ইনসাফের বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

 

অদিতি করিম : শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল প্রমাণ করে দিয়েছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে বয়স কিংবা অভিজ্ঞতা কোনো বিষয় নয়। মাত্র ৩২ বছরের জীবন। এই ছোট্ট জীবনে হাদি বাংলাদেশ নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তারুণ্যের মধ্যে। উদ্দীপ্ত করেছেন লাখো মানুষকে। একটি আদর্শকে বুকে ধারণ করে, সেই আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে দিতেই তিনি চলে গেলেন। তাঁর আদর্শের নাম ‘ইনসাফের বাংলাদেশ’। হাদি ইনসাফের বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরেছিলেন তাঁর অপূর্ণ জীবনে। ইনসাফের বাংলাদেশ- আদর্শ খুবই সোজাসাপটা এবং পরিষ্কার। ইনসাফের বাংলাদেশ হলো এমন এক বাংলাদেশ যেখানে বৈষম্য থাকবে না। সব মানুষের অধিকার থাকবে। সব চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে ন্যায়বিচার। অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশের নামই হলো ইনসাফের বাংলাদেশ। এমন একটি দেশের স্বপ্নই তো আমরা দেখি সব সময়।

১৯৭১ সালে এরকম একটি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন লাখো মুক্তিকামী মানুষ। লাখো শহীদ ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই। ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য শত শত তরুণ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। ’২৪-এ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নবাজ তরুণদের অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। ৫ আগস্টের বিজয়ের পর হাদি তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র দরকার। আর গণতন্ত্রের জন্য দরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্যই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। আর এ প্রচারণার সময়েই তাঁকে গুলি করা হয়। মৃত্যুর সঙ্গে এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে তিনি চিরবিদায় নেন। ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি। একটি স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটে বড্ড অসময়ে। হাদির সহযোদ্ধারা এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। ১২ ডিসেম্বর হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পরপরই সর্বস্তরের জনগণ হাদির ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা হাদির ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে ১২ ডিসেম্বরের পর থেকেই। এই ক্ষোভ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর। ১৮ ডিসেম্বর রাতভর দেশজুড়ে চলতে থাকে তান্ডব। আগুন দেওয়া হয় দুটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে। ছায়ানট ভবন, উদীচীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক মব সন্ত্রাস ও ভাঙচুরের ঘটনায় জ্বলতে থাকে বাংলাদেশ। জনজীবনে সৃষ্টি করে ব্যাপক আতঙ্ক।

হাদির মৃত্যুর পর এরকম পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। এরকম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি। ইনসাফের বাংলাদেশের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শরিফ ওসমান হাদি বেঁচে থাকলে এ ধরনের নৃশংসতা ও জ্বালাও-পোড়াওকে প্রশ্রয় দিতেন না- তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হঠকারীদের প্রতিহত করতেন। কারণ তিনি জানতেন, এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একমাত্র লাভবান হবে পতিত স্বৈরাচার। গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। তারা আবার ফিরে আসার পথ পাবে।

১৮ ডিসেম্বর রাতে এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে এ ঘটনা নিন্দিত হয়েছে। বিশেষ করে দুটি সংবাদপত্র অফিসে হামলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার সংগঠন।

এর ফলে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচন করা সম্ভব সে প্রশ্নও করছেন অনেকে। দেশে কি একটি অরাজক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে? নির্বাচন বানচালের জন্যই কি এরকম সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে? এ ধরনের নাশকতার পেছনে কি কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে?- এসব নানা প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। শরিফ ওসমান হাদি তো এমন বাংলাদেশ চাননি।

জুলাই আন্দোলনের সাহসী বীর ওসমান হাদির মৃত্যু এ দেশের প্রতিটি মানুষকে ব্যথিত করেছে। দলমত-নির্বিশেষে সব মানুষ কষ্ট পেয়েছে, শোকার্ত হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল তার প্রমাণ। শেষ বিদায়ে এ দেশে খুব কম মানুষই এরকম অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা পান। মানুষের এ ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টি করলে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রতি হবে অসম্মান। তাঁর আত্মা কষ্ট পাবে।

