ছবি সংগৃহীত
ধর্ম ডেস্ক :ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে উপকার করার পর কষ্ট দেওয়া বা তার প্রতি উপকারের কথা মনে করিয়ে দেওয়া শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং কবিরা গুনাহ বা ভয়ংকর বড় পাপ হিসেবে বিবেচিত। এটি এমন এক চরিত্রদোষ, যা মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে এবং ইবাদতের সওয়াবকে ধ্বংস করে দেয়।
কোরআনে কঠোর সতর্কবার্তা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকাকে খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে বিনষ্ট করো না।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
এই আয়াত প্রমাণ করে, খোঁটা দেওয়া দান-সদকার মতো মহান আমলকেও শূন্য করে দিতে পারে। অর্থাৎ, সাহায্যটি যত মূল্যবানই হোক না কেন, যদি তা খোঁটার মাধ্যমে কলুষিত হয়, তবে তার কোনো প্রতিদান আল্লাহর কাছে থাকবে না।
খোঁটার মনস্তত্ত্ব ও অভ্যন্তরীণ কারণ
যারা উপকারের পর খোঁটা দেয়, তারা আসলে আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়, মানুষের প্রশংসা ও পার্থিব লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করে। তারা চায় সমাজে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত হোক। আল্লাহ তাআলা তাদের উপমা দিয়েছেন- ‘যেমন একটি মসৃণ পাথরের উপর সামান্য মাটি থাকে, কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়ে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
ঠিক তেমনি খোঁটাদাতার সব আমল বৃষ্টিতে ধোয়া মাটির মতো বিলীন হয়ে যায়।
ভয়াবহ পরিণাম
খোঁটার মাধ্যমে কেবল আমলই নষ্ট হয় না, বরং হেদায়াত লাভের পথও বন্ধ হয়ে যায়। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
মুমিনের বৈশিষ্ট্য
একজন সত্যিকারের মুমিন কখনও খোঁটা দেয় না। বরং সে জানে, আল্লাহর পথে ব্যয় করলে প্রতিদান কেবল আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া যাবে। ‘যারা দান করে এবং পরে খোঁটা দেয় না বা কষ্টও দেয় না, তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রতিদান পাবে। তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৬২)
কেয়ামতের ভয়াবহ পরিণতি
রাসুলুল্লাহ (স.) সতর্ক করে বলেছেন- ‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মাদকাসক্ত ব্যক্তি (যে মদ্যপ তাওবা ছাড়া মৃত্যুবরণ করে) এবং দানকৃত বস্তুর খোঁটা দানকারী ব্যক্তি (নাসায়ি: ২৫৬৪)
করণীয় ও প্রতিকার
১. নিয়ত শুদ্ধ করা: সব দান ও সহায়তা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা।
২. গোপনে দান করা: সম্ভব হলে গোপনে দান করে আত্মতৃপ্তি ও অহংকার থেকে দূরে থাকা।
৩. আখেরাতের প্রতিদানের প্রতি বিশ্বাস: দুনিয়ার প্রশংসা নয়, আখেরাতের পুরস্কারের আশা রাখা।
খোঁটা দেওয়া হলো আমলের ভেতরে ঢুকে থাকা এক নীরব ঘাতক, যা অজান্তেই আমাদের নেকিকে ধ্বংস করে দেয়। তাই মুমিনের কর্তব্য হলো, প্রতিটি সাহায্য ও দানকে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে সম্পন্ন করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খোঁটার মতো ভয়ংকর গুনাহ থেকে হেফাজত করুন এবং খাঁটি নিয়তে মানুষের উপকার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।