মূল: দ্য ড্রিমস, নাগিব মাহফুজ: একটি বিশাল কক্ষে মিলিত হলাম আমরা। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই ছিল আমার সহকর্মী। বাইরের কিছু মানুষজনও ছিল সেখানে, যাদেরকে ইতোপূর্বে দেখিনি আমি। সবাই অপেক্ষা করছিলাম ভাগ্য সম্পর্কিত একটি ফলাফল ঘোষণা শোনার জন্যে।
ফলাফল ঘোষণায় আমি বিজয়ী হলাম। পুরষ্কার হিসেবে আমাকে দেয়া হলো একটি আধুনিক ধরণের ভিলা। পরক্ষণেই আমাকে অভিনন্দন জানানোর জন্যে শোরগোল লেগে গেল। অনেকে সমালোচনাও করল। তারা নিজেদের ভেতরের বিষণ্ণতাকে গোপন করতে পারল না। কয়েকজন বলল, এটা আমার জন্যে আসলেই বড় ধরণের বিজয়, তবে একইসাথে দুর্ভাগ্যও। কারণ, ভিলাটিকে আসবাবপত্রে সজ্জিত করার অর্থ আমাকে কে দেবে? কীভাবে এর স্টাফদের বেতন দেবো? কীভাবে পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করব? সুইমিং পুল, এয়ারকন্ডিশনার – এগুলোই বা আমি রক্ষণাবেক্ষণ করব কীভাবে?
সত্যিকার অর্থে আমার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। তবুও প্রতিদিনই আমি ভিলাটি পরিদর্শন করতে লাগলাম। কিন্তু এই পরিদর্শন আমার হতাশা ও মর্মপীড়াকেই বাড়িয়ে দিলো। লোকজন আমার অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিলো। তারা আমাকে রাজি করালো জায়গাটা বিক্রি করে দিতে। প্রলোভন দিয়ে। বিনিময়ে আমি যা কিছু পেলাম, তা আনন্দের সাথে উপভোগ করলেও অল্প কিছুদিন পরই আমি বুঝতে পারলাম যে আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি।
এই সময়ে সিভিল সার্ভিসের সাধারণ পরিচালক পদটি খালি হলো। পদটির জন্য অনেকজন প্রার্থী ছিল। উপরস্থ কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের অনেকের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। পাগলের মতো পরস্পরের সাথে তারা গুঁতোগুঁতি শুরু করল। পদটি দখল করার জন্যে। আমি মন্ত্রীর সাথে দেখা করলাম। তাকে বললাম, শুধুমাত্র তিনিই এ বিষয়ে আমার হয়ে প্রভাব খাঁটাতে পারেন। তিনি উত্তর করলেন, ‘তুমি তো নিজের সম্পদই রক্ষা করতে পারো না। কীভাবে আমরা অন্যদের সম্পদের বিষয়ে তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?’
আমি অন্য কর্মচারীদের কাছে অনুসরণ না করার উদাহরণ হলাম। সুতরাং বাধ্য হয়ে অবশিষ্ট চাকুরি সমর্পণ করে অবসরে যাওয়ার আবেদন করলাম। এই সময়ে আমি প্রথম বুঝতে পারলাম যে, জীবনের আসল নিরাপত্তা এখানেই। অবসর হলো মানুষের জীবনের একমাত্র অবস্থা, যা অন্যেরা লোভের বশবর্তী হয়ে আশা করে না। এমনকি লোভের দৃষ্টিতেও এর দিকে তাকায় না।
সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