দেশে দেশে অস্থিরতা

একদিকে অর্থনৈতিক সংকট অন্যদিকে ক্ষমতার লড়াই। এই দুইয়ে একের পর এক দেশে অস্থিরতা বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে তা পারদ স্তম্ভের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। একদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারাবিশ্বের অর্থনীতি। দেশে দেশে বহু মানুষ হয়েছেন কর্মহীন। দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। পণ্য মূল্য বেড়েছে। এর সঙ্গে ক্ষমতার লড়াই যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সৃষ্টি হয়েছে এক অনিশ্চিত অবস্থা। নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইসরাইল ও কুয়েতে। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা, যুদ্ধও গ্রাস করেছে অনেক দেশকে। এর মধ্যে আছে ইউক্রেন, মিয়ানমার, ইয়েমেন ও আফগানিস্তান। এসব দেশে সরকারে তোলপাড় চলছে। পাকিস্তানে ক্ষমতা নিয়ে নেতাদের মধ্যে চরম নাটকীয়তা। পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবে অসম্মানের মধ্যদিয়ে বিদায়কে অন্যভাবে ‘টুইস্ট’ করেছেন ইমরান খান। দেশটির বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্রিকেটের লোক হলেও রাজনীতিতেও ‘গুগলি’ বা ইনসুইং চাল দিতে দক্ষ। তার এমন সিদ্ধান্তে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন হওয়ার কথা ৯০ দিন বা ৩ মাসের মধ্যে। ইমরানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) কাছে এবং বিদায়ী পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের নাম চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন  প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ওদিকে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাবকে যে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে রুলিং দেয়ার কথা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সেনাবাহিনীর নাম। কে যে কোনদিকে কাজ করছেন- কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কুয়েতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধীদের উত্তেজনা তুঙ্গে। গতকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালেদ আল সাবাহকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় বিরোধী দলগুলো। এ অবস্থায় ইমরান খানের মতো নিজের মান সম্মানকে রক্ষার জন্য নিজেই পদত্যাগ করেন তিনি। একে সরকারের পদত্যাগ হিসেবে সংবাদ শিরোনাম করেছে স্থানীয় পত্রিকাগুলো। বিরোধী দলগুলো তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ক্রাউন প্রিন্স শেখ মিশাল আল-আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ’র কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। ক্রাউন প্রিন্স তা গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য পেনিনসুলা। এতে বলা হয়, শেখ সাবাহ আল খালেদ আল সাবাহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার তার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল। তারা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করছিলেন। এর আগেও তারা একইভাবে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করেছেন।

শ্রীলঙ্কায় মুমূর্ষু অবস্থায় টিকে আছে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সরকার। অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে ভয়াবহভাবে আঁকড়ে ধরেছে। এতে মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ও পুরো সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস, খাদ্য ও অন্য মৌলিক পণ্যের রয়েছে ভয়াবহ সংকট। ফলে মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। যে চীন তাদের অর্থনৈতিক উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিল, তারাও দৃশ্যত পিছপা হচ্ছে। এই সুযোগে সেখানে পা বাড়িয়েছে ভারত। বলা হয়, হাম্মানতোতা বন্দর সহ শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চলে গেছে চীনের হাতে। নিজেদের অর্থনীতি বলতে দেশটিতে কিছুই নেই। এমন অবস্থায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সেখানেও হানা দিয়েছে করোনা মহামারি। ফলে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে জনরোষ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মন্ত্রিপরিষদের প্রায় সবাই পদত্যাগ করেছেন। বিপুল পরিমাণ এমপি সরকারকে ছেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার জাতীয় সরকার গঠনের ডাক দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তাহলে কি গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকছে না? এর উত্তর দিয়েছেন বুধবার সরকারের চিফ হুইফ জনস্টোন ফার্নান্দো। তিনি বলেছেন, দায়িত্বশীল একটি সরকার হিসেবে আমার প্রেসিডেন্ট  গোটাবাইয়া রাজাপাকসে যেকোনো পরিস্থিতিতেই পদত্যাগ করবেন না। এর আগে মঙ্গলবার রাতে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে দাঁড়ান কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা। ফলে পার্লামেন্টে আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রাজাপাকসের। এরমধ্যে নতুন ধাক্কা হিসেবে পদত্যাগ করেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি। তিনি মাত্র একদিন অফিস করেছেন। সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পূর্বে তিনি পদত্যাগ করলেন। দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, গত সোমবারই তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন রাজাপাকসে এবং বিরোধীদের সঙ্গে মিলে একটি ইউনিটি গভর্নমেন্ট তৈরির চেষ্টা করেন। দেশটির ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটিতে দেখা গেছে চরম খাদ্য ও তেল সংকট। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। দেখা দিয়েছে ওষুধের সংকটও। চিকিৎসকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিগগিরই ভেঙে পড়বে। এমন অবস্থায় গত শুক্রবার দেশটিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তির মধ্যদিয়ে এই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার কথা জানান রাজাপাকসে। এতে তিনি বলেন, আমি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ৫ই এপ্রিল মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা বাতিল ঘোষণা করছি। রাজনৈতিকভাবে রাজাপাকসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তিনি তার ভাই মাহিন্দ রাজাপাকসেকে সরিয়ে শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। কিংবা ২০২৫ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তা এগিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।

ওদিকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফটালি বেনেটের সরকার। বুধবার সরকার থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জোটের হুইপ ইদিত সিলমান। এর ফলে পার্লামেন্ট নেসেটে এখন সরকার ও বিরোধীদের রয়েছে ৬০-৬০টি করে আসন। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, যদি আর একজনও সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে তাহলে বিশেষ আইন প্রয়োগ করে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবে বিরোধীরা। তাহলে এটিই হবে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার শেষ। যদি তা-ই হয়, তাহলে আবার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তিনি ক্ষমতায় এলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এমনিতেই শোনা যাচ্ছে নাফটালি বেনেট যে জোট গড়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তাতেও ফাটল ধরেছে। ফলে ইসরাইলের রাজনীতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। ইস্তফার পর সিলমান জানান, মূলত স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিতজান হরোউইতজের সঙ্গে বাদানুবাদের জেরেই তিনি সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বলেন, আমি এই জোটের জন্য অনেক করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমি আর তাদের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারছি না। তার এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিরোধী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরাইলের বহু মানুষ এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল। যদিও লেবার দলের আইনপ্রণেতা গিলাদ কারিভের দাবি, বাদানুবাদের কারণে ইস্তফা দেয়া মোটেও আসল কারণ নয়। সিলমান জোট ছেড়েছে কারণ তাকে বিরোধী লিক্যুদ পার্টির ১০তম পদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনি লিক্যুদ পার্টির হয়ে লড়বেন এবং জিতলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ পাবেন।

ইসরাইলি গণমাধ্যম মারিভ জানিয়েছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা সিলমানের এই সিদ্ধান্তের কথা আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই জানতেন। এটি তাদের কাছে তাই কোনো সারপ্রাইজ ছিল না।

ওদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ কাঁদিয়ে যাচ্ছে মানবতাকে। যে যুক্তিতেই হোক রাশিয়া একতরফাভাবে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনে। সেখানে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করছে। সর্বশেষ বুচা শহরে দেখা গেছে গণহত্যার জ্বলন্ত প্রমাণ। রাস্তায় রাস্তায় লাশ। বিগলিত লাশ। হাত-পা বাঁধা লাশ। গণকবরে লাশ। রাস্তার ওপর সারি সারি লাশ। সে দৃশ্য দেখে মানবাত্মা কেঁদে ওঠে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে সুরম্য অট্টালিকা। দেখে বোঝার উপায় নেই, মাত্র এক বা দেড় মাস আগে সেখানে মানুষের বসতি ছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উন্মত্তের মতো সেখানে হামলা চালিয়েছেন। সারাবিশ্ব একদিকে। আর তিনি একদিকে। হিটলারের সঙ্গেও এরই মধ্যে তাকে তুলনা করা হয়েছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছুতেই নিবৃত হচ্ছেন না পুতিন। এই যুদ্ধের ফলে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছেন। রাশিয়ার তেল, জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বাড়ছে সব কিছুর দাম।

