মোঃ জাকির হোসেন : সিগারেট ধরিয়ে ঠোঁটের কাছাকাছি আনতেই স্ত্রী রুমার নিষেধাজ্ঞা মনে পড়ল তপুর। ‘সাবধান! একদম সিগারেট খাবে না। সিগারেট খেলে ছেলের মাথা খাও বলে দিচ্ছি।
তপু সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট নিচে ছুঁড়ে পা দিয়ে পিষে ফেললো। প্রতীজ্ঞা করল জীবনে সে আর সিগারেট ছুঁয়ে দেখবে না। বন্ধুরা বিদেশ থেকে এসে দামি প্যাকেট ধরিয়ে দিলেও না। কোনো পার্টিতে না, ফাংশনে না। পান চিবুতে চিবুতে না। না তো না। চির জীবনের জন্য না।
মনে মনে তপু একটা নোংরা কথা ভাবল, সে যদি আর কখনো সিগারেট খায় তাহলে যেন কুত্তার বিষ্ঠা খায়। সিগারেট ছাড়ার প্রথম পরীক্ষাটা দিল সে।
প্যাকেটে তখনো গোটা দশেক সিগারেট অবশিষ্ট ছিল। সিগারেটসহ প্যাকেটটিতে আগুন ধরিয়ে দিল সে। চোখের সামনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। দৃশ্যটি দেখতে ভারী মজা লাগছে তার। কোনো কিছু ধ্বংস করার মধ্যেও যে আনন্দ লুকিয়ে থাকতে পারে তা প্রথম উপলদ্ধি করল তপু।
আগুনের তীব্রতা কমে আসছে। এখনই নিভে যাবে। সে নিভু নিভু আগুনের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনার মতো করে বললো, হে বন্ধু তোমাকে চির বিদায়! আমি এবং আমার মতো অন্য কারো ঘাড়ে এসে নতুন করে ভর কর না।
আজ সাত দিন ধরে তপু বাসায় একা। রুমা ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি গেছে। রুবী অর্থাৎ রুমার ছোট বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাই রুমার বাবা এসে মেয়ে আর নাতিকে নিয়ে গেছেন। তপুকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। ও অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করতে পারেনি। তবে বিয়ের অন্ততঃ দু’দিন আগে তপুকেও উপস্থিত থাকতে হবে সেখানে।
এ সাত দিনেই তপুর সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ঘরের কোনো জিনিসপত্র সে খুঁজে পায় না। একটা ডিম ভাজি করে নাস্তা খাবে তাও ঠিক মতো করতে পারে না। কোথায় লবণ কোথায় পেঁয়াজ কিছুই তার চোখে পড়ে না। অথচ রান্না ঘরে সবই আছে।
রুমা ভালো করেই তপুকে জানে, তাই সে যাবার আগে সব কিছু রান্না-বান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে। এবং তপুকে বারবার সাবধান করে গেছে, তুমি কিন্তু বাইরে কিছু খাবে না। বাইরের খাবার তোমার একদম সহ্য হয় না। একটুতেই পেটে সমস্যা হয়। শুধু দু’এক পট চাল বসিয়ে ভাত রান্না করলেই চলবে।
কিন্তু তা-ও ইচ্ছে করে না তপুর। শুধু প্রথম দিনই যে ভাত ছিল,তা ফ্রিজের ঠাণ্ডা তরকারী বের করে খেয়ে নিয়েছে। তারপর থেকে হোটেলে। অবশ্য অফিস থেকে বেরিয়ে বন্ধু হিমেলের ওখানেও গিয়েছে দু’দিন। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে এসেছে।
তপুর আজ অফিস ছিল না। বাসায় বন্ধু হিমেলের আসার কথা। তাই সে সারাদিন কোথাও বের হয়নি। হিমেলের আসার কথা বিকেল তিনটায়। এখন পাঁচটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। হিমেল এখনো আসছে না কেন? ও তো কখনো আউল ফাউল কথা বলে না। হিমেলের মোবাইলে কল দেয়। মোবাইল বন্ধ। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দেয়। ফোনে রিং বাজে। কিন্তু ফোন উঠায় না।
তপু তো হিমেলের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়নি। ওর ফোন বন্ধ থাকবে কেন! নাকি ওর অন্য কোনো সমস্যা? কী জানি বাপু। তপু মনে মনে গালি ঝাড়ে। শালা…। ফোন বন্ধ করে আমার সঙ্গে ফাতরামি! ঠিক আছে এর মজা তোকেও আমি দেখাব একদিন।
তপু বাসা থেকে বের হয়। হাঁটতে হাঁটতে মেইন রাস্তায় চলে আসে সে। এখানে এসে মনে হয় চা খাওয়া দরকার। ও চা খাওয়ার জন্য সুবিধা মতো কোনো রেস্তোরাঁ খুঁজতে থাকে। কিন্তু ফুটপাথে এত মানুষ যে, ভিড় ঠেলে হাঁটার জো নেই। কতদূর এগুতেই ভিড়ের মধ্যে পেছন থেকে একজন এসে তপুর হাত চেঁপে ধরল। তপু চমকে গিয়ে তাকাল। তারপর কয়েক সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে দেখল সে।
র-ত-ন! দোস্ত তুই?
