যাদের পাঠালাম তারা কি নিরাপদ?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা জান্তা সরকারের ৩৩০ জনকে সেদিন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা ভালো আছে, না মন্দ, জীবিত, না মৃত কিছুই জানি না। জান্তা সরকার টিকে থাকলে যারা বাংলাদেশে এসেছিলেন, যাদের তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা তাদের কোর্ট মার্শাল হবে। সেখানে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। নিকট প্রতিবেশী অশান্তিতে থাকলে কখনো শান্তিতে থাকা যায় না। মিয়ানমার নিয়ে আমাদের তেমনটাই হয়েছে। আরাকানের সমস্যা হাজার বছরের পুরনো। আরাকান প্রায় সময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল। আরাকানের রাজদরবারের মহাকবি আলাউল বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। চর্যাপদের আলোচনা হয়েছে আরাকান রাজদরবারে। সেই আরাকানের রোহিঙ্গারা আজ নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, উদ্বাস্তু, অন্যের দেশে বিভুঁইয়ে আশ্রিত। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সে যে কী অবর্ণনীয় কষ্ট। আজ আরাকানের আশ্রয় প্রার্থীরা সেই একই রকম কষ্ট ভোগ করছে। মাথা গোঁজার ভালো আশ্রয় নেই, ঘর-দুয়ার নেই, পেট পুরে খাবার নেই, এক অভাবনীয় নোংরা পরিবেশে দিন কাটছে। শুনে অবাক হই, প্রতি বছর লাখের মতো জনসংখ্যা বাড়ছে। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায়? ১৫-২০ বছরে কক্সবাজার রোহিঙ্গাময় হয়ে যাবে। কিছুই বুঝতে পারি না। যদি ৩৩০ জনকে ফেরত নেওয়া যায় বা ফেরত দেওয়া যায় তাহলে যারা অনেক বছর আগে এসেছে তাদের কেন ফেরত দেওয়া যায় না? কেন মিয়ানমার ফেরত নিতে পারে না? অসুবিধা কোথায়? এসবের কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।

বহু বছর বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখালেখি করি। বলতে গেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্মলগ্ন থেকেই আমার লেখা শুরু। কিন্তু কেন যেন যে স্বস্তি পাওয়ার কথা কখনো পাই না। কাঁচি ছুরি হাতে প্রতিদিনে যারা বসে আছে তারা আমাদের বয়সের লেহাজ করার চিন্তা করে না। সেদিন লিখেছিলাম ১৯৬০ সালে বার্মার বা বর্তমান মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি করে নে উইনকে উৎখাত করা হয়েছিল। যিনি লেখা দেখাশোনা করেন তিনি ’৫৮ সাল করে দিয়েছেন। আমি ’৫৮ সালকে উল্লেখ করে নে উইনের কথা বলিনি। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছিলেন ’৫৮ সালে। ইস্কান্দার মির্জাকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন এক হোটেলের ম্যানেজারের চাকরি দিয়ে। আমার ’৬০ সালকে সংশোধন করে ’৫৮ সাল করে দিয়েছেন। এমন অনেক ক্ষেত্রেই করেন। দুই-একটা যে ভালো হয় না, সঠিক সংশোধন হয় না তা নয়। কিন্তু আমি যাদের তুমি বলি তাদেরকে সংশোধন করে আপনি বানিয়ে দেয়। এতে লেখার গতি কমে, গভীরতাও কমে। কিন্তু কী করব, কালি কলম তাদের হাতে, ছাপার রূপ পায় তাদের হাত দিয়ে। দুই-একবার বলেছি। কিন্তু মিয়ানমার উত্তেজনা নিয়ে, মিয়ানমার ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠানো নিয়ে কেন যেন কোনোমতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। সব সময় একটা শঙ্কা কাজ করছে। মিয়ানমার আরাকান খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি অঞ্চল। শুনেছি, অনেকের চোখ নাকি তাদের দিকে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কোনোখানে কোনো সম্পদ লুকায়িত থাকলে তা লুটেপুটে খাওয়ার লোকের কখনো অভাব হয় না। এখন আরও বেশি লুটেরা পাওয়ার সম্ভাবনা। কারণ পৃথিবীতে লুটেরা কমেনি, বরং বেড়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ লুটেরাদের সম্পদ লুটের টানাটানিতে একেবারে দিশাহারা জেরবার। কোথায় গিয়ে তারা মাথা গুঁজবে তাই খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

