বেদনা মুছে দিতে আবারও আনন্দের ঈদ

দুবছর গেছে পাছে। মহামারির কালোছায়ায়। আলিঙ্গন দূরের কথা, আসা যায়নি কাছাকাছিও। ভয় সংক্রমনের। মৃত্যুর। চেনা মানুষগুলো সব কেমন অচেনা হতে লাগলো দিনে দিনে। স্বজনও হয়ে গেল পর। নিথর দেহ অসহায় পড়ে থাকে, হাসপাতালের মর্গে কিংবা ফ্রিজিং ভ্যানে। মানুষ এমনও হয়! বেঁচে থাকাই যে শেষ কথা, লিখে গেল সে কথা, মহামারি করোনা।

 

আপাতত নেই আর মহামারি কালো ছায়া খুব। নতুন আক্রান্ত হচ্ছে বটে, অতটা নয়। যতটা হলে আশঙ্কা জেগে রয়। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, তবু এবারের ঈদে নেই কঠিনের কাঁটা। দুবছর পর, আবারও চিরচেনা ঈদ এলো। সঙ্গে নিয়ে আনন্দ আর সৌহার্দ্যরে বার্তা।

 

ঈদগাহে নামাজও বন্ধ ছিল দুবছর। দূরত্ব রাখতে বজায়। মসজিদে লাল দাগের চৌহদ্দিতে আদায় হয়ে নামাজ। ঢেকে রেখে মুখ। যেন জীবাণু নয় আতঙ্কিত চেহারা যেন না দেখে কেউ। যদিও যায়নি লুকানো শঙ্কিত চোখ। ঈদ এসেছিল, কিন্তু আনন্দ ছিল নির্বাসিত। যেন নিয়মরক্ষা। এবার ঈদগাহে সারিবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়বে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাঁধে কাঁধ মিলবে। বুকে মিলবে বুক। সৌহার্দ্যরে আলিঙ্গনে কাছে আসবে দূরে যাওয়া মুখ। আহা! কত অপেক্ষার শেষে। কতপ্রাণের আকস্মিক বিদায়ের পর, আপাত স্বাভাবিক সময়।

 

ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দেরই অংশ হয়ে গেছে বহুদিন। ঈদ মানেই নাড়ির টানে শিকড়ে ফেরা। দীর্ঘ যানজট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা পথে। গ্রীষ্মের নিদারুণ দাবদাহে। তবু প্রিয়জনের কাছে ফেরা মানুষের ঢল থেমে থাকে না কখনই। মহামারির মধ্যে বারণ ছিল। কঠোর ছিল আইন। তবু নিবৃত্ত করা যায়নি কাউকে। যান চলাচল বন্ধ ছিল, পায়ে হেঁটে রওনা দিয়ে মানুষ। ফেরি জাহাজে ঘরমুখো মানুষের অগুণতি মাথা, ঝাঁকায় ভরা কালোজামের মতো ছিল দেখতে। নদীর ঘোলা জলেও হাবুডুবু খেয়েছে মানুষ। দমে যায়নি তারপরও।

 

সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, এবার বাড়ি ফিরেছে গতবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। সঙ্গতই। এবার কোনো বারণ ছিল না। দুবছর ধৈর্য্যরে বাঁধ যাদের আকড়ে ছিল, এবার শ্বাস ফেলেছে তারা। ট্রেন, বাস, লঞ্চ কিংবা ব্যক্তিগত পরিবহণ, পথে পথে মানুষের মিছিল ছিল সেই চিরচেনা রূপে। স্বাভাবিক কারণে গ্রামেও ঈদের আমেজ ফিরবে এবার। কতদিন দেখা হয়নি প্রিয়মুখের সঙ্গে। এর মাঝে বিয়োগ হয়েছে কত স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, হিতাকাক্সিক্ষ। মাটিতে মিশে আছে তারা সমাধি পাড়ায়। আনন্দের দিনে হবে তাদের অশ্রু বিসর্জনে স্মরণ। দুবছরের কঠোর বারণকাল পেরিয়ে এবছর ঈদ বাড়তি আনন্দ নিয়ে এলো ঘরে ঘরে। বর্ণিল সাজে সাজবে শিশু-কিশোর-নবীণ-প্রবীণ সকলে। বিশেষ মিষ্টান্ন আর খাবারের আয়োজনও থাকবে বরাবারের মতোই। থাকবে অতিথির অপেক্ষা। আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চিরচেনা সেই সংস্কৃতি। দল বেঁধে বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেফেরা, পাড়া মহল্লায় আনন্দ আড্ডা ভাসবে দিন। এই তো কাক্সিক্ষত।

 

এই লেখা যখন লিখছি তখন কানে ভেসে আসছে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসামানী তাগিদ।’ টিভি পর্দায় শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ আয়োজন। মানুষের মুখে মুখে এই গান। টলটলে আকাশে হালকা হলদে আভা। চাঁদ দেখতে ছাদে ছাদে মানুষের ভিড়। মসজিদে মাইকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, ঈদের বার্তা। কাল কখন কোথায় ঈদের জামাত হবে, তার সময়সূচি ঘোষণা হচ্ছে উচ্চকণ্ঠে। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক ধনী-নির্ধননির্বিশেষে। মহামারির কালোছায়া মুক্ত ঈদ ফিরে আসুক আপন মহিমায়। মুছে দিক বিগত সব বেদনা, অকল্যাণ। ঈদ মুবারক। সূএ: ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

» দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার মৃত্যু

» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বেদনা মুছে দিতে আবারও আনন্দের ঈদ