মিয়ানমারেও সামরিক জান্তা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে নিজেরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র সেখানে নির্বাসনে গেছে। সারাবিশ্ব থেকে তাদের ওপর চাপ দেয়া সত্ত্বেও একচুল নড়ছে না সামরিক জান্তা। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে কমপক্ষে ১৩০০ মানুষ। তারা শুধু যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে এমন নয়। একই সঙ্গে দেশটির প্রতিবাদী জনতা, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চালিয়েছে নিষ্ঠুরতা। ইয়েমেনের যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশান্তরী হয়েছেন কত মানুষ তার হিসাব নেই। সেখানে দুর্ভিক্ষ মানুষকে জেঁকে ধরেছে। তারপরও যুদ্ধ চলছে। এই যুুদ্ধের ফলে অগণিত মানুষ হারিয়েছে সব। নিঃস্ব মানুষের প্রতিবাদের জায়গাটুকুও নেই। আছে বাতাসে বারুদের গন্ধ। এর শেষ কোথায় তা কেউ জানে না।

সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাষ্ট্রপতি পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন: রিজভী

» ২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা প্রকাশ

» হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে বঙ্গভবনের ব্যাখ্যা

» জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ছিলাম : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান

» জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস, প্রধান নির্বাহী স্নিগ্ধ

» সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের কল্যাণে উৎস বাংলাদেশের বিশেষ সঙ্গীতায়োজন ‘উৎস সন্ধ্যা ২০২৪’

» নারী উদ্যোক্তাদের প্রসারে ব্র্যাক ব্যাংকে পণ্য মেলার আয়োজন

» বসুন্ধরা টয়লেট্রিজ নিয়ে এলো সম্পূর্ণ নতুন “Alora 2in1” হেয়ার এন্ড বডি ওয়াশ

» বড়াইগ্রামে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস পালিত

» বিএনপির দুই পক্ষ একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় ১৪৪ ধারা জারি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

দেশে দেশে অস্থিরতা

একদিকে অর্থনৈতিক সংকট অন্যদিকে ক্ষমতার লড়াই। এই দুইয়ে একের পর এক দেশে অস্থিরতা বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে তা পারদ স্তম্ভের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। একদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারাবিশ্বের অর্থনীতি। দেশে দেশে বহু মানুষ হয়েছেন কর্মহীন। দেখা দিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। পণ্য মূল্য বেড়েছে। এর সঙ্গে ক্ষমতার লড়াই যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সৃষ্টি হয়েছে এক অনিশ্চিত অবস্থা। নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইসরাইল ও কুয়েতে। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা, যুদ্ধও গ্রাস করেছে অনেক দেশকে। এর মধ্যে আছে ইউক্রেন, মিয়ানমার, ইয়েমেন ও আফগানিস্তান। এসব দেশে সরকারে তোলপাড় চলছে। পাকিস্তানে ক্ষমতা নিয়ে নেতাদের মধ্যে চরম নাটকীয়তা। পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবে অসম্মানের মধ্যদিয়ে বিদায়কে অন্যভাবে ‘টুইস্ট’ করেছেন ইমরান খান। দেশটির বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্রিকেটের লোক হলেও রাজনীতিতেও ‘গুগলি’ বা ইনসুইং চাল দিতে দক্ষ। তার এমন সিদ্ধান্তে পাকিস্তানে আগাম নির্বাচন হওয়ার কথা ৯০ দিন বা ৩ মাসের মধ্যে। ইমরানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) কাছে এবং বিদায়ী পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের নাম চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন  প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। ওদিকে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাবকে যে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে রুলিং দেয়ার কথা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে সেনাবাহিনীর নাম। কে যে কোনদিকে কাজ করছেন- কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কুয়েতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধীদের উত্তেজনা তুঙ্গে। গতকাল দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালেদ আল সাবাহকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় বিরোধী দলগুলো। এ অবস্থায় ইমরান খানের মতো নিজের মান সম্মানকে রক্ষার জন্য নিজেই পদত্যাগ করেন তিনি। একে সরকারের পদত্যাগ হিসেবে সংবাদ শিরোনাম করেছে স্থানীয় পত্রিকাগুলো। বিরোধী দলগুলো তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ক্রাউন প্রিন্স শেখ মিশাল আল-আহমেদ আল জাবের আল সাবাহ’র কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। ক্রাউন প্রিন্স তা গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য পেনিনসুলা। এতে বলা হয়, শেখ সাবাহ আল খালেদ আল সাবাহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার তার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল। তারা তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করছিলেন। এর আগেও তারা একইভাবে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করেছেন।