 

বার্মার নাম শুনেছিলাম সেই ছোটকালে। কেবলই পাকিস্তান হয়েছে। টাঙ্গাইলের বড় ধনী আরফান খান, আজগর খান, মটু মিয়া- এরা সবাই বিশাল সম্পত্তির মালিক। সবাই ছিলেন বার্মার রেঙ্গুনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেখান থেকে চলে আসেন। তাদের বিপুল সম্পত্তি। আরফান খান, আজগর খান ব্যবসা করতেন। একসময় পানি বিক্রি করেও নাকি কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন। পাকিস্তানের শুরুর দিকে আজগর খান, আরফান খান, মটু মিয়ার চেয়ে বেশি সম্পত্তি টাঙ্গাইলে আর কারও ছিল না। আরফান খানের ছেলে শওকত আলী বার অ্যাট ল, আজগর খানের ছেলে আজম খান টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের একসময় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। দেলদুয়ারের লাউহাটিতে কয়েক একর জায়গার ওপর তাদের বিশাল বাড়ি। আমাদের অঞ্চলের লোকজন বার্মা চিনত আরফান খান, আজগর খানের কারণে। অন্যদিকে মটু মিয়া, তিনি এক মারাত্মক লোক। শুনেছি ব্রিটিশ আর্মির তিনি ছিলেন হিসাবরক্ষক। যুদ্ধ শেষে অনেক জিনিসপত্রই ব্রিটিশদের হিসাবে না দিয়ে তার হিসাবে নিয়েছিলেন। যাতে করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। আমরা যারা রাজনীতি করতাম আমাদের ভীষণ বকাঝকা ধমকাধমকি করতেন। কিন্তু কখনো খালি হাতে ফেরাতেন না, ২-৪ টাকা সব সময় দিতেন। এক মজার মানুষ ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ড ছিল না যাতে তিনি আমাদের সহযোগিতা করেননি। শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তার সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। ছেলেবেলায় বুঝতাম না। দুই-চারবার বলেছি, টাকা আছে বলে লোকটা এত আজেবাজে কথা বলে কেন। কিন্তু পরে দেখেছি লোকটি যথার্থই ভালো মানুষ। মনে হয় ’৭৪ সালের ঘটনা। আমাদের সবার বিরুদ্ধে মটু মিয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছিলেন। সেও প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা। গণভবনে গিয়ে প্রথম প্রথম অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলাম। কী বলে! মটু মিয়ার কাছ থেকে আমরা টাকা নিয়েছি, তাও আবার ৫-৬ কোটি। এটা কীভাবে সম্ভব! আমরা ৪০ জনের কম ছিলাম না। প্রত্যেকের নামে টাকার এক মস্তবড় ফিরিস্তি। মান্নান ভাই আর লতিফ ভাইয়ের টাকার পরিমাণ সব থেকে বেশি। তারপরেই হাতেম আলী তালুকদার, শামসুর রহমান খান শাজাহান, বদিউজ্জামান খান, মীর্জা তোফাজ্জল হোসেন, ফজলুর রহমান খান ফারুক কে নাই সেখানে। সবার নামে বিপুল অঙ্কের টাকা। আমার নামেও ৫০-৬০ হাজার। আমি তো অবাক! কারণ মটু মিয়া আমাকে কখনো ৫০ টাকার বেশি দেয়নি। তাতে ৫০-৬০ হাজার হয় কী করে। ২-৩ হাজার হলে হতে পারে। মিটিং শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই বলেছিলেন, আচ্ছা, এভাবে তোমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিলে চলে? আর একদিকে লতিফ, আরেকদিকে মান্নান। তোমরাই তো অর্ধেক টাকা নিয়েছ। মনে হয় মান্নান ভাই আর লতিফ ভাই দুজনেই দেড়-দুই কোটি। মান্নান ভাই তীক্ষè বুদ্ধির মানুষ। তিনি এক পর্যায়ে বলে বসলেন, মটু মিয়া আমাদের টাকা-পয়সা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখনো একবারে অত টাকা দেয়নি। হিসাব করে দেখা গেল যা দিয়েছেন গত ৩০ বছরে দিয়েছেন। সেখানে সবার নামে কবে কত টাকা নিয়েছেন, কী উপলক্ষে নিয়েছেন তার এক অসাধারণ নিখুঁত বর্ণনা বা হিসাব। আমি যখন আমার নামের হিসাব পেলাম তখন দেখলাম ৩-৪ টাকা থেকে ২০-৩০ টাকা যখন দিয়েছেন তারও একটি নিখুঁত হিসাব আছে। কিন্তু কোনোমতেই ৬০ হাজার মেলাতে পারছিলাম না। ১৫-২০ হাজারের বেশি কিছুতেই হবার নয়। হঠাৎ চোখ পড়ল স্বাধীনতার পরপর ৬০-৭০ জনের একটি দল নিয়ে সিলেটে বন্যার্তদের সহযোগিতায় গিয়েছিলাম। সেই সময় যাতায়াত খরচ হিসেবে লতিফ ভাইয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। তখন বুঝলাম, জাত ব্যবসায়ীদের কোনো হিসাব ভুল হয় না। তারা সবকিছু কড়ায়-গন্ডায় হিসাব রাখে। যেমনটা মটু মিয়া রেখেছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা মিটিং চলছিল। মটু মিয়ার হিসাবে কোনো ভুল ছিল না। একটা সিদ্ধান্তে যাওয়ার অবস্থায় মান্নান ভাই বলেছিলেন, নেতা, আমাদের সবার নাম দেখছি, কিন্তু আপনার নাম দেখছি না। এই হিসাবটা যদি পাকিস্তান সরকারের কাছে দেওয়া হতো, দেওয়া যে হয় নাই তাইবা বলি কী করে, তখন আপনার নাম সবার ওপরে থাকত। হুজুর মওলানা ভাসানী কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে দেওয়া হলে আপনার নাম এক নম্বরে থাকত। এখানে যে আপনার নাম দেখছি না। আপনি কি তাহলে মটু মিয়ার কাছ থেকে কখনো কোনোদিন কোনো টাকা-পয়সা নেননি? সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও হাসছিলেন। হিসাব-কিতাব সব সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওইভাবে ওইদিনের আলোচনা বা সভা শেষ না হলে তেমন কী হতো বলতে পারি না। তবে ওভাবে সভাটা শেষ হওয়াই ভালো ছিল।

