সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক : ইসলামে জুমার দিনকে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে। এই দিনটিকে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। হাদিসে এসেছে, ‘জুমার দিন হলো দিনসমূহের সর্দার এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪) এই মর্যাদাসম্পন্ন দিনে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করা অনুচিত বা নিষিদ্ধ। নিচে জুমার দিনে এমন কিছু ভুল ও অবহেলার দিক তুলে ধরা হলো, যেগুলো থেকে বাঁচা ইসলামের নির্দেশনা।
১. গোসল ও পরিচ্ছন্নতা ছাড়া জুমায় যাওয়া
অনেকেই জুমার দিন অন্য দিনের মতোই অবহেলায় মসজিদে যান। অথচ, রাসুল (স.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, জুমার দিন গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, সুন্দর পোশাক পরে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যাওয়া উচিত। (বুখারি: ৮৮৩) তাই এই বিষয়ে অবহেলা করা উচিত নয়।
২. মসজিদে দেরি করে যাওয়া
জুমার নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো খুতবা। দেরি করে গেলে খুতবার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। রাসুল (স.) বলেছেন, জুমার দিনে আগেভাগে মসজিদে যাওয়া ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে এমন প্রতিদান দেওয়া হয়, যেন সে একটি বড় পশু কোরবানি করেছে। (বুখারি: ৮৮১)
তাই জুমার নামাজে দেরিতে যাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে করে বড় সওয়াব হাতছাড়া হয়ে যাবে।
৩. জুমার আজান হওয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কাজে লিপ্ত থাকা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বর্জন কর।’ (সুরা জুমা: ৯) অথচ, আজান হওয়ার পরও অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বা ব্যক্তিগত কাজে লিপ্ত থাকেন, যা কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিরোধী।
৪. খুতবা চলাকালীন অমনোযোগী থাকা
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমভাবে অজু করে জুমায় এলো, নীরবে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ও আরও তিন দিনের গুনাহ মাফ করা হয়।’ (মুসলিম: ১৮৭৩) খুতবার সময় মনোযোগ না দেওয়া কিংবা অন্য কোনো কাজে মশগুল থাকা বড় গুনাহের কাজ।
৫. খুতবার সময় কথা বলা বা অন্যকে চুপ করতে বলা
জুমার খুতবা চলাকালে কোনো প্রকার কথাবার্তা বলা কঠিনভাবে নিষেধ। এমনকি অন্যকে ‘চুপ থাকো’ বললেও তা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খুতবার সময় তার পাশের ব্যক্তিকে চুপ বলল, সে অনর্থক কাজ করল।’ (বুখারি: ৯৩৪; মুসলিম: ৮৫১)
৬. মসজিদে গিয়ে অন্যের সামনের সারিতে জায়গা করে নেওয়া
জুমার দিন অনেকেই দেরি করে এসে অন্যদের জায়গা অতিক্রম করে সামনের কাতারে পৌঁছাতে চান। এটি অশোভনীয় এবং অন্য মুসল্লিদের কষ্টের কারণ হয়। হাদিসে এসেছে, কেউ যেন দুই মুসল্লির মাঝখানে ফাঁক করে না দাঁড়ায়। (আবু দাউদ: ১০৪৮)
৭. খুতবার সময় খেলাধুলা বা মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকা
বর্তমান সময়ে অনেকেই খুতবার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, চ্যাট করেন কিংবা খবর পড়েন— যা স্পষ্টভাবে খুতবার উদ্দেশ্য নষ্ট করে দেয় এবং আমলের ফজিলত কমিয়ে দেয়। খুতবা চলাকালীন সময় সর্বোচ্চ মনোযোগে শ্রবণ করা উচিত।
শেষ কথা, জুমার দিন শুধু নামাজ আদায়ের দিন নয়; বরং এটি মুসলমানদের জন্য একটি আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। এ দিনটি যথাযথভাবে পালন করতে হলে যেমন কিছু আমল করা জরুরি, তেমন কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার দিনকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে যথার্থ আমলের মাধ্যমে এদিনের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।