সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একই সঙ্গে সারাদেশের বিদ্যালয়গুলোতে চলছে কর্মবিরতি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক ঢাকায় এসে অবস্থান নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকরা পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। রোদ থেকে বাঁচতে কেউ গাছের ছায়ায় মাদুর পেতে শুয়ে-বসে আছেন। শহীদ মিনারের বেদিতে শিক্ষক নেতারা বক্তব্য রাখছেন, আর মাইকে বাজছে দেশাত্মবোধক গান ও দাবি আদায়ের স্লোগান।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠন একত্রে এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পরিষদের অন্যতম নেতা মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ফিরবেন না। দশম গ্রেড আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন। প্রাথমিক শিক্ষকরা এ মর্যাদার হকদার।’
আজ (সোমবার) বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে গণশিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন, পাশাপাশি শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। সেখানে দাবি-দাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আমরা কেন দশম গ্রেড চাই, সেই যুক্তি তুলে ধরব। যদি দাবি মেনে নেয়, তাহলে ক্লাসে ফিরব, না হলে আন্দোলন চলবে।’
রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিলেও পরে মধ্যরাতে শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবারও সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে। এতে ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা এলেও ক্লাস হয়নি। ফলে দুপুরের আগেই অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা মু. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি দুইটাই চলবে।’
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন তারা দশম গ্রেড চাইছেন, যা সরকারের পক্ষে কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই সরাসরি আলোচনা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্মবিরতি স্থগিত রাখবেন। এখন কথা দিয়ে কথা না রাখলে সেটা দুঃখজনক। আমরা আলোচনার পথ খোলা রেখেছি।’
বার্ষিক ও বৃত্তি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে রয়েছেন ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক, যাদের অধিকাংশই সহকারী শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৯৬ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শিক্ষকরা কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকতেই শিক্ষকদের এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
এ ছাড়া দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ছে।