মানুষের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শহীদ হাদি যে ইনসাফের বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছেন সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। তাহলেই হাদির আত্মা শান্তি পাবে। কিন্তু আমরা যদি হানাহানি করি, সহিংসতার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করি তাহলে ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। সন্ত্রাস, সহিংসতা কেবল দেশকে বিভক্ত করবে। বাংলাদেশ হবে এক আতঙ্কপুরী।

হাদির ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে। আর এ নির্বাচন তখনই সুষ্ঠু হবে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। গত বৃহস্পতিবার রাতভর দেশজুড়ে যে সহিংসতা হয়েছে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের ধারণা, আসন্ন নির্বাচন বানচালের জন্য যে ষড়যন্ত্র চলছে সেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে এসব কান্ড ঘটিয়েছে একটি মহল।

কারণ হাদি একজন বীর বিপ্লবী যোদ্ধা। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছেন সারা জীবন। রাতের অন্ধকারে পত্রিকা অফিসে হামলা কখনো হাদির আদর্শ হতে পারে না। এটা বীরদের কাজ নয়, কাপুরুষের কাজ। তাই যারা সত্যিকারের হাদির অনুসারী, যারা হাদির আদর্শকে ধারণ করেন, তারা কখনো দেশে এরকম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন না। কারণ এরকম পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে না। এমনকি নির্বাচন বানচালও হতে পারে। আর সেরকম কিছু হলে ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও তার কাঠামো এখনও সক্রিয়: জোনায়েদ সাকি

» হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক এমপি বাদল

» বড়োদিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি নয় :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» এনসিপির মনোনয়ন কিনলেন জুলাই শহীদের বাবা

» ৯০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: আইন উপদেষ্টা

» ‘শত্রুদের জন্যও ইনসাফ নিশ্চিত করতে হবে’: ড. মির্জা গালিব

» যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার

» প্রথম আলো-ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলায় সরকারের ভেতরের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে: নাহিদ

» ‘হাদির বিচার ছাড়া নির্বাচন নয়, প্রয়োজনে সরকার পতনের আন্দোলন’: ইনকিলাব মঞ্চের কড়া আল্টিমেটাম

» তারেক রহমানকে ভিভিআইপি ঘোষণা করে এসএসএফের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ইনসাফের বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

 

অদিতি করিম : শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল প্রমাণ করে দিয়েছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে বয়স কিংবা অভিজ্ঞতা কোনো বিষয় নয়। মাত্র ৩২ বছরের জীবন। এই ছোট্ট জীবনে হাদি বাংলাদেশ নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তারুণ্যের মধ্যে। উদ্দীপ্ত করেছেন লাখো মানুষকে। একটি আদর্শকে বুকে ধারণ করে, সেই আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে দিতেই তিনি চলে গেলেন। তাঁর আদর্শের নাম ‘ইনসাফের বাংলাদেশ’। হাদি ইনসাফের বাংলাদেশের রূপকল্প তুলে ধরেছিলেন তাঁর অপূর্ণ জীবনে। ইনসাফের বাংলাদেশ- আদর্শ খুবই সোজাসাপটা এবং পরিষ্কার। ইনসাফের বাংলাদেশ হলো এমন এক বাংলাদেশ যেখানে বৈষম্য থাকবে না। সব মানুষের অধিকার থাকবে। সব চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে ন্যায়বিচার। অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশের নামই হলো ইনসাফের বাংলাদেশ। এমন একটি দেশের স্বপ্নই তো আমরা দেখি সব সময়।