শ্রীলঙ্কায় মুমূর্ষু অবস্থায় টিকে আছে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সরকার। অর্থনৈতিক সংকট দেশটিকে ভয়াবহভাবে আঁকড়ে ধরেছে। এতে মানুষের পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ও পুরো সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে। বিদ্যুৎ নেই। গ্যাস, খাদ্য ও অন্য মৌলিক পণ্যের রয়েছে ভয়াবহ সংকট। ফলে মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। যে চীন তাদের অর্থনৈতিক উদ্ধারে এগিয়ে এসেছিল, তারাও দৃশ্যত পিছপা হচ্ছে। এই সুযোগে সেখানে পা বাড়িয়েছে ভারত। বলা হয়, হাম্মানতোতা বন্দর সহ শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চলে গেছে চীনের হাতে। নিজেদের অর্থনীতি বলতে দেশটিতে কিছুই নেই। এমন অবস্থায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সেখানেও হানা দিয়েছে করোনা মহামারি। ফলে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে জনরোষ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মন্ত্রিপরিষদের প্রায় সবাই পদত্যাগ করেছেন। বিপুল পরিমাণ এমপি সরকারকে ছেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার জাতীয় সরকার গঠনের ডাক দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তাহলে কি গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকছে না? এর উত্তর দিয়েছেন বুধবার সরকারের চিফ হুইফ জনস্টোন ফার্নান্দো। তিনি বলেছেন, দায়িত্বশীল একটি সরকার হিসেবে আমার প্রেসিডেন্ট  গোটাবাইয়া রাজাপাকসে যেকোনো পরিস্থিতিতেই পদত্যাগ করবেন না। এর আগে মঙ্গলবার রাতে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা বাতিল করেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে দাঁড়ান কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা। ফলে পার্লামেন্টে আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই রাজাপাকসের। এরমধ্যে নতুন ধাক্কা হিসেবে পদত্যাগ করেছেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া অর্থমন্ত্রী আলি সাবরি। তিনি মাত্র একদিন অফিস করেছেন। সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পূর্বে তিনি পদত্যাগ করলেন। দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, গত সোমবারই তার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন রাজাপাকসে এবং বিরোধীদের সঙ্গে মিলে একটি ইউনিটি গভর্নমেন্ট তৈরির চেষ্টা করেন। দেশটির ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। ঋণের ভারে জর্জরিত দেশটিতে দেখা গেছে চরম খাদ্য ও তেল সংকট। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। দেখা দিয়েছে ওষুধের সংকটও। চিকিৎসকরা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শিগগিরই ভেঙে পড়বে। এমন অবস্থায় গত শুক্রবার দেশটিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তির মধ্যদিয়ে এই জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার কথা জানান রাজাপাকসে। এতে তিনি বলেন, আমি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ৫ই এপ্রিল মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা বাতিল ঘোষণা করছি। রাজনৈতিকভাবে রাজাপাকসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তিনি তার ভাই মাহিন্দ রাজাপাকসেকে সরিয়ে শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। কিংবা ২০২৫ সালে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তা এগিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।

ওদিকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফটালি বেনেটের সরকার। বুধবার সরকার থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জোটের হুইপ ইদিত সিলমান। এর ফলে পার্লামেন্ট নেসেটে এখন সরকার ও বিরোধীদের রয়েছে ৬০-৬০টি করে আসন। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, যদি আর একজনও সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে তাহলে বিশেষ আইন প্রয়োগ করে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবে বিরোধীরা। তাহলে এটিই হবে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার শেষ। যদি তা-ই হয়, তাহলে আবার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। তিনি ক্ষমতায় এলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। এমনিতেই শোনা যাচ্ছে নাফটালি বেনেট যে জোট গড়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তাতেও ফাটল ধরেছে। ফলে ইসরাইলের রাজনীতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। ইস্তফার পর সিলমান জানান, মূলত স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিতজান হরোউইতজের সঙ্গে বাদানুবাদের জেরেই তিনি সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বলেন, আমি এই জোটের জন্য অনেক করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমি আর তাদের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারছি না। তার এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিরোধী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইসরাইলের বহু মানুষ এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল। যদিও লেবার দলের আইনপ্রণেতা গিলাদ কারিভের দাবি, বাদানুবাদের কারণে ইস্তফা দেয়া মোটেও আসল কারণ নয়। সিলমান জোট ছেড়েছে কারণ তাকে বিরোধী লিক্যুদ পার্টির ১০তম পদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনি লিক্যুদ পার্টির হয়ে লড়বেন এবং জিতলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ পাবেন।

ইসরাইলি গণমাধ্যম মারিভ জানিয়েছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা সিলমানের এই সিদ্ধান্তের কথা আরও এক সপ্তাহ আগে থেকেই জানতেন। এটি তাদের কাছে তাই কোনো সারপ্রাইজ ছিল না।

ওদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ কাঁদিয়ে যাচ্ছে মানবতাকে। যে যুক্তিতেই হোক রাশিয়া একতরফাভাবে নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনে। সেখানে নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করছে। সর্বশেষ বুচা শহরে দেখা গেছে গণহত্যার জ্বলন্ত প্রমাণ। রাস্তায় রাস্তায় লাশ। বিগলিত লাশ। হাত-পা বাঁধা লাশ। গণকবরে লাশ। রাস্তার ওপর সারি সারি লাশ। সে দৃশ্য দেখে মানবাত্মা কেঁদে ওঠে। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে সুরম্য অট্টালিকা। দেখে বোঝার উপায় নেই, মাত্র এক বা দেড় মাস আগে সেখানে মানুষের বসতি ছিল। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উন্মত্তের মতো সেখানে হামলা চালিয়েছেন। সারাবিশ্ব একদিকে। আর তিনি একদিকে। হিটলারের সঙ্গেও এরই মধ্যে তাকে তুলনা করা হয়েছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছুতেই নিবৃত হচ্ছেন না পুতিন। এই যুদ্ধের ফলে লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হয়েছেন। রাশিয়ার তেল, জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ফলে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বাড়ছে সব কিছুর দাম।

মিয়ানমারেও সামরিক জান্তা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে নিজেরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র সেখানে নির্বাসনে গেছে। সারাবিশ্ব থেকে তাদের ওপর চাপ দেয়া সত্ত্বেও একচুল নড়ছে না সামরিক জান্তা। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে কমপক্ষে ১৩০০ মানুষ। তারা শুধু যে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে এমন নয়। একই সঙ্গে দেশটির প্রতিবাদী জনতা, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চালিয়েছে নিষ্ঠুরতা। ইয়েমেনের যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশান্তরী হয়েছেন কত মানুষ তার হিসাব নেই। সেখানে দুর্ভিক্ষ মানুষকে জেঁকে ধরেছে। তারপরও যুদ্ধ চলছে। এই যুুদ্ধের ফলে অগণিত মানুষ হারিয়েছে সব। নিঃস্ব মানুষের প্রতিবাদের জায়গাটুকুও নেই। আছে বাতাসে বারুদের গন্ধ। এর শেষ কোথায় তা কেউ জানে না।

সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com