চিনতে পারছিস না মনে হয়?
শালা তোকে চিনব না, তা কী করে হয়? তুই কবে এসেছিস?
এই তো বছর খানেক হবে?
এখন করছিস কী, চাকরি না ব্যবসা?
ব্যবসা।
তুই?
আমি চাকরি করছি। তোর কী অবস্থা? বিয়েথা করেছিস ?
হ্যাঁ, দোস্ত ও কাজটা বিদেশ থেকে এসেই সেরে ফেলেছি।
বাসা কোথায়?
রতন আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখায়, ওই তো রাস্তার ওপারে গলির ভেতর একটু ঢুকেই।
তপু বিস্ময়ের সঙ্গে বলে, বলিস কী! আমিও তো রাস্তার এপারে থাকি।
তাই নাকি!
রতন বললো, কী আশ্চর্য! এত কাছাকাছি থাকি অথচ কারও সঙ্গে দেখা হয় না।
তপু বলল, দোস্ত এটা ঢাকা শহর। জানা না থাকলে এক ফ্লাটে বছরের পর বছর থাকলেও দেখা হবার সম্ভাবনা কম।
রতন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, ঠিকই বলেছিস সবাই এত ব্যস্ত যে কারো দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখারও সময় নেই। তা এদিকে কোথায় যাচ্ছিলি?
বউ বাচ্চা বাসায় নেই। ভলো লাগছিল না। তাই ভাবলাম বাইরে থেকে একটু চা-টা খেয়ে আসি।
রতন উৎফুল্ল চিত্তে বলল, তাহলে চল আমার বাসায়। বাসাটাও চেনা হবে সঙ্গে চা-ও খেয়ে আসবি।
তপু বলল, আরে না,না। অন্য আর একদিন।
রাখ তো তোর না, না। বন্ধুর বাসায় যাবি তাতে আজ আর কাল কী? চল, চল। এখনই চল।
তপুকে অনেকটা টেনেই নিয়ে গেল রতন।
মেইন রাস্তা থেকে বেশি হাঁটতে হলো না। গলির ভেতর ঢুকে চার পাঁচটা বাড়ির পরই রতনের বাসা। কলিং বেল টিপতেই একটা ছোট্ট মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল। ওরা দু’জন ড্রয়িং রুমে বসেছে। সোফায় বসে দু’বন্ধু কথা বলে কিছুক্ষণ। কথার ফাঁকে তপুকে বসিয়ে রেখে রতন ভেতরের রুমে যায়। বউয়ের সঙ্গে কথা বলে।
সুমী, প্লিজ একটু নাস্তার ব্যবস্থা কর না। তপু এসেছে। ও আমার বাল্য বন্ধু। অনেকদিন পর ওকে হঠাৎ রাস্তায় পেয়ে ধরে নিয়ে এসেছি।
রতন ভেবেছিলো এ সময় নাস্তার কথা বললে সুমী বিরক্ত হবে কিন্তু সুমী একটুও বিরক্ত হলো না।
বেশ হাসি মুখে বললো, এ নিয়ে তুমি ভেবো না। আমি ব্যবস্থা করছি। তাছাড়া তোমার বন্ধু এই প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে তাকে শুধু নাস্তা দিলে চলবে কেন? তুমি কিন্তু ওকে রাতের খাবার খেয়ে যেতে বলবে। তা না হলে আমারও দুর্নাম হবে।
রতন সুমীর চিবুক টেনে বলল, লক্ষ্ণী বউ! সত্যি তোমার তুলনা হয় না।
সুমী চোখ নাচিয়ে বলে, আর ঢং করতে হবে না। তুমি বরং যাও এই ফাঁকে গোসলটা সেরে আস। রতন তড়িঘড়ি করে বাথরুমে ঢোকে। আর সুমী যায় রান্না ঘরে।
তপু বসে বসে পত্রিকা পড়ছিল। একটু পর সুমী নাস্তার ট্রে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। সুমীর পায়ের শব্দে পত্রিকা রেখে চোখ তুলে তাকায় তপু। সুমীও তাকায় তপুর দিকে। কয়েক সেকেন্ড চাওয়া চাওয়ি হয় দু’জনের মধ্যে।
তপু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ কাকে দেখছে সে? চোখ কচলে ভালো করে তাকায়। না সে ভুল দেখছে না। মুহূর্তের মধ্যে সুমীর মাথাটাও এলোমেলো হয়ে যায়। লাটিমের মতো ঘুরতে থাকে। চোখে অন্ধকার দেখছে সে। নিজেকে সামলাতে পারছে না। অস্বাভাবিক ভাবে তার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। দাঁড়াতে পারছে না। হাত থেকে নাস্তার ট্রে-টা পড়ে যাবে নাকি?
