সংকটে আস্থা সশস্ত্র বাহিনীতেই

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একই সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠানের কথাও রয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করতে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। এই নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার মতোই নির্বাচনী অপরাধের জন্য যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নিয়ে ফৌজদারি বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে। এ ছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে অপরিহার্য বিবেচনা করা হচ্ছে।

দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা ও মানবিক সহায়তাসহ আইন ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় দেড় বছর অক্লান্তভাবে এবং পরম সহিষ্ণুতার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন। এই বাস্তবতায় আগামী ২১ নভেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এই দিনে পালিত হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

গত বছর দিবসটি পালিত হয়েছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো। ওই বছরের ৫ আগস্ট এবং তার পরে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকার বিষয়টি সচেতন মহল স্মরণ করে। তাদের মূল্যায়ন ছিল, সেনাবাহিনী প্রধান নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের এবং তার সহযোগী অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের ক্রান্তিকালে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে যেভাবে দেশ ও জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়েছিলেন, তাতে সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাপ্রধান গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেছেন দেশ ও জাতিকে।

গত বছর ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও একই মূল্যায়ন করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’

এবারও সেনাবাহিনীর প্রতি সেই আস্থা ও ভরসা রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছে দেশবাসী; যার ফলে নির্বাচিত সরকার গঠিত হবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা আসবে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে ন্যাশনাল পাওয়ার যাদের বলা হয়, তার অন্যতম হচ্ছে সামরিক বাহিনী। একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর শক্তি, মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত। সামরিক শক্তি ছাড়া কোনো দেশকে এখন আর তেমনভাবে গণনায় নেওয়া হয় না। ‘সশস্ত্র বাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক’-এই বিশ্বাস অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের জনগণও লালন করে আসছে। কিন্তু দেশে এই বিশ্বাস ভাঙার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে দুর্বল করাই ওই মহলটির লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়।

মেজর জেনারেল (অব.) ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী এমনটাই মনে করেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণ পেয়েছেন অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তাদের সবার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। কিন্তু হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুুনিরের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প লাঞ্চও করেছেন। এটি কোনো ব্যক্তিকে নয়, মিলিটারি পাওয়ারকে সম্মান জানানো। এটি একটি স্বীকৃতি। কারণ পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।

‘প্রশ্ন আসতে পারে, একটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে সামরিক শক্তির জবাবদিহি নিয়ে। অবশ্যই জবাবদিহি থাকবে। কারণ জনগণের টাকায় সামরিক বাহিনীকে লালন-পালন করা হয়, সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়। জনগণের সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু, সেহেতু কোন খাতে কিভাবে ব্যয় হচ্ছে তার সবটা প্রকাশযোগ্য না।’

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, দেশের উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। এ অবস্থায় দেশে এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা, এ বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি।’

সেনাপ্রধান যা বলে আসছেন : গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, দেশ গঠনে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আসছেন। সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না-এটা আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার।’

গত দেড় বছরে দেশের নানা সংকটে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার উদাহরণ অনেক। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সিএমএইচে পাঁচ হাজার ৩৮৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২৭ জন এখনো ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।

কর্তব্য পালনে সেনাবাহিনীর সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের সর্বশেষ নজির গত ১৭ নভেম্বর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ। এ ধরনের বিক্ষোভ ও মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণের সময় সেনা সদস্যরা আহত হলেও কর্তব্য পালনে বিচলিত হননি। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে আইএসপিআর আগেই জানিয়ে রেখেছে, সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুযায়ী মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত। গত ২৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় মব ভায়োলেন্সের ঘটনা সম্পর্কে আইএসপিআর এই বার্তা জানায়। এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকনুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী প্রায় দেড় বছর ধরে মাঠে আছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের সামরিক প্রশিক্ষণের বাইরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকা নজিরবিহীন। প্রশিক্ষণের জন্য মাঠ থেকে অর্ধেক সেনা প্রত্যাহার করারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সরকার তা চায়নি। গত সোমবার আমরা দেখেছি, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে কী ধৈর্যের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের উসকানোর অনেক অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা সহিষ্ণুতার সঙ্গে নিজেদের কর্তব্যে অবিচল থেকেছেন।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কুচক্রী মহল সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে, আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে তৎপর। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণাত্মক কথা না বলার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, ‘একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারো কারো। কিন্তু কী কারণে, আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি।’

সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, ‘আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যারা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে, অফকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ার ফোর্স। আমাদের সাহায্য করেন; আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দেন; আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

গত ৫ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীকে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই আমি দেশবাসীকে নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনাবাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা রয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ আরো বেশি। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব অপপ্রচার পেছনে ফেলে চলুন ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেনাবাহিনী তা যথাযথভাবে পালন করেছে, চিরদিন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কিছু করার প্রয়োজন আছে বলেও আমরা মনে করি না। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, আমরা কী কী করি তা সেখানে উল্লেখ থাকে। আসলে মিথ্যাকে বিতাড়িত করার জন্য সত্যই যথেষ্ট। আমরা সত্য দিয়ে এবং আমাদের কাজের মাধ্যমেই সেগুলো প্রমাণ করতে চাই।’

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, ‘পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই-সব সংস্থাই অতীতে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তারা কিছু খারাপ কাজের সঙ্গে অসংখ্য ভালো কাজও করেছে। আজ দেশের যে স্থিতিশীলতা, দেশটাকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে-এই সশস্ত্র বাহিনীর বহু সদস্য, সিভিলিয়ান সবাই মিলে, অসামরিক-সামরিক সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে ইফেক্টিভ (কার্যকর) রেখেছে। সে জন্য আজ এত দিন ধরে একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।’

অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতে হবে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘না হলে সেই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা সেটা বন্ধ করতে চাই চিরতরে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজটা করব, এসব অর্গানাইজেশনকে যেন আন্ডারমাইন করা না হয়। আজ পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন না, একটা বিশাল বড় কারণ হচ্ছে-অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড (আতঙ্কিত)। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের বিরুদ্ধে গুম-খুনসহ বিভিন্ন দোষারোপের তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত চলবে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনভাবে কাজটা করতে হবে, যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন্ড (অবমূল্যায়ন) না হয়। এই অর্গানাইজেশনগুলোকে আন্ডারমাইন করে যদি আপনারা মনে করেন দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, এটা হবে না। সেটা সম্ভব না, আমি আপনাদের স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি।’

অনেকে মনে করেন, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআইয়ে দায়িত্ব পালনের সময় যেসব সেনা কর্মকর্তা গুমের মতো অপরাধে জড়িয়েছিলেন, তাদের বিচারের পক্ষে আগে থেকেই সেনাপ্রধানের অবস্থান ছিল। কিন্তু সেই অপরাধের দায় যেন সেনাবাহিনীর ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করা না হয়, সে বিষয়টিও তিনি দেশের স্বার্থে সেদিনই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, ‘সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনী সংবিধান স্বীকৃত দেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল-এই ধারণার সঙ্গে আমিও একমত। তার পরও অন্য সংস্থায় দায়িত্ব পালনের সময় অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর ইমেজ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা হয়েছে। এই অপচেষ্টার বিষয়ে সরকারের যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করি, তা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’  সূত্র : কালের কণ্ঠ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আওয়ামী লীগের কোনো নেতা স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না : রাশেদ খান

» তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ

» ফেসবুকে তারেক রহমানকে নিয়ে ‘কটূক্তি’র অভিযোগে মামলার আবেদন খারিজ

» হাসিনার বিচার করে সারজিস আলমকে খুশি করেছেন, দেশবাসী কি গাঙ্গের জলে ভেসে আসছে?: প্রশ্ন মাসুদ কামালের

» পাসপোর্ট ছাড়াও যেভাবে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান

» এনসিপির মনোনয়ন নিচ্ছেন রিকশা চালক সুজন

» পরিচয় গোপন করে চ্যাটের সুবিধা আনছে হোয়াটসঅ্যাপে

» রান্নার সময় কোন ভুল হতে পারে ক্যানসারের কারণ?