দুবছর গেছে পাছে। মহামারির কালোছায়ায়। আলিঙ্গন দূরের কথা, আসা যায়নি কাছাকাছিও। ভয় সংক্রমনের। মৃত্যুর। চেনা মানুষগুলো সব কেমন অচেনা হতে লাগলো দিনে দিনে। স্বজনও হয়ে গেল পর। নিথর দেহ অসহায় পড়ে থাকে, হাসপাতালের মর্গে কিংবা ফ্রিজিং ভ্যানে। মানুষ এমনও হয়! বেঁচে থাকাই যে শেষ কথা, লিখে গেল সে কথা, মহামারি করোনা।

 

আপাতত নেই আর মহামারি কালো ছায়া খুব। নতুন আক্রান্ত হচ্ছে বটে, অতটা নয়। যতটা হলে আশঙ্কা জেগে রয়। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, তবু এবারের ঈদে নেই কঠিনের কাঁটা। দুবছর পর, আবারও চিরচেনা ঈদ এলো। সঙ্গে নিয়ে আনন্দ আর সৌহার্দ্যরে বার্তা।

 

ঈদগাহে নামাজও বন্ধ ছিল দুবছর। দূরত্ব রাখতে বজায়। মসজিদে লাল দাগের চৌহদ্দিতে আদায় হয়ে নামাজ। ঢেকে রেখে মুখ। যেন জীবাণু নয় আতঙ্কিত চেহারা যেন না দেখে কেউ। যদিও যায়নি লুকানো শঙ্কিত চোখ। ঈদ এসেছিল, কিন্তু আনন্দ ছিল নির্বাসিত। যেন নিয়মরক্ষা। এবার ঈদগাহে সারিবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়বে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাঁধে কাঁধ মিলবে। বুকে মিলবে বুক। সৌহার্দ্যরে আলিঙ্গনে কাছে আসবে দূরে যাওয়া মুখ। আহা! কত অপেক্ষার শেষে। কতপ্রাণের আকস্মিক বিদায়ের পর, আপাত স্বাভাবিক সময়।

 

ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দেরই অংশ হয়ে গেছে বহুদিন। ঈদ মানেই নাড়ির টানে শিকড়ে ফেরা। দীর্ঘ যানজট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা পথে। গ্রীষ্মের নিদারুণ দাবদাহে। তবু প্রিয়জনের কাছে ফেরা মানুষের ঢল থেমে থাকে না কখনই। মহামারির মধ্যে বারণ ছিল। কঠোর ছিল আইন। তবু নিবৃত্ত করা যায়নি কাউকে। যান চলাচল বন্ধ ছিল, পায়ে হেঁটে রওনা দিয়ে মানুষ। ফেরি জাহাজে ঘরমুখো মানুষের অগুণতি মাথা, ঝাঁকায় ভরা কালোজামের মতো ছিল দেখতে। নদীর ঘোলা জলেও হাবুডুবু খেয়েছে মানুষ। দমে যায়নি তারপরও।

 

সংশ্লিষ্টদের হিসাব বলছে, এবার বাড়ি ফিরেছে গতবারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। সঙ্গতই। এবার কোনো বারণ ছিল না। দুবছর ধৈর্য্যরে বাঁধ যাদের আকড়ে ছিল, এবার শ্বাস ফেলেছে তারা। ট্রেন, বাস, লঞ্চ কিংবা ব্যক্তিগত পরিবহণ, পথে পথে মানুষের মিছিল ছিল সেই চিরচেনা রূপে। স্বাভাবিক কারণে গ্রামেও ঈদের আমেজ ফিরবে এবার। কতদিন দেখা হয়নি প্রিয়মুখের সঙ্গে। এর মাঝে বিয়োগ হয়েছে কত স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, হিতাকাক্সিক্ষ। মাটিতে মিশে আছে তারা সমাধি পাড়ায়। আনন্দের দিনে হবে তাদের অশ্রু বিসর্জনে স্মরণ। দুবছরের কঠোর বারণকাল পেরিয়ে এবছর ঈদ বাড়তি আনন্দ নিয়ে এলো ঘরে ঘরে। বর্ণিল সাজে সাজবে শিশু-কিশোর-নবীণ-প্রবীণ সকলে। বিশেষ মিষ্টান্ন আর খাবারের আয়োজনও থাকবে বরাবারের মতোই। থাকবে অতিথির অপেক্ষা। আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চিরচেনা সেই সংস্কৃতি। দল বেঁধে বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেফেরা, পাড়া মহল্লায় আনন্দ আড্ডা ভাসবে দিন। এই তো কাক্সিক্ষত।

 

এই লেখা যখন লিখছি তখন কানে ভেসে আসছে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসামানী তাগিদ।’ টিভি পর্দায় শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ আয়োজন। মানুষের মুখে মুখে এই গান। টলটলে আকাশে হালকা হলদে আভা। চাঁদ দেখতে ছাদে ছাদে মানুষের ভিড়। মসজিদে মাইকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছে, ঈদের বার্তা। কাল কখন কোথায় ঈদের জামাত হবে, তার সময়সূচি ঘোষণা হচ্ছে উচ্চকণ্ঠে। আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক ধনী-নির্ধননির্বিশেষে। মহামারির কালোছায়া মুক্ত ঈদ ফিরে আসুক আপন মহিমায়। মুছে দিক বিগত সব বেদনা, অকল্যাণ। ঈদ মুবারক। সূএ: ঢাকাটাইমস ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com