প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু, স্ত্রী গ্রেফতার

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার দাসের (৫৭) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়।

 

এ মামলায় মৃতের স্ত্রী শেলি সরকারকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার দিবাগত রাতে নিহত চন্দন কুমার দাসের বোন ফুলন রানী দাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে নিহতের স্ত্রী শেলি সরকারকে।

 

ফুলন রানী দাস মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, চন্দন কুমার দাস দীর্ঘদিন ধরে বারোমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তার স্ত্রী শেলি সরকার উশৃঙ্খল, বদমেজাজি ও লোভী প্রকৃতির নারী ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো এবং শেলি সরকার প্রায়ই স্বামীকে মারধর করতেন।

 

ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষী, বারোমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, স্যারের স্ত্রী শেলি সরকার ফোন করে জানান যে চন্দন স্যার অসুস্থ। ফোন পেয়ে আমরা দ্রুত তার বাড়িতে পৌঁছাই। তিনি কাউকে ঘরে ঢুকতে দেননি, শুধু বাড়িতে ডাক্তার ডাকতে বলেন এবং হাসপাতালে নিতে আপত্তি জানান।

 

পরে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হলে এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা আমাদের শিক্ষকদের জানাই। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় জোর করে ভেতরে ঢুকে স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন দেখি স্যারের গলা ও বাম হাতে কাটা চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

 

এর আগে গত ১০ অক্টোবর সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক চন্দন কুমার দাসকে স্থানীয় লোকজন ও সহকর্মীরা উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার হাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ গুরুতর ক্ষতচিহ্ন ছিল।

 

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেসড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

 

ঘটনাটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা রহস্যজনক এ মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

 

এদিকে, বুধবার বিকালে বারমারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। তারা দ্রুত তদন্ত শেষে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

 

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, স্কুল শিক্ষক চন্দন কুমার দাসের মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি নিহতের স্ত্রী শেলি সরকারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত: মঈন খান

» এনসিপির বিচক্ষণতার অভাব হয়েছে, তারা ভুল বুঝতে পারবে : ফখরুল

» ‘শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ’

» জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় যা আছে

» জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপি থাকলে ভালো লাগত : আসিফ নজরুল

» জুলাই সনদের দিকনির্দেশনা বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে : আলী রীয়াজ

» নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

» সনদে স্বাক্ষরের দিনও জুলাই যোদ্ধাদের রাস্তায় নামা লজ্জ্বাকর: জামায়াত আমির

» এনসিপি জুলাই সনদে এখন স্বাক্ষর না করলেও পরে স্বাক্ষর করবে, আশা ভিপি নুরের

» ছাত্র সংসদ নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না: ইশরাক

উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা,

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু, স্ত্রী গ্রেফতার

ফাইল ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বারমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার দাসের (৫৭) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়।

 

এ মামলায় মৃতের স্ত্রী শেলি সরকারকে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার দিবাগত রাতে নিহত চন্দন কুমার দাসের বোন ফুলন রানী দাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে নিহতের স্ত্রী শেলি সরকারকে।

 

ফুলন রানী দাস মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, চন্দন কুমার দাস দীর্ঘদিন ধরে বারোমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে তার স্ত্রী শেলি সরকার উশৃঙ্খল, বদমেজাজি ও লোভী প্রকৃতির নারী ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনো সন্তান নেই। প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হতো এবং শেলি সরকার প্রায়ই স্বামীকে মারধর করতেন।

 

ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষী, বারোমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল মাস্টার বলেন, স্যারের স্ত্রী শেলি সরকার ফোন করে জানান যে চন্দন স্যার অসুস্থ। ফোন পেয়ে আমরা দ্রুত তার বাড়িতে পৌঁছাই। তিনি কাউকে ঘরে ঢুকতে দেননি, শুধু বাড়িতে ডাক্তার ডাকতে বলেন এবং হাসপাতালে নিতে আপত্তি জানান।

 

পরে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হলে এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা আমাদের শিক্ষকদের জানাই। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় জোর করে ভেতরে ঢুকে স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন দেখি স্যারের গলা ও বাম হাতে কাটা চিহ্ন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

 

এর আগে গত ১০ অক্টোবর সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক চন্দন কুমার দাসকে স্থানীয় লোকজন ও সহকর্মীরা উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তার হাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ গুরুতর ক্ষতচিহ্ন ছিল।

 

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ কমিউনিটি বেসড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

 

ঘটনাটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সহকর্মী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা রহস্যজনক এ মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

 

এদিকে, বুধবার বিকালে বারমারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। তারা দ্রুত তদন্ত শেষে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

 

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, স্কুল শিক্ষক চন্দন কুমার দাসের মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার একমাত্র আসামি নিহতের স্ত্রী শেলি সরকারকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা,

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com