সে কোনো মতে কাঁপা কাঁপা হাতে টেবিলে ট্রে-টা রাখল ঠিকই, কিন্তু চায়ের কাপ উল্টে গিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল। হাস্যেজ্জ্বল মুখ নিমেষেই ছাই বর্ণ হয়ে গেল সুমীর।
তপু এই মুহূর্তে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। হতভম্বের মতো সুমীর দিকে তাকিয়ে আছে। সুমী করজোড়ে অনুনয়ের ভঙ্গি করে তপুর সামনে থেকে পালিয়ে গেল।
সুমী তো তপুর সামনে থেকে পালিয়ে বাঁচল। কিন্তু এখন তপু কী করবে? বন্ধুর বাসায় এসে এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে তা স্বপ্নেও ভাবেনি। সুমীর করজোরে অনুনয়ের ভঙ্গি দেখে তপুর মন আরো খারাপ হয়ে গেল। রতন এসে পড়লে সমস্যা আরো ঘণীভূত হবে। ভাবল এ অবস্থায় রতনের সঙ্গে দেখা না করাই উত্তম। তপু নিঃশব্দে রতনের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।
এখন আর ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে না। রাস্তা অনেক ফাঁকা। আর একটু সামনে এগুলেই সরকারী কলেজ। কলেজেরে সামনে বিশাল মাঠ। তপু হাঁটতে হাঁটতে মাঠে গিয়ে ঘাসের ওপর বসে পড়ল।
বছর দু’য়েক আগের ঘটনা-টা তপুর চোখের সামনে নতুন করে ভেসে ওঠে। সেদিন বলাকা হলে ম্যাটিনি শো দেখতে গিয়েছিলো ও। বলাকায় নামকরা একজন পরিচালকের খুব ভালো একটা ছবি চলছিল। তপু ঠিক সময়েই সিনেমা হলে এসে হাজির হয়েছিল। কাউন্টারের টিকিট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বাইরেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছিল না। টিকিট না পেয়ে ওর খুব মন খারাপ। সিনেমা হলে এসে ছবি না দেখে ফিরে যাবে? ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।
তপুর চোখের সামনে দিয়ে লাইন ধরে দর্শকরা হলের মধ্যে ঢুকছে। তপু শুকনো মুখে টিকিট কাউন্টারের এক পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস্তভাবে মোবাইল স্ক্রিনে একবার টাইম দেখল।
ইতোমধ্যে ছবি শুরু হয়ে গেছে। হলের সামনে উদাস মুখে পায়চারি করছে তপু। একটু পরে লক্ষ্য করল তার পাশে শাড়ি পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটি বেশ স্মার্ট ও সুন্দরী। সাজগোজও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তার চোখে মুখে এক ধরনের অস্থিরতা। উসখুস করছে সে। তপু লক্ষ্য করল মেয়েটি বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে। তাকানোর ভঙ্গি অদ্ভুত সুন্দর। গভীর চোখে সীমাহীন আবেদন।
তপু মেয়েটির দিকে আড় চোখে তাকায়। ওর চোরা চাহনি একবার মেয়েটির কাছে ধরা পড়ে যায়। তপু ভীষণ লজ্জা পায়। মেয়েটি অবশ্য ব্যাপারটাকে তেমন পাত্তা দেয় না। সে সহজ ভাবে তাকায় তপুর দিকে। তারপর অবশ্য তপুও মেয়েটির ওপর থেকে চোখ নামাতে পারে না।
এক সময় মেয়েটি এগিয়ে আসে তপুর দিকে।
খুব সহজভাবে বলে, কিছু মনে করবেন না, আপনি কি ছবি দেখতে এসেছেন?
