মুখোমুখি দুই মুখ

নুসরাত-ই-জাহান: তার নাম অথৈ। আর আমি শাওন। সব ভালোবাসার গল্পে কেউ না কেউ একজন বিপক্ষ থাকেই, আমাদের গল্পেও তাই। সবই ঠিকঠাক চলছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও তাকে। তো হঠাৎ একদিন তার বাবা আমাদের একসঙ্গে দেখলেন। এরপর তার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির দিকে নিয়ে চলে গেল।

 

মূলত এরপরই আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হয়। অথৈর ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমাকে ফোন করে কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় তার যাতনার কথা। কলেজে যাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে যায় তার। আমাদের দেখা হওয়া, একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে হাঁটা বন্ধ হয়ে পড়ে।

ফোনের ওপ্রান্ত থেকে তার কান্না শুনি। তাকে আমি কিছু বলতে পারি না। সান্তনা দেবো তেমন ভাষাও আমার জানা নেই। আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই এভাবে বাধা আর বিপত্তির মধ্যে পড়বো সেটা কখনও ভাবনায়ও আসেনি।

তারপরও সে সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতো। একদিন তার এক আত্মীয় আমাদের একসঙ্গে দেখে অথৈর বাবার কাছে বলে দেয়। বাসায় ফেরার পর মা অথৈকে চড় মারে। সে আমাকে ফোন করে বলে- তার কিছু ভালো লাগে না আমাকে ছাড়া। আমাকে কিছু একটা করতে বলে।

একটা অসহায়ত্ব আমাকে ঘিরে রাখে। আগেরবারের মতো এবারও আমি তাকে কিছু বলতে পারি না। তার কথা শুনে কেবল চুপ মেরে থাকি। যদিও আমি ভাবতে লাগলাম কি করা যায়!

একদিন শুনলাম অথৈর বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মা-বাবা। ছেলেপক্ষ দেখতে আসে আর অথৈ ‘না’ করে দেয়। এভাবে ছেলেপক্ষকে মানা করার পর তার বাবা-মা তাকে বকতে থাকেন। এদিকে আমি আমি বেকার একটা ছেলে। অথৈর বাসায় প্রস্তাবও দিতে পারছি না। বেকার ছেলের সঙ্গে তার মা-বাবা কি মেয়েকে বিয়ে দেবে!

একদিন হুট করে অথৈ জানালো সে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাকে বারণ করলাম। তবুও সে একরোখা, বলল- সে আমাকে পালিয়েই বিয়ে করবে। বলল- আমার মা-বাবা যদি ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেয় তাহলে অসুবিধা কোথায়? আসলেই আমার মা-বাবা আমার পছন্দকে গুরুত্ব দেবেন। তাকে বললাম- তার মতো একজনকে ছেলের বউ হিসেবে দেখলে বাবা-মা খুশিই হবেন।

এরপর একদিন অথৈ বাসা থেকে পালিয়ে চলে আসে। আমরা কাজি অফিস যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তায় তার এক বড় বোন আমাদের দেখে ফেললে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো যে, ওই আপু অথৈর বাবা-মাকে আমাদের দেখার খবর না জানিয়ে উল্টো সব শুনে আমাদের বিয়ের পক্ষে অবস্থান নেন।

আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অথৈ বউ হয়ে খুশিতে মনে মনে সাজাতে থাকে তার স্বপ্নের সংসার। কিন্তু আমাদের ভালোবাসার সংসার গোছানো হলো না আর। আমরা দুজন দুজনকে পেয়েও যেন আর পেলাম না!

কাজি অফিস থেকে বের হয়ে ওই বড় বোনসহ আমরা একত্রে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই একটি বড় ট্রাক এসে আমাদের আঘাত করে। অথৈ একটু দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। ওই বড় বোনও আহত প্রায়…! আর আমি ট্রাকের নিচে। মানুষের ভিড় জমে যায়। আমাদের হাসপাতাল নেওয়া হয়।

হাসপাতালে ছুটে আসেন অথৈর বাবা-মা। অথৈ আর তার ওই বোন মোটামুটি সুস্থ আছে। আমার পা দুটো ভেঙে যাওয়ায় অকেজো শরীর নিয়ে পড়ে থাকি হাসপাতালে। অথৈ সুস্থ হওয়ার পর তাকে জোরজবরদস্তি করেই বাড়ি নিয়ে যায় তার মা-বাবা। দিন যায় দিন আসে। আমার শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