১৯৭১ সালে এরকম একটি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন লাখো মুক্তিকামী মানুষ। লাখো শহীদ ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই। ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য শত শত তরুণ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। ’২৪-এ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নবাজ তরুণদের অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। ৫ আগস্টের বিজয়ের পর হাদি তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র দরকার। আর গণতন্ত্রের জন্য দরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্যই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। আর এ প্রচারণার সময়েই তাঁকে গুলি করা হয়। মৃত্যুর সঙ্গে এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে তিনি চিরবিদায় নেন। ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি। একটি স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটে বড্ড অসময়ে। হাদির সহযোদ্ধারা এই চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। ১২ ডিসেম্বর হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার পরপরই সর্বস্তরের জনগণ হাদির ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা হাদির ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখন পর্যন্ত হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে ১২ ডিসেম্বরের পর থেকেই। এই ক্ষোভ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর। ১৮ ডিসেম্বর রাতভর দেশজুড়ে চলতে থাকে তান্ডব। আগুন দেওয়া হয় দুটি সংবাদপত্র কার্যালয়ে। ছায়ানট ভবন, উদীচীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা গোটা দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক মব সন্ত্রাস ও ভাঙচুরের ঘটনায় জ্বলতে থাকে বাংলাদেশ। জনজীবনে সৃষ্টি করে ব্যাপক আতঙ্ক।

হাদির মৃত্যুর পর এরকম পরিস্থিতি কারও কাম্য নয়। এরকম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি। ইনসাফের বাংলাদেশের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শরিফ ওসমান হাদি বেঁচে থাকলে এ ধরনের নৃশংসতা ও জ্বালাও-পোড়াওকে প্রশ্রয় দিতেন না- তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হঠকারীদের প্রতিহত করতেন। কারণ তিনি জানতেন, এ ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একমাত্র লাভবান হবে পতিত স্বৈরাচার। গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। তারা আবার ফিরে আসার পথ পাবে।

১৮ ডিসেম্বর রাতে এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে এ ঘটনা নিন্দিত হয়েছে। বিশেষ করে দুটি সংবাদপত্র অফিসে হামলার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার সংগঠন।

এর ফলে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচন করা সম্ভব সে প্রশ্নও করছেন অনেকে। দেশে কি একটি অরাজক অবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে? নির্বাচন বানচালের জন্যই কি এরকম সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়েছে? এ ধরনের নাশকতার পেছনে কি কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে?- এসব নানা প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। শরিফ ওসমান হাদি তো এমন বাংলাদেশ চাননি।

জুলাই আন্দোলনের সাহসী বীর ওসমান হাদির মৃত্যু এ দেশের প্রতিটি মানুষকে ব্যথিত করেছে। দলমত-নির্বিশেষে সব মানুষ কষ্ট পেয়েছে, শোকার্ত হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর হাদির জানাজায় লাখো মানুষের ঢল তার প্রমাণ। শেষ বিদায়ে এ দেশে খুব কম মানুষই এরকম অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা পান। মানুষের এ ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টি করলে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রতি হবে অসম্মান। তাঁর আত্মা কষ্ট পাবে।

মানুষের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। শহীদ হাদি যে ইনসাফের বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছেন সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। তাহলেই হাদির আত্মা শান্তি পাবে। কিন্তু আমরা যদি হানাহানি করি, সহিংসতার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করি তাহলে ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। সন্ত্রাস, সহিংসতা কেবল দেশকে বিভক্ত করবে। বাংলাদেশ হবে এক আতঙ্কপুরী।

হাদির ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হবে। আর এ নির্বাচন তখনই সুষ্ঠু হবে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। গত বৃহস্পতিবার রাতভর দেশজুড়ে যে সহিংসতা হয়েছে তা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের ধারণা, আসন্ন নির্বাচন বানচালের জন্য যে ষড়যন্ত্র চলছে সেই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে এসব কান্ড ঘটিয়েছে একটি মহল।

কারণ হাদি একজন বীর বিপ্লবী যোদ্ধা। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছেন সারা জীবন। রাতের অন্ধকারে পত্রিকা অফিসে হামলা কখনো হাদির আদর্শ হতে পারে না। এটা বীরদের কাজ নয়, কাপুরুষের কাজ। তাই যারা সত্যিকারের হাদির অনুসারী, যারা হাদির আদর্শকে ধারণ করেন, তারা কখনো দেশে এরকম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন না। কারণ এরকম পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে না। এমনকি নির্বাচন বানচালও হতে পারে। আর সেরকম কিছু হলে ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com