 

আমাদের মটু মিয়া বুদ্ধিশুদ্ধির দিক থেকে ছিলেন অসাধারণ। ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় তা তিনি ছিলেন। বিয়ে করেছিলেন মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর বোন। তিনি আরেক উপমা। মানুষ মানুষকে এত ভালোবাসতে পারে তা একমাত্র তাকে দেখলেই বোঝা যায়। এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। পরে যখন জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করা হয় তখন মটু চাচার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া সেই অভিযোগের সব কাগজপত্র নিয়েছিলাম। না হলেও এক থেকে দেড় মাস লেগেছিল সেই কাগজপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে। যত দেখছিলাম ভালো ব্যবসায়ীদের প্রতি তত শ্রদ্ধা বাড়ছিল। কবে কোন সময় আমাকে ২ টাকা দিয়েছিলেন, কী কাজের জন্য দিয়েছিলেন, আমরা কজন তার কাছে গিয়েছিলাম, আমাদের কিছু খেতে দিয়েছিলেন নাকি দেননি তার এক নিখুঁত বিবরণ। কাগজপত্র দেখে বারবার মনে হয়েছে একজন মানুষ কীভাবে অত বড় ব্যবসা-বাণিজ্য চালায়। যেভাবে আমাদের নিয়ে তার লেখালেখি দেখেছি তাতে মনে হয়েছে সারা দুনিয়া চালাতেও তাদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না। যতদিন তিনি ছিলেন তার ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালো ছিল। তবে তারপর তার সন্তান-সন্ততিরা আর তেমন কিছু করতে পারেনি। আস্তে আস্তে সবই শেষ হয়ে গেছে। এখন তেমন কিছু আছে কি না জানি না। এলিফ্যান্ট রোডে বিশাল বাড়ি ছিল। সেটাও এখন আর দেখি না। হয়তো অন্যরূপ নিয়েছে। এই তো দুনিয়া! ঘাট অঘাট হবে, অঘাট ঘাট হবে।