একদিন শুনলাম অথৈর বিয়ে ঠিক হয়েছে। অথচ ওর মা-বাবা জানেই না যে বিয়ে করে ফেরার পথেই দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম আমরা। পাত্রপক্ষ দেখতে এলে অথৈ বলেই দেয় আমার সঙ্গে তার বিয়ের কথা। তার বাবা একথা শুনে সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার বাবা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন।

অথৈর সঙ্গে আমার বিয়ে মেনে নেন না তার বাবা-মা। ওর মা তাকে বাবার হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করে। আমার মা এসব কথা শুনে এসে পরে আমাকে জানায়। আমি মাকে দিয়ে অথৈকে খবর পাঠায় আমার মতো পঙ্গু হতে যাওয়া একটা মানুষকে সে যেন একেবারেই ভুলে যায়। তাছাড়া ওর বাবার কিছু হয়ে গেল আমি নিজেকে ক্ষমাও করতে পারবো না। আমার মা অথৈকে সেকথা শোনানোর পর সে অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক কান্নাকাটি করে।

এরইমধ্যে আমার পা দুটো কেটে ফেলা হয়েছে। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করছি। এলাকা ছেড়ে বাবা-মাকে নিয়ে পাশের এলাকায় চলে আসি। অথৈর বাবাও সুস্থ হয়ে গেছেন। অথৈ একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে। একপর্যায়ে পরিবারের পছন্দের একজনকে বিয়ে করে নিল অথৈ। একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়ে গেল।

 

এদিকে আমি একজন আর্টিস্ট হয়ে গেলাম। আমার একটি দোকানও আছে। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে শিল্পী হবো। অথৈর মেয়েও আর্ট খুব পছন্দ করে। একদিন অথৈ মেয়েকে নিয়ে আমার দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। মেয়ে তাকে বলতে থাকে- মা এই দোকান থেকে সুন্দর দৃশ্যগুলো নেবো। মেয়েকে নিয়ে অথৈ আমার দোকানে ঢোকার পর থ মেরে যায়। বহুবছর পর দুজন দুজনের মুখোমুখি হই…।   সূএ:ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শহীদ ডা. মিলন দিবস আজ

» গরু চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত যুবক নিহত

» স্ত্রী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন

» হাইড করা যাবে ইনস্টাগ্রাম পোস্টের লাইক শেয়ার

» বিরহের বর্ণমালা

» ‘বাংলাদেশ-মালদ্বীপের মধ্যে শিগগির সরাসরি জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ’

» ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন : ফারুক

» লেবাননে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানাল ইরান

» ৯ দফা দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ

» সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারী নিহত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মুখোমুখি দুই মুখ

নুসরাত-ই-জাহান: তার নাম অথৈ। আর আমি শাওন। সব ভালোবাসার গল্পে কেউ না কেউ একজন বিপক্ষ থাকেই, আমাদের গল্পেও তাই। সবই ঠিকঠাক চলছিল। সে আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও তাকে। তো হঠাৎ একদিন তার বাবা আমাদের একসঙ্গে দেখলেন। এরপর তার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির দিকে নিয়ে চলে গেল।

 

মূলত এরপরই আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হয়। অথৈর ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমাকে ফোন করে কাঁদো কাঁদো গলায় জানায় তার যাতনার কথা। কলেজে যাওয়াও প্রায় বন্ধ হয়ে যায় তার। আমাদের দেখা হওয়া, একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে হাঁটা বন্ধ হয়ে পড়ে।

ফোনের ওপ্রান্ত থেকে তার কান্না শুনি। তাকে আমি কিছু বলতে পারি না। সান্তনা দেবো তেমন ভাষাও আমার জানা নেই। আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই এভাবে বাধা আর বিপত্তির মধ্যে পড়বো সেটা কখনও ভাবনায়ও আসেনি।

তারপরও সে সুযোগ পেলেই আমার সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতো। একদিন তার এক আত্মীয় আমাদের একসঙ্গে দেখে অথৈর বাবার কাছে বলে দেয়। বাসায় ফেরার পর মা অথৈকে চড় মারে। সে আমাকে ফোন করে বলে- তার কিছু ভালো লাগে না আমাকে ছাড়া। আমাকে কিছু একটা করতে বলে।

একটা অসহায়ত্ব আমাকে ঘিরে রাখে। আগেরবারের মতো এবারও আমি তাকে কিছু বলতে পারি না। তার কথা শুনে কেবল চুপ মেরে থাকি। যদিও আমি ভাবতে লাগলাম কি করা যায়!

