ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, নামজারি আবেদন সিস্টেম অনলাইনে নিয়মিত ‘ট্র্যাকিং’ (পর্যবেক্ষণ) করা হচ্ছে। কোনো আবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হচ্ছে। নিয়মিত ‘মনিটরিং’-এর কারণে নামজারি সংক্রান্ত জটিলতা এখন বহুলাংশে কমে এসেছে।
আজ শনিবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স’ ও ‘সমুন্নয়’র উদ্যোগে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘ভূমি বিষয়ক আইন ও নীতি: চরাঞ্চলের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই কথা বলেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন জরিপ সুষ্ঠু ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হলে ভূমি বিষয়ক মামলা মোকদ্দমা বহুলাংশে কমে যাবে। এইজন্য সরকার ডিজিটাল জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় এনে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১’-এর খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত করে মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভূমি দস্যুতা রোধে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে ভূমিমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম. এ মতিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ‘ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স’ ও ‘সমুন্নয়’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ব্যাপারটি খুব গুরুত্বসহকারে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় সংযুক্ত করেছেন। তাঁর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১ একর এবং উপকূলীয় চর অঞ্চলে অনূর্ধ্ব ১.৫ একর পর্যন্ত কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার বিধান চালু। এছাড়া, ‘চর ডেভেলপমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় এই পর্যন্ত ৩৪ হাজার ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ৪৪ হাজার একর খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় চরাঞ্চলের আরও হাজারো পরিবারের মাঝে খাসজমি বরাদ্দের কার্যক্রম চলমান।
তিনি বলেন সরকারের বিভিন্ন ভূমিহীন ও গৃহহীন কর্মসূচির আওতায় চরের জায়গা বরাদ্দ গ্রহণে ১ টাকা নামমাত্র সালামীর ফি ধরা হয়েছে। এ সম্পর্কিত নামজারি ফিও সরকারিভাবে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের দপ্তরগুলোর বিস্তৃতি সমগ্র দেশব্যাপী। কিছু দপ্তরে আকস্মিক পরিদর্শনে হয়ত কিছু সময়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পরিস্থিতির উন্নয়ন হ্য়; তবে সার্বিকভাবে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না। এজন্য আমরা টেকসই সিস্টেম উন্নয়নে জোর দিয়েছি। সিস্টেম উন্নয়ন হয়ে গেলে সিস্টেমের কারণেই দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন চরাঞ্চলে একজনের চাষকৃত ফসল অন্যজন বলপূর্বক হরণ করার ঘটনা ঘটছে, যা অমানবিক ও অন্যায়। এ অন্যায়ের প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই সময় ভূমিমন্ত্রী ডিজিটাল সেবা প্রবর্তন এবং আইন ও বিধি-বিধান সংশোধন করে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা স্থাপনের কথা আবারো পুনর্ব্যাক্ত করেন। তিনি বলেন টেকসই ভূমি ব্যবস্থায় সঠিক দলিলপত্রাদি যেমন প্রকৃত নিবন্ধন দলিল, খতিয়ান, বণ্টননামা, নকশা ইত্যাদি যা প্রযোজ্য তা ছাড়া কেউ কোনো জমি দখল করে রাখতে পারবেনা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চরের কার্যকর উন্নয়ন নীতি ও কৌশল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ সেখানে শস্য ও শাকসবজি উৎপাদন এবং গবাদি পশু পালনে সফলতা দেখিয়েছে। চরাঞ্চলে কুমড়া চাষ বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে বলে তিনি জানান। চরাঞ্চলের জীবনমান আরও উন্নয়নের জন্য তিনি তাঁর প্রস্তাবনা এ সময় তুলে ধরেন এসময়।
ডঃ আতিউর রহমান তাঁর সচিত্র উপস্থাপনায় বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনে ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে। এর ধারাবাহিকতার সুফল চরের মানুষের কাছেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। আতিউর রহমান আরও বলেন, প্রশাসনের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ করে এবং সকল অংশীজনের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে পরিকল্পনা ও নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে।
সংলাপের আয়োজকদের গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের ৮ হাজার ৩১৫ বর্গকিলোমিটার চর ভূমিতে বসবাস করছে প্রায় ৬৭ লক্ষ মানুষ। সংস্থাটির গবেষণায় আরও উঠে আসে, সরকারের উদ্যোগ ও নীতির কারণে এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে বিগত ১০-১২ বছরে চরের জীবনমানের উন্নয়ন বিকাশে আলাদা গতি পেয়েছে।
সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন সহিষ্ণুতা বাড়ানোর পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উপস্থিত আলোচকবৃন্দ চরাঞ্চলের বিপন্ন মানুষকে রক্ষার্থে আলাদা তহবিল (ফাউন্ডেশন) গঠন, চরে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বিকাশ, চরের কৃষির টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারে মতপ্রকাশ করেন ।
সংলাপে অন্যান্যদের মধ্যে আরও অংশগ্রহণ করেন ভূমি এবং চর ও চরাঞ্চলের মানুষ নিয়ে কাজ করে যাওয়া বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার নেতৃবৃন্দ, চরাঞ্চলের বসবাসরত জনমানুষের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অংশীজন।