ইঞ্জিনিয়ার হয়েও বিক্রি করছেন বিরিয়ানি

ওড়িশার মালকানগিরিতে সন্ধ্যায় কালেক্টরেট অফিসের সামনে দিয়ে যেতে একটি খাবারের কার্ট দেখতে পাবেন যে কেউ।

 

বিরিয়ানির সুগন্ধ আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে কার্টের কাছে। সেখানে পরিবেশন করা হচ্ছে সুস্বাদু বিরিয়ানি ও চিকেন টিক্কা। এক তরুণ ক্রেতাদের খাবার পরিবশনে ব্যস্ত, অন্যজন ব্যস্ত তৈরিতে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে দুই তরুণকে দেখা যাচ্ছে এখানে তারা কেউই শেফ নন। তাদের পেশাও নয় এটি। দুজনেই বড় এক কর্পোরেট অফিসের ইঞ্জিনিয়ার। ১০টা-৫টা অফিস শেষ করেই বেড়িয়ে পড়েন কার্টটি নিয়ে। শহরের কালেক্টরেট অফিসের সামনে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের বিরিয়ানি বিক্রি। এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে দুইজন।

 

২০২১ সালের মার্চে শুরু করেন কার্টটির ব্যবসা। মাসে এখান থেকে তাদের যায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সুমিত সামল এবং প্রিয়ম বেবার্তা, দুজনেই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। যখন কোভিড-১৯ মহামারিতে হোম অফিস করতে হয়েছিল। সেই সময়ই ঘরবন্দি সময়টা কাজে লাগিয়েছেন তারা।

 

এক সন্ধ্যায় বাড়ির কাছের রাস্তায় বিরিয়ানি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালো সাড়া পান। কেউই প্রফেশনালি রান্না জানেন না। মায়ের কাছ থেকেই নিয়েছিলেন রেসিপি। এরপর বাড়িতে রান্না করে বেড়িয়ে পড়েন। এখনো অফিস শেষ করে এসে বিরিয়ানি বিক্রি করছেন দুই বন্ধু। মাসে কিছু বাড়তি আয়ও হচ্ছে তাদের।

তবে এর ধারণা আসে হঠাৎ করেই। অন্যদের মতো তারাও রাস্তার পাশের খাবার খেতে পছন্দ করেন। তবে একদিন বিরিয়ানি খেতে গিয়ে দেখতে পান রেস্তোরাঁর পরিবেশ খুবই নোংরা। এমনকি হোটেলের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটি ড্রেন। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

 

এমন অবস্থায় ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের কতটা ঝুঁকি রয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। দোকানদারকে এই কথা জানালে তারা ব্যাপারটি আমলেই নেননি। বরং তাদেরকে নানা কথা শুনিয়ে দেয়। সেখান থেকেই ইচ্ছা হয় নিজেদের একটি খাবারের দোকান দেওয়ার। যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপার থাকবে শতভাগ। খাবারের গুণগত মানও বজায় থাকবে।

 

এরপরই সুমিত ও প্রিয়ম তাদের বিরিয়ানির কার্টটি লঞ্চ করে। নাম দেন ইঞ্জিনিয়ার্স কা থালি। সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখেই বিরিয়ানির দাম রেখেছেন দোকানের চেয়ে অনেক কম। এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম ১২০ টাকা, আর হাফ প্লেটের দাম ৭০ টাকা। সুস্বাদু খাবার যেমন হবে তেমনি বজায় থাকবে পরিচ্ছন্নতা।

 

প্রতিদিন তাদের আয় হয় ৮ হাজার টাকার মতো। আর মাসে ৪৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সুমিত, প্রিয়মের বিরিয়ানি কার্টটি বেশ জনপ্রিয় স্থানীয়দের মধ্যে। এই দুই তরুণ অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন উদ্যোক্তা হতে। যে যে কোনো কাজই করে সফল হতে পারেন, সেই বার্তাই দিচ্ছেন তারা।  সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চার দিনের রিমান্ডে মমতাজ

» চিকিৎসার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর সরকার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» ‘দলগুলোর ভিন্নমত থাকলেও সবার লক্ষ্য এক’