একদিন শুনলাম অথৈর বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মা-বাবা। ছেলেপক্ষ দেখতে আসে আর অথৈ ‘না’ করে দেয়। এভাবে ছেলেপক্ষকে মানা করার পর তার বাবা-মা তাকে বকতে থাকেন। এদিকে আমি আমি বেকার একটা ছেলে। অথৈর বাসায় প্রস্তাবও দিতে পারছি না। বেকার ছেলের সঙ্গে তার মা-বাবা কি মেয়েকে বিয়ে দেবে!

একদিন হুট করে অথৈ জানালো সে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি তাকে বারণ করলাম। তবুও সে একরোখা, বলল- সে আমাকে পালিয়েই বিয়ে করবে। বলল- আমার মা-বাবা যদি ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেয় তাহলে অসুবিধা কোথায়? আসলেই আমার মা-বাবা আমার পছন্দকে গুরুত্ব দেবেন। তাকে বললাম- তার মতো একজনকে ছেলের বউ হিসেবে দেখলে বাবা-মা খুশিই হবেন।

এরপর একদিন অথৈ বাসা থেকে পালিয়ে চলে আসে। আমরা কাজি অফিস যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তায় তার এক বড় বোন আমাদের দেখে ফেললে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো যে, ওই আপু অথৈর বাবা-মাকে আমাদের দেখার খবর না জানিয়ে উল্টো সব শুনে আমাদের বিয়ের পক্ষে অবস্থান নেন।

আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অথৈ বউ হয়ে খুশিতে মনে মনে সাজাতে থাকে তার স্বপ্নের সংসার। কিন্তু আমাদের ভালোবাসার সংসার গোছানো হলো না আর। আমরা দুজন দুজনকে পেয়েও যেন আর পেলাম না!

কাজি অফিস থেকে বের হয়ে ওই বড় বোনসহ আমরা একত্রে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখনই একটি বড় ট্রাক এসে আমাদের আঘাত করে। অথৈ একটু দূরে ছিটকে গিয়ে পড়ে। ওই বড় বোনও আহত প্রায়…! আর আমি ট্রাকের নিচে। মানুষের ভিড় জমে যায়। আমাদের হাসপাতাল নেওয়া হয়।

হাসপাতালে ছুটে আসেন অথৈর বাবা-মা। অথৈ আর তার ওই বোন মোটামুটি সুস্থ আছে। আমার পা দুটো ভেঙে যাওয়ায় অকেজো শরীর নিয়ে পড়ে থাকি হাসপাতালে। অথৈ সুস্থ হওয়ার পর তাকে জোরজবরদস্তি করেই বাড়ি নিয়ে যায় তার মা-বাবা। দিন যায় দিন আসে। আমার শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

একদিন শুনলাম অথৈর বিয়ে ঠিক হয়েছে। অথচ ওর মা-বাবা জানেই না যে বিয়ে করে ফেরার পথেই দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম আমরা। পাত্রপক্ষ দেখতে এলে অথৈ বলেই দেয় আমার সঙ্গে তার বিয়ের কথা। তার বাবা একথা শুনে সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তার বাবা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন।

অথৈর সঙ্গে আমার বিয়ে মেনে নেন না তার বাবা-মা। ওর মা তাকে বাবার হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করে। আমার মা এসব কথা শুনে এসে পরে আমাকে জানায়। আমি মাকে দিয়ে অথৈকে খবর পাঠায় আমার মতো পঙ্গু হতে যাওয়া একটা মানুষকে সে যেন একেবারেই ভুলে যায়। তাছাড়া ওর বাবার কিছু হয়ে গেল আমি নিজেকে ক্ষমাও করতে পারবো না। আমার মা অথৈকে সেকথা শোনানোর পর সে অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেক কান্নাকাটি করে।

এরইমধ্যে আমার পা দুটো কেটে ফেলা হয়েছে। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করছি। এলাকা ছেড়ে বাবা-মাকে নিয়ে পাশের এলাকায় চলে আসি। অথৈর বাবাও সুস্থ হয়ে গেছেন। অথৈ একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে। একপর্যায়ে পরিবারের পছন্দের একজনকে বিয়ে করে নিল অথৈ। একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়ে গেল।

 

এদিকে আমি একজন আর্টিস্ট হয়ে গেলাম। আমার একটি দোকানও আছে। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে শিল্পী হবো। অথৈর মেয়েও আর্ট খুব পছন্দ করে। একদিন অথৈ মেয়েকে নিয়ে আমার দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। মেয়ে তাকে বলতে থাকে- মা এই দোকান থেকে সুন্দর দৃশ্যগুলো নেবো। মেয়েকে নিয়ে অথৈ আমার দোকানে ঢোকার পর থ মেরে যায়। বহুবছর পর দুজন দুজনের মুখোমুখি হই…।   সূএ:ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com