কিভাবে ‘স্মৃতিশক্তি’ বাড়াবেন?

মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে স্মৃতি বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। জমাকৃত তথ্য হারিয়ে গেলে কিংবা সময়মত খুঁজে পাওয়া না গেলে তা দূর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ।

 

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ আমরা সারাদিনে যা খাই তার মাত্র ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিস্কে প্রবেশ করে। মস্তিস্কের সঠিক সঞ্চালন নির্ভর করে গ্লুকোজের মাত্রার উপর। এই মাত্রার ঘাটতি হলেই দেখা দেয় নানান সমস্যা। তাই মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে নিয়মমাফিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে মেনে চলুন নিচের নিয়মগুলো-

 

মেডিটেশন:স্মরণশক্তি বাড়ানোর এক উপায় হল মেডিটেশন। এর ফলে আমাদের মনের চিন্তা ও চাপ অনেকটাই কমে যায়। মেডিটেশন করলে যেকোনও কাজেই মনোযোগ বাড়ে এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি এর সুফল পেতে পারেন।

 

রোজ ব্যায়াম করুন: ব্রেনের মধ্যে থাকা হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, ব্যায়াম দেহের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উদঘাটন করে এবং মগজে নতুন কোষের জন্ম হয়। ব্যায়াম করার ফলে এই হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত ও স্ফীত হয়ে উঠে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। আবার প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করলে মস্তিস্কে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয় যা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। স্মরণশক্তি বাড়াতে রোজ সকাল বা সন্ধ্যে ব্যায়াম করতে থাকুন।

 

পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে যদি ঘুম কম হয়, তবে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাধার সৃষ্টি করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। ঘুম না হলে মস্তিষ্ক প্রায় সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে।

 

ঠাণ্ডা ঘর: গরমের চেয়ে ঠাণ্ডায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিন গুণ বেশি থাকে। এ ছাড়া ঠাণ্ডা ঘর মাথাকেও ঠাণ্ডা রাখে। তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনো ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়।

 

গল্প শেষ থেকে শুরু করুন: একটি গল্প পড়া শেষে পুরো গল্পটা মনে রাখুন। এবার শুরু থেকে না করে শেষ বা পেছন থেকে গল্পটা মনে করতে থাকুন। এই পন্থা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল রাখার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালীও করবে।

 

হাঁটাহাঁটি: নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং শরীরকে ভালো রাখার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনকেও সুস্থ রাখে। সপ্তাহে দু-তিন দিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলে বা জগিং করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

 

প্রতিদিনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসুন:মস্তিষ্ক যেন নির্জীব হয়ে না যায়, সে জন্য ব্রেনকে সব সময় নতুন কিছু শিখতে দিতে হয়। তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে নতুন নতুন কাজ করার চেষ্টা করুন।

 

পায়ের আঙুলের ম্যাসাজ: প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙুলে ম্যাসাজ করুন। প্রথমে আঙুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নিচের দিকে যান। এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

 

মস্তিষ্কের খাবার: আখরোটের ‘পলিফেনলস’ ব্রেনের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, পালংশাক, ডার্ক চকলেট, গ্রিন-টি, অলিভ অয়েল, শাক-সবজি ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যরক্ষায় খুবই জরুরি।

 

প্রসঙ্গত, স্মৃতিশক্তি ক্ষয়ের বড় কারণ হল মানসিক স্ট্রেস। এটি যেমন সাময়িক স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে তেমনই অত্যাধিক স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও নষ্ট করে। স্ট্রেস দূরে রাখতে বই পড়ুন, গান শুনুন, গাছ লাগান, প্রকৃতির সঙ্গে থাকুন বা নিজের ভাল লাগার কিছু কাজ করুন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বা বেশি স্ট্রেস অনুভব করলে শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস গ্রহণ করুন। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি আর্ট ফেস্টিভ্যাল শুরু

» তীব্র গরমে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করলেন ইউএনও

» লালমনিরহাটে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু

» ইউএনওর ফোন নম্বর ক্লোন করে প্রার্থীদের সাথে প্রতারণার চেষ্টা

» দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করুন, আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

» প্রতিক্রিয়াশীল চক্র গণতন্ত্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে : পরশ

» আগামীকাল ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কিভাবে ‘স্মৃতিশক্তি’ বাড়াবেন?

