ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো: উপদেষ্টা ফারুকী

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘সরকারে যোগ দেয়ার পর গত চারটা দিন ছিলো আমার জন‍্য সবচেয়ে অস্বস্তির। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি চুপ করে আছি কেন? আমি বলেছি, আমাদের কাজ তো কাজটা করা। সরকারে বসে বিবৃতি দেয়া না।’

আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ কথা বলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ভোরে মাদারীপুর জেলায় একটি গানের অনুষ্ঠানস্থল থেকে বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে গতকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্তদের আয়োজিত মানববন্ধনে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন আহত হন।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুর ইউনিয়নের জাবরা বাজারে খালা পাগলির বাৎসরিক ওরস ও মেলায় বিচার গানের আসরে বাউল আবুল সরকার ধর্মীয় কটূক্তি করেন বলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁর নামে ঘিওর থানায় একটি মামলা হয়।

ফারুকী পোস্টে আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফর দ‍্য রেকর্ড কয়েকটা প্রসঙ্গে কথা বলি:

১. আবুল সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এটা জানা মাত্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। তখন সেখান থেকে আমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতির উত্তাপ এবং ঝুঁকির দিকগুলো ব‍্যাখ‍্যা করা হয়। আমি বুঝতে পারি একটা সংকটের দিকে যাচ্ছে পুরা ব্যাপারটা।

যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমি আমার পক্ষ থেকে যা যা করার বা বলার তা তা করছি এবং বলছি। এর বেশি এখানে লেখাও আমার পক্ষে সঙ্গত কারণে সম্ভব না। মনে রাখতে অনুরোধ করবো, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনো ক্ষমতা বা ভূমিকা নাই। এই সম্পর্কিত যাবতীয় সিদ্ধান্তের এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে এই স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টা হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছে। আমি এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।

আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সবাইকে ধৈর্য্য এবং সংযম প্রদর্শনের জন‍্য অনুরোধ করছি। ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্প্রীতিই কেবল আমাদের দেশটাকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিতে পারবে, অন‍্য কিছু কেবল ধ্বংসের দিকেই নিবে।

২. এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার কিছু ইন্টারেস্টিং প‍্যাটার্ন লক্ষ‍্য করছি। কোনো সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না—লক্ষ্য ফারুকী।

এদের মাঝে কয়েকজনকে চিনি যারা আমাদের কমন সার্কেলের আড্ডায় বলেছে, ফারুকীর মিনিস্ট্রি যেসব ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে এটা তো দেশে ইনক্লুসিভ রাজনীতির জন‍্য ক্ষতিকর!!! অর্থাৎ বিচার, অপরাধ স্বীকার এবং অনুশোচনার আগেই উনারা যার প্রতি সফ্ট তাকে গ্রাউন্ড তৈরি করতে দিতে হবে। অনুমান করি, সেই প্রসঙ্গে তৈরি হওয়া গাত্রদাহ আবুল সরকার উসিলায় এখন আমার উপর ঢালছেন হয়তো।

তাদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই, এই কাজটা আমাকে করতেই হবে, কারণ শহীদেরা আমাকে এই কাজ করতেই পাঠিয়েছে। আই অ‍্যাম সরি টু মেক ইউ ফিল আনকমফোরটেবল। এবং সামনে আমাদের মন্ত্রণালয় আরো আনকমফোরটেবল কাজে হাত দিবে। ইতিহাস গায়েব করে অথবা এর নির্বাচিত অংশ পেশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইনটেলেকচুয়াল কলোনি বানানোর যে প্রকল্প চলে আসছে বহু বছর, সেটাকে একদল তরুণ গবেষক যাচাই বাছাই করে দেখার কাজে হাত দিয়েছে। ফলে আমাকে আরো আক্রমণ করার জন্য তৈরি হতে অনুরোধ করছি।

৩. সমালোচনা-প‍্যাটার্নের দ্বিতীয় রূপ-‘মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে লালন সেলিব্রেট করে আর বাউল মারে! ভণ্ডামী!’

বুঝলাম না, বাউল কি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় মারলো? আপনাদের একটু কষ্ট করে রিসার্চ করতে বলবো। তাহলেই দেখতে পাবেন ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলটা ঘেঁটে দেখেন, কত জায়গায় বাউলদের উপর আক্রমণ হয়েছে, চুল কেটে দিয়েছে, বাদ‍্যযন্ত্র ভেঙে ফেলেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পালাকার গ্রেফতার হয়েছে!

এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব সেটাই করেছি-লালনকে জাতীয় ভাবে সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমরা তাদের সাথে আছি এবং লালন শাহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক-কবি-দার্শনিকদের একজন। এর পাশাপাশি সারাদেশে আমরা অনেকগুলো সাধুসঙ্গ করেছি। আমরা পরিষ্কার বহুত্বের পক্ষে সাংস্কৃতিকভাবে অবস্থান নিয়েছি। ৫৪ বছরে প্রথমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদ, বৌদ্ধ পূর্নিমা, দুর্গাপূজা সেলিব্রেট করেছি। নববর্ষে সকল জাতিগোষ্ঠিকে নিয়ে একসাথে উৎসব করেছি। আমাদের এই অবস্থানটাই নতুন বাংলাদেশ। যেখানে সকল জনগোষ্ঠীর স্টেইক থাকবে।

এখন আমার মনে যে প্রশ্নটা উদয় হয়েছে: আমি ঠিক বুঝতে পারছি না সরকারের করণীয় কী?

ধরেন কোথাও মেয়েদের একটা ফুটবল খেলা বন্ধ হলো। তখন আমাদের করণীয় কী? আমার তো মনে হয় আমাদের কর্তব্য যারা এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং খেলার সংখ‍্যা বাড়িয়ে দেয়া। নাকি সেই বাড়িয়ে দেয়াটা অন্যায় হবে কারণ অমুক জায়গায় একটা খেলা বন্ধ হয়েছিলো—সুতরাং মেয়েদের খেলাই বন্ধ করে দাও? তো লালন জাতীয়ভাবে পালন করে এবং সরকারী উদ্যোগে সাধুসঙ্গ বাড়ানোটা কেমনে অপরাধ হইলো বুঝতেছি না। নাকি এখানেও সেই কেইস? অন‍্য কারণের রাগ এই কারণে ঢালা? তাহলে একই উত্তর—আপনাকে আনফরচুনেটলি আরো জ্বলতে হবে।

মানিকগঞ্জে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বাউল আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৩মানিকগঞ্জে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বাউল আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৩
৪. সবচেয়ে তামাশাময় এইটা। বাউলরা আক্রান্ত হইছে? ড্রোন শো করতে বলো ফারুকীকে? আমেনার মা রিকশা থেকে পড়ে গেছে? ফারুকীকে বলো আরো ড্রোন শো করতে।

হাহাহাহা। ভেরি ফানি। ভাইয়েরা ও বোনেরা আমার, টেলিভিশন সিনেমার আমিন চেয়ারম‍্যান হবেন না প্লিজ। আমার বন্ধু ডরোথি ওয়েনার টেলিভিশন দেখে আপ্লুত হয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিল—“মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে ‘ফিয়ার অফ দ‍্য আননোন’। ” তার বিবেচনায় আমিন চেয়ার‍ম‍্যানের কাছে টেলিভিশন ছিলো সেই আননোন থিং।

ডরোথির বাবা ইস্ট জার্মানির। বার্লিন দেয়াল ভাঙার পর ভদ্রলোক তাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় দোকানের ডিসপ্লেতে বার্বি দেখলে ডরোথির চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিতো, যাতে মেয়ে নষ্ট না হয়ে যায়! তাঁর জন‍্য বার্বি ছিলো ‘দ‍্য আননোন থিং’। আমাদের কতিপয় বিশুদ্ধবাদীর কাছে ড্রোন শো হচ্ছে সেই আননোন থিং। আজকে আর লম্বা করলাম না। পরে একদিন ড্রোন শো নিয়ে আমার কথা বলবো।

ড্রোনাতংকে ভোগা বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এইটুকু বলি—মিডিয়া ইজ ইভলবিং এভরিডে। দুনিয়ার বেশিরভাগ বড় ইভেন্টে এখন ড্রোন শো যুক্ত হচ্ছে। আমরা যখন শুরু করি তখনও এতোটা ছিলো না। কয়েকদিন আগে দুনিয়ার অন‍্যতম বৃহৎ যাদুঘর গ্র‍্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম ওপেনিংয়ে বিশেষ আয়োজন ছিলো ড্রোন শো। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের প্রচারনায় ২৬ শহরে সম্ভবত ড্রোন শো করেছে। আর নতুন বছর, জাতীয় দিবস, পূজা, কালচারাল ফেস্টিভ্যাল—এগুলোতে এখন ড্রোন শো ইজ দ‍্য নিউ নর্মাল। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে, আরো হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চব্বিশের পাশাপাশি একাত্তরের গণহত্যারও বিচার করতে হবে: নাসীরুদ্দীন

» গণমাধ্যমের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা দূর করতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা

» হাসিনা যেমন স্বৈরাচার, একই ভাবে জামায়াতে ইসলামীও স্বৈরাচার: নীলা ইসরাফিল

» জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের আহ্বায়ক ইশরাক হোসেন, সদস্য সচিব নান্নু

» আ.লীগের যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তারা জামাই আদরে থাকবেন: মনির কাসেমী

» ভূমিকম্পের সতর্কতায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

» আলেম-ওলামাদের মেহনত ব্যর্থ হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা

» ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো: উপদেষ্টা ফারুকী

» নানা অজুহাতে নির্বাচনকে ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে : ফারুক

» সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো: উপদেষ্টা ফারুকী

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘সরকারে যোগ দেয়ার পর গত চারটা দিন ছিলো আমার জন‍্য সবচেয়ে অস্বস্তির। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমি চুপ করে আছি কেন? আমি বলেছি, আমাদের কাজ তো কাজটা করা। সরকারে বসে বিবৃতি দেয়া না।’

আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এ কথা বলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ভোরে মাদারীপুর জেলায় একটি গানের অনুষ্ঠানস্থল থেকে বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে গতকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্তদের আয়োজিত মানববন্ধনে ‘তৌহিদি জনতার’ ব্যানারে মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন আহত হন।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুর ইউনিয়নের জাবরা বাজারে খালা পাগলির বাৎসরিক ওরস ও মেলায় বিচার গানের আসরে বাউল আবুল সরকার ধর্মীয় কটূক্তি করেন বলে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁর নামে ঘিওর থানায় একটি মামলা হয়।

ফারুকী পোস্টে আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফর দ‍্য রেকর্ড কয়েকটা প্রসঙ্গে কথা বলি:

১. আবুল সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এটা জানা মাত্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি। তখন সেখান থেকে আমাকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতির উত্তাপ এবং ঝুঁকির দিকগুলো ব‍্যাখ‍্যা করা হয়। আমি বুঝতে পারি একটা সংকটের দিকে যাচ্ছে পুরা ব্যাপারটা।

যেকোনো ফৌজদারি অপরাধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমি আমার পক্ষ থেকে যা যা করার বা বলার তা তা করছি এবং বলছি। এর বেশি এখানে লেখাও আমার পক্ষে সঙ্গত কারণে সম্ভব না। মনে রাখতে অনুরোধ করবো, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির ক্ষেত্রে আমি বা আমার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনো ক্ষমতা বা ভূমিকা নাই। এই সম্পর্কিত যাবতীয় সিদ্ধান্তের এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সাথে এই স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টা হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করছে। আমি এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।

আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে সবাইকে ধৈর্য্য এবং সংযম প্রদর্শনের জন‍্য অনুরোধ করছি। ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্প্রীতিই কেবল আমাদের দেশটাকে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে নিতে পারবে, অন‍্য কিছু কেবল ধ্বংসের দিকেই নিবে।

২. এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার কিছু ইন্টারেস্টিং প‍্যাটার্ন লক্ষ‍্য করছি। কোনো সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না—লক্ষ্য ফারুকী।

এদের মাঝে কয়েকজনকে চিনি যারা আমাদের কমন সার্কেলের আড্ডায় বলেছে, ফারুকীর মিনিস্ট্রি যেসব ডকুমেন্টারি বানাচ্ছে এটা তো দেশে ইনক্লুসিভ রাজনীতির জন‍্য ক্ষতিকর!!! অর্থাৎ বিচার, অপরাধ স্বীকার এবং অনুশোচনার আগেই উনারা যার প্রতি সফ্ট তাকে গ্রাউন্ড তৈরি করতে দিতে হবে। অনুমান করি, সেই প্রসঙ্গে তৈরি হওয়া গাত্রদাহ আবুল সরকার উসিলায় এখন আমার উপর ঢালছেন হয়তো।

তাদের উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে বলতে চাই, এই কাজটা আমাকে করতেই হবে, কারণ শহীদেরা আমাকে এই কাজ করতেই পাঠিয়েছে। আই অ‍্যাম সরি টু মেক ইউ ফিল আনকমফোরটেবল। এবং সামনে আমাদের মন্ত্রণালয় আরো আনকমফোরটেবল কাজে হাত দিবে। ইতিহাস গায়েব করে অথবা এর নির্বাচিত অংশ পেশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইনটেলেকচুয়াল কলোনি বানানোর যে প্রকল্প চলে আসছে বহু বছর, সেটাকে একদল তরুণ গবেষক যাচাই বাছাই করে দেখার কাজে হাত দিয়েছে। ফলে আমাকে আরো আক্রমণ করার জন্য তৈরি হতে অনুরোধ করছি।

৩. সমালোচনা-প‍্যাটার্নের দ্বিতীয় রূপ-‘মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে লালন সেলিব্রেট করে আর বাউল মারে! ভণ্ডামী!’

বুঝলাম না, বাউল কি সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় মারলো? আপনাদের একটু কষ্ট করে রিসার্চ করতে বলবো। তাহলেই দেখতে পাবেন ফকির-বাউলের উপর এই অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এমনকি আওয়ামী লীগের আমলটা ঘেঁটে দেখেন, কত জায়গায় বাউলদের উপর আক্রমণ হয়েছে, চুল কেটে দিয়েছে, বাদ‍্যযন্ত্র ভেঙে ফেলেছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে পালাকার গ্রেফতার হয়েছে!

এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব সেটাই করেছি-লালনকে জাতীয় ভাবে সেলিব্রেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে আমরা তাদের সাথে আছি এবং লালন শাহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক-কবি-দার্শনিকদের একজন। এর পাশাপাশি সারাদেশে আমরা অনেকগুলো সাধুসঙ্গ করেছি। আমরা পরিষ্কার বহুত্বের পক্ষে সাংস্কৃতিকভাবে অবস্থান নিয়েছি। ৫৪ বছরে প্রথমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদ, বৌদ্ধ পূর্নিমা, দুর্গাপূজা সেলিব্রেট করেছি। নববর্ষে সকল জাতিগোষ্ঠিকে নিয়ে একসাথে উৎসব করেছি। আমাদের এই অবস্থানটাই নতুন বাংলাদেশ। যেখানে সকল জনগোষ্ঠীর স্টেইক থাকবে।

এখন আমার মনে যে প্রশ্নটা উদয় হয়েছে: আমি ঠিক বুঝতে পারছি না সরকারের করণীয় কী?

ধরেন কোথাও মেয়েদের একটা ফুটবল খেলা বন্ধ হলো। তখন আমাদের করণীয় কী? আমার তো মনে হয় আমাদের কর্তব্য যারা এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা এবং খেলার সংখ‍্যা বাড়িয়ে দেয়া। নাকি সেই বাড়িয়ে দেয়াটা অন্যায় হবে কারণ অমুক জায়গায় একটা খেলা বন্ধ হয়েছিলো—সুতরাং মেয়েদের খেলাই বন্ধ করে দাও? তো লালন জাতীয়ভাবে পালন করে এবং সরকারী উদ্যোগে সাধুসঙ্গ বাড়ানোটা কেমনে অপরাধ হইলো বুঝতেছি না। নাকি এখানেও সেই কেইস? অন‍্য কারণের রাগ এই কারণে ঢালা? তাহলে একই উত্তর—আপনাকে আনফরচুনেটলি আরো জ্বলতে হবে।

মানিকগঞ্জে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বাউল আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৩মানিকগঞ্জে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে বাউল আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৩
৪. সবচেয়ে তামাশাময় এইটা। বাউলরা আক্রান্ত হইছে? ড্রোন শো করতে বলো ফারুকীকে? আমেনার মা রিকশা থেকে পড়ে গেছে? ফারুকীকে বলো আরো ড্রোন শো করতে।

হাহাহাহা। ভেরি ফানি। ভাইয়েরা ও বোনেরা আমার, টেলিভিশন সিনেমার আমিন চেয়ারম‍্যান হবেন না প্লিজ। আমার বন্ধু ডরোথি ওয়েনার টেলিভিশন দেখে আপ্লুত হয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিল—“মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে ‘ফিয়ার অফ দ‍্য আননোন’। ” তার বিবেচনায় আমিন চেয়ার‍ম‍্যানের কাছে টেলিভিশন ছিলো সেই আননোন থিং।

ডরোথির বাবা ইস্ট জার্মানির। বার্লিন দেয়াল ভাঙার পর ভদ্রলোক তাকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটার সময় দোকানের ডিসপ্লেতে বার্বি দেখলে ডরোথির চোখ হাত দিয়ে ঢেকে দিতো, যাতে মেয়ে নষ্ট না হয়ে যায়! তাঁর জন‍্য বার্বি ছিলো ‘দ‍্য আননোন থিং’। আমাদের কতিপয় বিশুদ্ধবাদীর কাছে ড্রোন শো হচ্ছে সেই আননোন থিং। আজকে আর লম্বা করলাম না। পরে একদিন ড্রোন শো নিয়ে আমার কথা বলবো।

ড্রোনাতংকে ভোগা বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে এইটুকু বলি—মিডিয়া ইজ ইভলবিং এভরিডে। দুনিয়ার বেশিরভাগ বড় ইভেন্টে এখন ড্রোন শো যুক্ত হচ্ছে। আমরা যখন শুরু করি তখনও এতোটা ছিলো না। কয়েকদিন আগে দুনিয়ার অন‍্যতম বৃহৎ যাদুঘর গ্র‍্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম ওপেনিংয়ে বিশেষ আয়োজন ছিলো ড্রোন শো। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের প্রচারনায় ২৬ শহরে সম্ভবত ড্রোন শো করেছে। আর নতুন বছর, জাতীয় দিবস, পূজা, কালচারাল ফেস্টিভ্যাল—এগুলোতে এখন ড্রোন শো ইজ দ‍্য নিউ নর্মাল। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে, আরো হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com