এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আমন ধান ক্ষেতে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমন ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে প্রতি রাতে ইঁদুরও ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের কিটনাশন স্প্রে এবং ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নেও ১টি পৌরসভায় গত বছরের মত এবারও মোট ৯৯ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপসি ৯৭হাজার ৮৮৫ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৯৯০ হেক্টর ও হাইব্রিড ৩৮৫ হেক্টর। বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব এলাকায় ব্যাপক ভাবে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ইঁদুরের উৎপাতও ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনের বেলায় ইঁদুরগুলো গাছে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে থাকে। আর রাতে ইঁদুরে ধান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। ফলে ধান গাছ শুকিয়ে লাল হয়ে মারা যাচ্ছে। অতি বৃষ্টির কারনে ধান ক্ষেতে পোকার উপদ্রব বেড়েছে বলে কৃষকরা মনে করেন। পোকার আক্রমন থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় কৃষকরা বারবার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ¯েপ্র করছেন। আবার ইঁদুর দমনে বিষ বা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেও ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। ফলে আমন চাষে লোকসানের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছেন। আর আমন উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও অর্জিত না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
উপজেলার আবুবকর বলেন, এবছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। কিন্তু প্রায় ২ বিঘার মত জমির ধান গাছ ইঁদুরে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। ধান গাছে ফলন আসার মুহুর্তে মজরা ও লেদা পোকার আক্রমন ও ইঁদুরের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ¯েপ্র করে পোকা থেকে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন মাজরা পোকার থেকেও বেশি ক্ষতি করছে ইঁদুরে। ইঁদুর দমনে বিভিন্ন ধরনের বিষ ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে লোকসানের আশংকায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মোরেলগঞ্জে উমাজুরি গ্রামের সফল চাষী শাহজালাল বাবু জানান, অতিবৃষ্টির কারনে আমন ফসলে মাজরা, লেদা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমন বেড়েছে। কোন জায়গায় আবার কারেন্ট পোকাও। বিগত বছর গুলোতে এক বার কিটনাশক স্প্রে করলেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হতো। আর এবছর তিন থেকে চারবার কিটনাশক স্প্রে করেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে ফসল ঘরে উঠবে। এবছর এমনিতেই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে ব্যাপক খরচ হয়েছে তারপর আবার পোকার আক্রমন ও ইঁদুরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ।মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, আমন ধানের মাজরা পোকার আক্রমণে গাছের ডগা মারা যায় (মরা ডিগ বা ডেডহার্ট), আর লেদা পোকার আক্রমণে গাছের পাতা ছিদ্র বা কুঁড়ে ফেলে।
এই দুই ধরনের পোকা দমনে রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন।আক্রান্ত ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে দিন এবং ক্ষেতের চারদিকে কেরোসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে নালা তৈরি করে পোকা আটকানোর ব্যবস্থা করুন,কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরিব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান, মাজরা, লেদা ও কারেন্ট পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমনও বেড়েছে। এ ছাড়া ইঁদুরও কিছু ধান গাছ কেটে নষ্ট করে ফেলেছে। তবে সার, ঔষুধের ডিলারদের বলা হয়েছে তারা যেন পর্যাপ্ত পরিমানে কিটনাশক রাখে এবং কৃষকদের পোকা দমনের সঠিক কিটনাশকগুলো দেয়। তা ছাড়া কৃষকদের নিয়ে গঠিত গ্রুফেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আর আগামী সপ্তাহ থেকে পোকা ও ইঁদুর দমনে প্রত্যেক বাজারে প্রচারনা মূলক অনুষ্ঠিত সভা কৃষকদের পরামর্শ ও ভিডিও চিত্র দেখানো হবে। এ ছাড়াও কৃষকদের জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও ভ্রাম্যমান কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র চালু করেছি। কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।