড়ের এমন উচ্চমূল্যের কারণে গরু পালন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিক্রিও করতে পারছি না।
তিস্তা পাড়ের কৃষক আব্দুল ইসলাম বলেন, গত দুই-তিন মৌসুমে খড়ের সংকট বেড়েছে। আগে ধান মাড়াই হাতে হতো, তাই খড় অক্ষত থাকত। এখন আধুনিক যন্ত্রে ধান মাড়াই ও আকস্মিক বন্যার পানি খড় নষ্ট করছে, যা সংকট আরও বাড়াচ্ছে। এ অবস্থা চললে মাংস ও দুধ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর এলাকার আহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিন বিঘা জমি থেকে তিনি ৩ হাজার ৬০০ আঁটি খড় সংগ্রহ করেছেন এবং তা সংরক্ষণ করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, খড়ের আঁটিগুলো প্রতিটি ৭ টাকায় বিক্রি করেছি যা দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এগুলো বাজারে বিক্রি করে আরও মুনাফা করছে। ধানের পাশাপাশি খড়ের ভালো দাম পেয়ে সন্তুষ্ট।
তুষভান্ডারে খড় বিক্রেতা আব্দুল হামিদ জানান, মৌসুমে গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি আঁটি খড় ৪-৩৫ টাকায় কিনি। বাজারে দাম বেড়ে গেলে বিক্রি করে ভালো লাভ করি। বর্তমানে এই ব্যবসায় আমরা সন্তোষজনক আয় পাচ্ছি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খড়ের দাম বেড়ে কৃষকরা লাভবান হলেও খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। উন্নতমানের ঘাস চাষ ও সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খামারিরা খরচ কমাতে এবং গবাদিপশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবেন। এতে তারা দীর্ঘমেয়াদে স্বাবলম্বী হয়ে দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হবেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com