» টাইপ ২ ডায়াবেটিস এক দিনে হয় না, নিঃশব্দেই বাড়ে ঝুঁকি

» তারেক রহমান : ভিশনারি রাজনীতিক

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সংকটে আস্থা সশস্ত্র বাহিনীতেই

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একই সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠানের কথাও রয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করতে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন। এই নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

একজন পুলিশ কর্মকর্তার মতোই নির্বাচনী অপরাধের জন্য যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ও সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদের সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নিয়ে ফৌজদারি বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীকে। এ ছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে অপরিহার্য বিবেচনা করা হচ্ছে।

দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতা ও মানবিক সহায়তাসহ আইন ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় দেড় বছর অক্লান্তভাবে এবং পরম সহিষ্ণুতার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন। এই বাস্তবতায় আগামী ২১ নভেম্বর পালিত হতে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদানকে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর এই দিনে পালিত হয় সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

গত বছর দিবসটি পালিত হয়েছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো। ওই বছরের ৫ আগস্ট এবং তার পরে সেনাবাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে সশস্ত্র বাহিনীর জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকার বিষয়টি সচেতন মহল স্মরণ করে। তাদের মূল্যায়ন ছিল, সেনাবাহিনী প্রধান নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রধানদের এবং তার সহযোগী অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের ক্রান্তিকালে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে যেভাবে দেশ ও জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়েছিলেন, তাতে সশস্ত্র বাহিনী আবারও দেশের জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাপ্রধান গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেছেন দেশ ও জাতিকে।

গত বছর ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও একই মূল্যায়ন করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’

এবারও সেনাবাহিনীর প্রতি সেই আস্থা ও ভরসা রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছে দেশবাসী; যার ফলে নির্বাচিত সরকার গঠিত হবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা আসবে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে ন্যাশনাল পাওয়ার যাদের বলা হয়, তার অন্যতম হচ্ছে সামরিক বাহিনী। একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর শক্তি, মর্যাদা রাষ্ট্রের মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কিত। সামরিক শক্তি ছাড়া কোনো দেশকে এখন আর তেমনভাবে গণনায় নেওয়া হয় না। ‘সশস্ত্র বাহিনী একটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক’-এই বিশ্বাস অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের জনগণও লালন করে আসছে। কিন্তু দেশে এই বিশ্বাস ভাঙার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে দুর্বল করাই ওই মহলটির লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়।

মেজর জেনারেল (অব.) ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী এমনটাই মনে করেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণ পেয়েছেন অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তাদের সবার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। কিন্তু হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুুনিরের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প লাঞ্চও করেছেন। এটি কোনো ব্যক্তিকে নয়, মিলিটারি পাওয়ারকে সম্মান জানানো। এটি একটি স্বীকৃতি। কারণ পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তির অধিকারী এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।

‘প্রশ্ন আসতে পারে, একটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে সামরিক শক্তির জবাবদিহি নিয়ে। অবশ্যই জবাবদিহি থাকবে। কারণ জনগণের টাকায় সামরিক বাহিনীকে লালন-পালন করা হয়, সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়। জনগণের সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে বিষয়টি যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু, সেহেতু কোন খাতে কিভাবে ব্যয় হচ্ছে তার সবটা প্রকাশযোগ্য না।’

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। কারণ তিনি মনে করতেন, দেশের উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যবস্থাও রাখতে হবে। এ অবস্থায় দেশে এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা, এ বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি।’

সেনাপ্রধান যা বলে আসছেন : গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, দেশ গঠনে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আসছেন। সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না-এটা আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার।’

গত দেড় বছরে দেশের নানা সংকটে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার উদাহরণ অনেক। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সিএমএইচে পাঁচ হাজার ৩৮৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২৭ জন এখনো ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।

কর্তব্য পালনে সেনাবাহিনীর সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের সর্বশেষ নজির গত ১৭ নভেম্বর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ। এ ধরনের বিক্ষোভ ও মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণের সময় সেনা সদস্যরা আহত হলেও কর্তব্য পালনে বিচলিত হননি। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে আইএসপিআর আগেই জানিয়ে রেখেছে, সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুযায়ী মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত। গত ২৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় মব ভায়োলেন্সের ঘটনা সম্পর্কে আইএসপিআর এই বার্তা জানায়। এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকনুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী প্রায় দেড় বছর ধরে মাঠে আছে। এত দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের সামরিক প্রশিক্ষণের বাইরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকা নজিরবিহীন। প্রশিক্ষণের জন্য মাঠ থেকে অর্ধেক সেনা প্রত্যাহার করারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সরকার তা চায়নি। গত সোমবার আমরা দেখেছি, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে কী ধৈর্যের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের উসকানোর অনেক অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তারা সহিষ্ণুতার সঙ্গে নিজেদের কর্তব্যে অবিচল থেকেছেন।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কুচক্রী মহল সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে, আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে তৎপর। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণাত্মক কথা না বলার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, ‘একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারো কারো। কিন্তু কী কারণে, আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি।’

সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, ‘আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যারা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে, অফকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ার ফোর্স। আমাদের সাহায্য করেন; আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দেন; আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

গত ৫ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীকে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই আমি দেশবাসীকে নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান এবং সেনাবাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা রয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ আরো বেশি। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ থাকবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব অপপ্রচার পেছনে ফেলে চলুন ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’

সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেনাবাহিনী তা যথাযথভাবে পালন করেছে, চিরদিন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কিছু করার প্রয়োজন আছে বলেও আমরা মনে করি না। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, আমরা কী কী করি তা সেখানে উল্লেখ থাকে। আসলে মিথ্যাকে বিতাড়িত করার জন্য সত্যই যথেষ্ট। আমরা সত্য দিয়ে এবং আমাদের কাজের মাধ্যমেই সেগুলো প্রমাণ করতে চাই।’

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান আরও বলেছিলেন, ‘পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই-সব সংস্থাই অতীতে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তারা কিছু খারাপ কাজের সঙ্গে অসংখ্য ভালো কাজও করেছে। আজ দেশের যে স্থিতিশীলতা, দেশটাকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে-এই সশস্ত্র বাহিনীর বহু সদস্য, সিভিলিয়ান সবাই মিলে, অসামরিক-সামরিক সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে ইফেক্টিভ (কার্যকর) রেখেছে। সে জন্য আজ এত দিন ধরে একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।’

অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতে হবে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘না হলে সেই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা সেটা বন্ধ করতে চাই চিরতরে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজটা করব, এসব অর্গানাইজেশনকে যেন আন্ডারমাইন করা না হয়। আজ পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন না, একটা বিশাল বড় কারণ হচ্ছে-অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড (আতঙ্কিত)। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের বিরুদ্ধে গুম-খুনসহ বিভিন্ন দোষারোপের তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত চলবে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনভাবে কাজটা করতে হবে, যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন্ড (অবমূল্যায়ন) না হয়। এই অর্গানাইজেশনগুলোকে আন্ডারমাইন করে যদি আপনারা মনে করেন দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, এটা হবে না। সেটা সম্ভব না, আমি আপনাদের স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি।’

অনেকে মনে করেন, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআইয়ে দায়িত্ব পালনের সময় যেসব সেনা কর্মকর্তা গুমের মতো অপরাধে জড়িয়েছিলেন, তাদের বিচারের পক্ষে আগে থেকেই সেনাপ্রধানের অবস্থান ছিল। কিন্তু সেই অপরাধের দায় যেন সেনাবাহিনীর ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করা না হয়, সে বিষয়টিও তিনি দেশের স্বার্থে সেদিনই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ড. নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, ‘সেনাপ্রধান এবং সেনাবাহিনী সংবিধান স্বীকৃত দেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল-এই ধারণার সঙ্গে আমিও একমত। তার পরও অন্য সংস্থায় দায়িত্ব পালনের সময় অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর ইমেজ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা হয়েছে। এই অপচেষ্টার বিষয়ে সরকারের যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করি, তা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’  সূত্র : কালের কণ্ঠ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com