তপু জড়ানো কন্ঠে বলে, হ্যাঁ কিন্তু…
সামান্য হাসে মেয়েটি।
আমার কাছে এক্সট্রা একটা টিকেট আছে। আমার এক বান্ধবী আসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ওর একটা সমস্যা হওয়ায় আসতে পারেনি। আপনি চাইলে আমার টিকেট-টা নিতে পারেন।
তপু প্রথম একটু ইতস্তত করলেও শেষে কী ভেবে রাজি হয়ে যায়।
তারপর দু’জন হলের ভেতর ঢোকে। দশ পনের মিনিট আগে ছবি শুরু হয়েছে। হলের মধ্যে অন্ধকার। লাইটম্যান টিমটিমে একটা টর্চ দিয়ে ওদের বসার চেয়ার দেখিয়ে দিল। পেছনের দিকে ওদের চেয়ার। আলো আঁধারির মধ্যে দিয়ে সিটে গিয়ে বসলো ওরা।
লাজুক তপু। মেয়েটির পাশে জড়সড় হয়ে বসেছে। তার চোখ পর্দায় নিবিষ্ট। মেয়েটি বার বার তপুর দিকে তাকাচ্ছে। সে তপুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তপুর মনোভাব দেখে কথা শুরু করতে পারছে না। কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি কথা বলতে শুরু করে।
আচ্ছা আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?
একটু অবাক হয় তপু।
সমস্যা! কিসের সমস্যা?
হাসে মেয়েটি।
আপনি স্টাচুর মতো বসে আছেন, তাই ভাবলাম আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
মেয়েটি কথা বলায় তপু হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ও সহজ হতে চেষ্টা করে।
না-না, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
আপনার অসুবিধা হচ্ছে না তো?
আপনি কী যে বলেন অসুবিধা হবে কেন? আমার একটা বদ স্বভাব কথা না বলে থাকতে পারি না। আমার বান্ধবীটা থাকলে ওর সঙ্গে কথা বলে বলে বিরক্ত করে ছাড়তাম।
তাই নাকি?
তবে আর কী বলছি।
তপু বিগলিত কণ্ঠে বলে,আপনি চাইলে আমার সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
মেয়েটি তার চোখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,থাঙ্ক ইউ।
তারপর মেয়েটি তপুর সঙ্গে অনর্গল কথা বলতে শুরু করে।
কথা বলতে বলতে এক সময় মেয়েটি তপুর খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে। প্রথমে তপুর পিঠে তারপর কোমরে হাত রাখে। সে বাধা দেয় না। এক সময় তপুর ভালো লাগার অনুভূতি গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়। ভালো লাগার আবেশে ওর দুচোখ বন্ধ হয়ে যায়।
তপু অজানা স্বপ্নের রাজ্যে হারিয়ে যায়। এভাবে কতক্ষণ চলে সে আন্দাজ করতে পারে না। এরই এক ফাঁকে তপুকে বলে মেয়েটি ওয়াশ রুমে চলে যায়। তপু ওভাবেই তন্দ্রাচ্ছান্ন চেয়ারে বসে থাকে।
ঘোর কেটে গেলে তপু আবার পর্দার দিকে তাকায়। ইতোমধ্যে অনেকগুলো সিকোয়েন্স শেষ হয়েছে। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকেও তপু সিনেমার কিছু অনুধাবন করতে পারছে না। সাদা কাগজের মতো অর্থহীন একের পর এক দৃশ্য তার চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। পাশের চেয়ারের হাতলে হাত রেখে মনে হলো মেয়েটি ওয়াশ রুমে থেকে এখনো ফিরে আসেনি।
কী ব্যাপার মেয়েটি এখনো আসছে না কেন? একটু পরেই মেয়েটির জন্য টেনশন শুরু হয়ে যায় তপুর। পাঁচ মিনিট! দশ মিনিট!! পনের মিনিট পার হয়ে গেলেও মেয়েটি যখন আসে না। তখন তপুর হুস হয়। প্রথমে সে হাত রাখে ব্যাক পকেটে। মানি ব্যাগ নেই! এরপর দ্রুত হাত চালায় সাইড পকেটে। সর্বনাশ হয়েছে মোবাইল সেট-টিও তো নেই!!
তারপর হতাশ মুখে সিনেমা শেষ না করেই বেরিয়ে আসে তপু। এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু কোথাও দেখতে পায় না মেয়েটিকে।
ঘটনার পর থেকে তপু মনে মনে অনেক খুঁজেছে মেয়েটিকে। অনেক ঘুরেছে সে-বলাকায়, পূর্ণিমায়, এশিয়ায়, মধুমিতায় কিন্তু কোথাও দেখা-মেলেনি তার। বহুদিন পর আজ অপ্রত্যাশিতভাবেই দেখা হয়ে গেল মেয়েটির সঙ্গে। তা-ও আবার বন্ধুর বাসায়। বন্ধুপত্নী হিসেবে!
সূএ:ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকম