অনুবাদঃ ড.নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া (মূল: কাহলিল জিবরান):
একটি শিশু-সন্তানকে বুকে জড়িয়ে যে মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলো,
সে বললো, আপনি আমাদেরকে সন্তান সম্বন্ধে বলুন।
তখন তিনি (দ্য প্রফেট) বললেনঃ
তোমার সন্তানেরা আদতে তোমার সন্তান না।
তারা মহাজীবনের আকুল আকাঙ্ক্ষার পুত্র-কন্যা।
তারা তোমাদের মাধ্যমে আসে বটে,
কিন্তু তোমাদের থেকে আসে না।
আর তোমাদের সঙ্গে থাকলেও তোমরা তাদের মালিক না।
তোমরা তাদেরকে তোমাদের ভালোবাসা দিতে পারো,
তবে তোমাদের ভাবনা-ভঙ্গি না।
কারণ তাদের নিজস্ব ভাবনা আছে।
তাদের শরীরকে তোমরা ঘরে রাখতে পারো,
তবে তাদের আত্মাকে নয়,
কারণ তাদের আত্মারা বসত করে ভবিষ্যতের ঘরে,
যে ঘরের খোঁজ তোমরা স্বপ্নেও পাও না।
তোমরা তাদের মতো হবার সাধনা করতে পারো,
তবে তাদেরকে তোমাদের মতো বানাতে চেয়ো না।
কারণ জীবন পশ্চাৎমুখী হয়ে চলে না,
ফেলে আসা দিনের জন্য অপেক্ষাও করে না।
যে ধনুক থেকে তোমার সন্তানদের জিয়ন্ত তীরের মতো
সামনের দিকে ছোঁড়া হয়,
তোমরা হলে সেই ধনুক।
পরম ধনুর্ধর অসীমে নিশানা স্থির করে তাঁর অপার শক্তিতে তোমাদের আনত করে,
যাতে তোমরা তীরগুলোকে অতি দূরান্তে ক্ষিপ্রগতিতে নিক্ষেপ করতে পারো।
সেই ধনুর্ধরের হাতে তোমাদের প্রণতি হোক পরমানন্দের;
কারণ সুদূরগামী তীর যেমন তাঁর পছন্দ, তেমনি তাঁর পছন্দ একটা সুস্থির ধনুক।
–
[ কাহলিল জিবরান (১৮৮৩-১৯৩১-পূর্বনাম জুবরান খলিল জুবরান), লেবানিজ-আমেরিকান কবি, চিত্রশিল্পী, লেখক, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ। ইংরেজিভাষী বিশ্বে তিনি মূলত: তার ১৯২৩ সালে প্রকাশিত ২৬টি অতিন্দ্রীয়বাদী গদ্য-কবিতার সংকলন বই ‘দ্য প্রফেট’ র কারণে সুপরিচিত। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ও চীনা কবি লাওজির পর জিবরান তৃতীয় বহুল বিক্রিত বইয়ের কবি। ‘দ্য প্রফেট’ এ যাবত মোট ১০০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
‘দ্য প্রোফেট’ বইটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র আল-মুস্তফা; যিনি বিদেশী আরফালিস শহরে ১২ বছর ধরে বসবাস করেছেন এবং শেষতক একটি জাহাজ তাকে তার দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। বিদায়লগ্নে তিনি একদল মানুষের উদ্দেশ্যে তাদের অনুরোধে জীবন এবং মানুষ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
বইটি ভালোবাসা, বিয়ে, সন্তান, দান, আহার্য, কাজ, আনন্দ ও দুঃখ, আবাস, পরিধেয়, ক্রয়-বিক্রয়, অপরাধ ও শাস্তি, আইন, স্বাধীনতা, কারণ এবং আবেগ, ব্যথা, আত্মদর্শন, শিক্ষাদান, বন্ধুত্ব, কথা, সময়, ভালো-মন্দ, প্রার্থনা, আনন্দ, সৌন্দর্য, ধর্ম, এবং মৃত্যু অনুচ্ছেদে বিভক্ত।প্রত্যেক অনুচ্ছেদে আছে কাব্যিক ঢঙে জীবনের নানা দিকের দার্শনিক উপস্থাপন। একটি শিশু-সন্তানকে কোলে নিয়ে যে মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলো, সে নারর প্রশ্নের মাধ্যমেই মূলত: “ সন্তান” শিকোণানের কবিতাটির সূচনা। একে একে ভালোবাসা, মা, কবি, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আইনজীবি, পান্থশালার মালিকসহ নগরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে। প্রতিক্ষেত্রেই আল-মুস্তফার সস্নেহ উত্তর গভীর হৃদয়গ্রাহী যা জীবরান’র নিজস্ব জীবন দর্শন। বইতে রয়েছে জিবরানের নিজের আঁকা ১২ টি চিত্রকর্ম। অনূদিত কবিতাটি তার ‘The Prophet’ কাব্যের CHILDREN শিরোনামের কবিতার অনুবাদ।