শনিবার শুরু হওয়া দুই দিনের এ বৈঠকে মোট ৪২টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশ নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েও যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে অনুপস্থিত। দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রণ ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্বাগতিক প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র না এলে বৈঠকে প্রেসিডেন্সি হস্তান্তরের সময় প্রতীকীভাবে একটি “ফাঁকা চেয়ার” রাখা হবে। তাঁর ভাষায়, শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ করলেও তাদের অবস্থান বদলায়নি। তবে হস্তান্তর অনুষ্ঠানটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মার্ক ডি ডিলার্ড উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। খবর আল-জাজিরার।
জোহানেসবার্গজুড়ে সপ্তাহজুড়ে চলছে প্রস্তুতি আর সাজসজ্জা। সড়কে ঝুলছে রঙিন ফুল, ব্যানার, জি-২০ বিলবোর্ড। নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনীও রয়েছে প্রস্তুত।
তবু ভেতরে ভেতরে সমালোচনা থামছে না। ব্যয়বহুল আয়োজনের সময় দেশটি অর্থনৈতিক চাপে আছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। নারী অধিকার, জলবায়ু নীতি, বেকারত্বসহ নানা ইস্যুতে কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ভেন্যুর কাছাকাছি এলাকায়।
জি-২০ গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক ফোরাম হিসেবে। ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের পর এর প্রভাব বাড়তে থাকে। এখন এই গ্রুপ বিশ্ব জিডিপির ৮৫ শতাংশ এবং বৈশ্বিক জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই ফোরামে ২০২৩ সাল থেকে যুক্ত হয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নও।
২০২৪ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা জি-২০ প্রেসিডেন্সি পায় এবং ২০২৫ সালের ৩০ নভেম্বর তা আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে।
এই আসরে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্টজ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টার্মার, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, তুরস্ক এর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ উপস্থিত থাকছেন।
যোগ দেবেন আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহামুদ আলি ইউসুফ, ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
ট্রাম্পের বয়কটই অবশ্য আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি আইন নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি দাবি করছেন, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের ওপর “বৈষম্য” এবং “গণহত্যা” চলছে। এসব অভিযোগ দক্ষিণ আফ্রিকা সরাসরি অস্বীকার করে বলছে, “এটা যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি।” ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প দেশটির বৈদেশিক সহায়তা কমিয়ে দেন। পরে আবার ঘোষণা দেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ না হলে মার্কিন কোনও কর্মকর্তা জি-২০ তে অংশ নেবেন না।
এদিকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলেই, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শাইনবামও আসছেন না। তারা প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন।
এবার আফ্রিকা গ্লোবাল সাউথের ইস্যুগুলো সামনে আনতে চায়-বৈশ্বিক বৈষম্য কমানো, জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলা, দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর ঋণসহায়তা, উন্নয়ন অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ নিয়ে বড় শক্তিগুলোর চাপ সামাল দেওয়া।
সম্মেলন শুরুর আগের দিন থেকেই বিক্ষোভ চলছে। নারী অধিকার সংগঠন উইমেন ফর চেঞ্জ “ন্যাশনাল শাটডাউন” কর্মসূচি দেয়। দেশে প্রতিদিন গড়ে তিন নারী সঙ্গীর হাতে নিহত হন—এই পরিসংখ্যান সামনে এনে কালো পোশাকে প্রতীকী প্রতিবাদে ডাকে সংগঠনটি। জলবায়ু আন্দোলনের গ্রুপ ‘দ্য সিটিজেন’ বলছে, জি-২০ হলো ‘ধনীদের সম্মেলন’। আবার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার সংগঠন সলিডারিটি বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ তুলে শহরময় উত্তেজনাপূর্ণ বিলবোর্ড লাগিয়েছে। অভিবাসীবিরোধী সংগঠন অপারেশন দুদুলাও বিক্ষোভ করেছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নিয়ে। সূত্র: আল জাজিরা







