সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : নয়াদিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে সোমবারের সন্ধ্যা ছিল অন্যান্য দিনের মতোই কর্মব্যস্ত ছিল। কিন্তু হঠাৎই এক বিকট বিস্ফোরণের শব্দে রাস্তার পরিচিত কোলাহল পরিণত হয় বিষাদে।
এই বিস্ফোরণে অন্তত ১২ নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আশেপাশের বেশ কয়েকটি গাড়ি প্রায় গলে যায়, আর কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও সেই শব্দ শোনা গিয়েছিল।
পুলিশ এখনও বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছে। তবে দিল্লির অন্যতম সুরক্ষিত ও জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনা ঘটায় মানুষ গভীরভাবে হতবাক।
বিস্ফোরণের স্থানটির একদিকে চাঁদনি চক—একটি ব্যস্ত বাজার এবং পোশাকের কেন্দ্র, যা এই বিয়ের মরসুমে অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি জমজমাট। অন্যদিকে রয়েছে সপ্তদশ শতকের রেড ফোর্ট, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। এই দুইয়ের মাঝের সড়কেই ঘটেছে মর্মান্তিক বিস্ফোরণটি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
বিস্ফোরণস্থল থেকে মাত্র ২০০ মিটারেরও কম দূরত্বে বসবাসকারী মহম্মদ হাফিজ জানান, তার ঘর কেঁপে উঠেছিল এবং তিনি ভূমিকম্প ভেবে অন্যদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
রাস্তায় তিনি যা দেখেন, তাতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। লোকেরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়াচ্ছিল, গাড়িতে আগুন জ্বলছিল এবং রাস্তায় মৃতদেহ পড়েছিল। স্থানীয় কিছু মানুষ আহতদের সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন।
হাফিজ বলেন, চারিদিকে শুধু রক্ত আর রক্ত। লোকেরা স্তম্ভিত। দৃশ্যটি খুব ভয়ঙ্কর, আমি দেহের অংশও দেখতে পাচ্ছিলাম।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গেই আতঙ্ক ও ভীতি সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ উচ্চ সতর্কতা জারি করে এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিও দ্রুত একই পদক্ষেপ নেয়।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমরা যখন প্রতিবেশী উপশহর নয়ডা থেকে দিল্লিতে প্রবেশ করি, তখন সীমান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। যেখানে পুলিশকর্মীরা এক এক করে গাড়ি তল্লাশি করছিলেন। গাড়ির আরোহী এবং পুলিশকর্মী; সবাইকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল, কারণ এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এমন ঘটনা তাদের শহরে এই প্রথম ঘটল। সীমান্ত পার হয়ে আমরা লোক নায়ক হাসপাতালের দিকে যাই, যেখানে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, হাসপাতালের বাইরে পুলিশি ঘেরাটোপের পেছনে বিশাল ভিড়। লোকেরা উত্তর খুঁজছে, আর সহকর্মী সাংবাদিকরা বিস্ফোরণের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে অনুমান করছেন।
উপস্থিত জনতা ছিল হতবাক এবং ভীত। হাসপাতালের কাছে একটি চায়ের দোকানে কর্মরত রাজেশ কুমার বলেন, তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন রাজধানী দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর। যদিও বিস্ফোরণে তিনি কেঁপে উঠেছেন, তবুও তিনি বিশ্বাস করেন নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত এর কারণ খুঁজে বের করবে। তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশ থেকে আমার পরিবার আমাকে চলে যেতে বলেছে, তারা সহজেই আতঙ্কিত হয়। আমি কিছুটা চিন্তিত এবং হতবাক, তবে আমি মনে করি না দিল্লি হঠাৎ করে অরক্ষিত হয়ে গেছে।
ভিড়ের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন যারা নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মহম্মদ আজগর, তার ভাই বিস্ফোরণ স্থলের কাছাকাছি ছিলেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের পর থেকে আমার ভাই নিখোঁজ। তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা লাল কেল্লা, চাঁদনি চক, সব জায়গায় খুঁজেছি কিন্তু তাকে পাচ্ছি না।
আজগর জানান, তার ভাই একটি ইলেকট্রিক রিকশা চালাতেন। পুলিশ গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করেছে, ঠিক আছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু অন্তত আমাদের ভাইকে খুঁজে পেতে সাহায্য করুন। আমি শুধু একটা খবর চাই, ভালো হোক বা খারাপ। হাসপাতাল থেকে আমরা বিস্ফোরণস্থলে যাই। সাধারণত গভীর রাত পর্যন্ত জনাকীর্ণ থাকা এই রাস্তাগুলি ফাঁকা দেখে অবাক লাগে। সেখানে কেবল নিরাপত্তা কর্মী বা সাংবাদিকরাই ছিলেন। কর্মকর্তারা বিধিনিষেধ শিথিল করায় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলের আরও কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন।
রাম সিং, যিনি এলাকায় গুদাম থেকে দোকানে মালামাল ফেরি করার জন্য একটি ছোট গাড়ি চালান, তিনি তার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, আমি দৈনিক রোজগার করি এবং আমার পরিবারকে কীভাবে খাওয়াবো তা নিয়ে চিন্তিত। আমি আশা করি দ্রুত নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরে আসবে। আমি আশা করি পুলিশ দ্রুত আস্থা ফেরাতে সক্ষম হবে। সূত্র: বিবিসি