মস্তিষ্কে তথ্য ধারণ করে রাখার প্রক্রিয়া কিংবা মস্তিষ্কে ধারণকৃত তথ্যকে স্মৃতি বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে তথ্য আহরণ করে মস্তিষ্কে জমা করা হয় এবং দরকার অনুযায়ী সেই তথ্য আবার ভান্ডার থেকে খুঁজে নিয়ে আসা হয়। জমাকৃত তথ্য হারিয়ে গেলে কিংবা সময়মত খুঁজে পাওয়া না গেলে তা দূর্বল স্মৃতিশক্তির লক্ষণ।

 

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সঠিক খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ আমরা সারাদিনে যা খাই তার মাত্র ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিস্কে প্রবেশ করে। মস্তিস্কের সঠিক সঞ্চালন নির্ভর করে গ্লুকোজের মাত্রার উপর। এই মাত্রার ঘাটতি হলেই দেখা দেয় নানান সমস্যা। তাই মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে নিয়মমাফিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে মেনে চলুন নিচের নিয়মগুলো-

 

মেডিটেশন:স্মরণশক্তি বাড়ানোর এক উপায় হল মেডিটেশন। এর ফলে আমাদের মনের চিন্তা ও চাপ অনেকটাই কমে যায়। মেডিটেশন করলে যেকোনও কাজেই মনোযোগ বাড়ে এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন নিয়মমাফিক সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। এক সপ্তাহের মধ্যে আপনি এর সুফল পেতে পারেন।

 

রোজ ব্যায়াম করুন: ব্রেনের মধ্যে থাকা হিপোক্যাম্পাস মস্তিষ্কের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, ব্যায়াম দেহের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি উদঘাটন করে এবং মগজে নতুন কোষের জন্ম হয়। ব্যায়াম করার ফলে এই হিপোক্যাম্পাস উত্তেজিত ও স্ফীত হয়ে উঠে এবং স্মৃতি ধরে রাখতে সহায়তা করে। আবার প্রতিনিয়ত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম করলে মস্তিস্কে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয় যা কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। স্মরণশক্তি বাড়াতে রোজ সকাল বা সন্ধ্যে ব্যায়াম করতে থাকুন।

 

পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে যদি ঘুম কম হয়, তবে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাধার সৃষ্টি করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। ঘুম না হলে মস্তিষ্ক প্রায় সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে।

 

ঠাণ্ডা ঘর: গরমের চেয়ে ঠাণ্ডায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিন গুণ বেশি থাকে। এ ছাড়া ঠাণ্ডা ঘর মাথাকেও ঠাণ্ডা রাখে। তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনো ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়।

 

গল্প শেষ থেকে শুরু করুন: একটি গল্প পড়া শেষে পুরো গল্পটা মনে রাখুন। এবার শুরু থেকে না করে শেষ বা পেছন থেকে গল্পটা মনে করতে থাকুন। এই পন্থা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল রাখার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালীও করবে।

 

হাঁটাহাঁটি: নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং শরীরকে ভালো রাখার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনকেও সুস্থ রাখে। সপ্তাহে দু-তিন দিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলে বা জগিং করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

 

প্রতিদিনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসুন:মস্তিষ্ক যেন নির্জীব হয়ে না যায়, সে জন্য ব্রেনকে সব সময় নতুন কিছু শিখতে দিতে হয়। তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে নতুন নতুন কাজ করার চেষ্টা করুন।

 

পায়ের আঙুলের ম্যাসাজ: প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙুলে ম্যাসাজ করুন। প্রথমে আঙুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নিচের দিকে যান। এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

 

মস্তিষ্কের খাবার: আখরোটের ‘পলিফেনলস’ ব্রেনের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়াও সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, পালংশাক, ডার্ক চকলেট, গ্রিন-টি, অলিভ অয়েল, শাক-সবজি ইত্যাদি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যরক্ষায় খুবই জরুরি।

 

প্রসঙ্গত, স্মৃতিশক্তি ক্ষয়ের বড় কারণ হল মানসিক স্ট্রেস। এটি যেমন সাময়িক স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে তেমনই অত্যাধিক স্ট্রেস দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও নষ্ট করে। স্ট্রেস দূরে রাখতে বই পড়ুন, গান শুনুন, গাছ লাগান, প্রকৃতির সঙ্গে থাকুন বা নিজের ভাল লাগার কিছু কাজ করুন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বা বেশি স্ট্রেস অনুভব করলে শান্ত হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস গ্রহণ করুন। এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com