» প্রথম সরকারি সফরে সৌদিতে ট্রাম্প, স্বাগত জানালেন সালমান

» রমনা বটমূলে বোমা হামলা: দুজনের যাবজ্জীবন, ৯ জনের ১০ বছর কারাদণ্ড

» আমরা ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি: রিজভী

» আমরা ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার: মেজর হাফিজ

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আরও ১০০৪ জন আসামি গ্রেফতার

» ধার করে, টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করবো না: অর্থ উপদেষ্টা

» মাছের গাড়ি উল্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ইঞ্জিনিয়ার হয়েও বিক্রি করছেন বিরিয়ানি

ওড়িশার মালকানগিরিতে সন্ধ্যায় কালেক্টরেট অফিসের সামনে দিয়ে যেতে একটি খাবারের কার্ট দেখতে পাবেন যে কেউ।

 

বিরিয়ানির সুগন্ধ আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে কার্টের কাছে। সেখানে পরিবেশন করা হচ্ছে সুস্বাদু বিরিয়ানি ও চিকেন টিক্কা। এক তরুণ ক্রেতাদের খাবার পরিবশনে ব্যস্ত, অন্যজন ব্যস্ত তৈরিতে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে দুই তরুণকে দেখা যাচ্ছে এখানে তারা কেউই শেফ নন। তাদের পেশাও নয় এটি। দুজনেই বড় এক কর্পোরেট অফিসের ইঞ্জিনিয়ার। ১০টা-৫টা অফিস শেষ করেই বেড়িয়ে পড়েন কার্টটি নিয়ে। শহরের কালেক্টরেট অফিসের সামনে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের বিরিয়ানি বিক্রি। এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে দুইজন।

 

২০২১ সালের মার্চে শুরু করেন কার্টটির ব্যবসা। মাসে এখান থেকে তাদের যায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সুমিত সামল এবং প্রিয়ম বেবার্তা, দুজনেই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। যখন কোভিড-১৯ মহামারিতে হোম অফিস করতে হয়েছিল। সেই সময়ই ঘরবন্দি সময়টা কাজে লাগিয়েছেন তারা।

 

এক সন্ধ্যায় বাড়ির কাছের রাস্তায় বিরিয়ানি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিন থেকেই বেশ ভালো সাড়া পান। কেউই প্রফেশনালি রান্না জানেন না। মায়ের কাছ থেকেই নিয়েছিলেন রেসিপি। এরপর বাড়িতে রান্না করে বেড়িয়ে পড়েন। এখনো অফিস শেষ করে এসে বিরিয়ানি বিক্রি করছেন দুই বন্ধু। মাসে কিছু বাড়তি আয়ও হচ্ছে তাদের।

তবে এর ধারণা আসে হঠাৎ করেই। অন্যদের মতো তারাও রাস্তার পাশের খাবার খেতে পছন্দ করেন। তবে একদিন বিরিয়ানি খেতে গিয়ে দেখতে পান রেস্তোরাঁর পরিবেশ খুবই নোংরা। এমনকি হোটেলের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটি ড্রেন। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

 

এমন অবস্থায় ক্রেতাদের স্বাস্থ্যের কতটা ঝুঁকি রয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে। দোকানদারকে এই কথা জানালে তারা ব্যাপারটি আমলেই নেননি। বরং তাদেরকে নানা কথা শুনিয়ে দেয়। সেখান থেকেই ইচ্ছা হয় নিজেদের একটি খাবারের দোকান দেওয়ার। যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপার থাকবে শতভাগ। খাবারের গুণগত মানও বজায় থাকবে।

 

এরপরই সুমিত ও প্রিয়ম তাদের বিরিয়ানির কার্টটি লঞ্চ করে। নাম দেন ইঞ্জিনিয়ার্স কা থালি। সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখেই বিরিয়ানির দাম রেখেছেন দোকানের চেয়ে অনেক কম। এক প্লেট চিকেন বিরিয়ানির দাম ১২০ টাকা, আর হাফ প্লেটের দাম ৭০ টাকা। সুস্বাদু খাবার যেমন হবে তেমনি বজায় থাকবে পরিচ্ছন্নতা।

 

প্রতিদিন তাদের আয় হয় ৮ হাজার টাকার মতো। আর মাসে ৪৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সুমিত, প্রিয়মের বিরিয়ানি কার্টটি বেশ জনপ্রিয় স্থানীয়দের মধ্যে। এই দুই তরুণ অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন উদ্যোক্তা হতে। যে যে কোনো কাজই করে সফল হতে পারেন, সেই বার্তাই দিচ্ছেন তারা।  সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com