কীভাবে কীভাবে যেন মটু মিয়ার প্রসঙ্গ এসেছিল। আজগর খান, আরফান খানের প্রসঙ্গও মিয়ানমারের কারণে এসেছিল। আজগর খান, আরফান খান সম্পদশালী ধনী মানুষ হলেও মানুষ হিসেবে বেশ ভালো ছিলেন। আরফান খান, আজগর খান ঠিক জানি না কাকে যেন ইঁদুরে কামড়ে ছিল। সেফটিক হয়ে তিনি মারা গেছেন। কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগেনি। একসময় আমরা দেখতাম, আজম খান ছোট একটি ছেলেকে নিয়ে ঘুরতেন। ১২-১৪ বছরের হালকা পাতলা জোকারের মতো ছেলেটি মাঝেসাজে বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঢাকাই পট্টি খান সাহেবদের দোকানে যেত, বসত। ওই সময় আমরা ঠিক বুঝতে পারতাম না অত ধনী মানুষ দোকান করে কেন? মনে হয় ঢাকাইয়া পট্টিতে তাদেরই ছিল সব থেকে বড় দোকান। সে যাক, মিয়ানমার উত্তেজনা আমাদের নানাভাবে শঙ্কিত করে রেখেছে। শুধু আমাদের এলাকার আজগর খান, আরফান খান, মটু মিয়া এ ধরনের মানুষের সঙ্গে বার্মার যোগাযোগ ছিল না, যোগাযোগ ছিল আরও গভীরে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লবের সমাপ্তিতে বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বার্মার রেঙ্গুনে। একসময় মুঘল বাদশাহ শানশওকতে যার ছিল জীবন ভরা, সেই বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর একেবারে মিসকিনের মতো হতদরিদ্রের মতো নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। বাহাদুর শাহ জাফরের অন্তিম ইচ্ছা ছিল তার কবর দেশের মাটিতে হোক। কিন্তু তা হয়নি।

 

ইংরেজরা সে ইচ্ছা পূরণ করেনি। এখনো বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি অবহেলা অনাদরে পড়ে আছে মিয়ানমারের রেঙ্গুনে। আরও একজন মুঘল যুবরাজ সুজা মিয়ানমার পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্রাট শাজাহানকে বন্দি করে আওরঙ্গজেব যখন মুঘল সিংহাসন দখল করেন তখন তিনি প্রথমেই হত্যা করেন বড় ভাই দারাকে। তারপর মুরাদ। সুজা তখন বাংলার সুবেদার। আওরঙ্গজেবের আক্রমণে ধীরে ধীরে তিনি চট্টগ্রামের দিকে সরে যান। সেখান থেকে আরাকান। আবার সেই আরাকান বা মিয়ানমার সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মেনে নিলাম সেদিন ৩৩০ জনকে পাঠানো হয়েছে। আবার যে ৬৬০ জন আসবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? এর তো কোনো গ্যারান্টি নেই।

 

মন্ত্রণালয়ে জিজ্ঞেস করে জানলাম বার্মার সঙ্গে আমাদের সীমানা ২৫০ কিলোমিটার। শোনা যাচ্ছে আমরা নাকি সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা ভাবছি। কাঁটাতারের বেড়াই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান না। সরকারের কাছ থেকে শুনলাম, এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতি বছর ৭০-৮০ হাজার নতুন রোহিঙ্গার জন্ম হচ্ছে। এভাবে যদি আরও কয়েক বছর চলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনই জানেন। তাই এসব ব্যাপারে এখনই আরও যত্নশীল না হলে ভবিষ্যতে আমরা কেঁদেও কূল পাব না।

লেখক : রাজনীতিক [www.ksjleague.com]  সূএ: বাংলদেশ প্রতিদদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, পরিষ্কার ধারণা ছিল : জিএম কাদের

» চিফ হিট অফিসার ডিএনসিসির কেউ নন : মেয়র আতিক

» হলিউডের সিনেমাকে ‘না’ বললেন ক্যাটরিনা!

» আগামীকাল থেকে খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাপদাহে যেভাবে চলবে ক্লাস

» ৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম কালবৈশাখী এপ্রিলে

» আজকের খেলা

» উন্নয়নের ভেলকিতে বাংলাদেশ এখন মৃত্যু উপত্যকা: রিজভী

» মেয়র আতিক চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ ব্যবস্থা

» শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

» শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

যাদের পাঠালাম তারা কি নিরাপদ?

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা জান্তা সরকারের ৩৩০ জনকে সেদিন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা ভালো আছে, না মন্দ, জীবিত, না মৃত কিছুই জানি না। জান্তা সরকার টিকে থাকলে যারা বাংলাদেশে এসেছিলেন, যাদের তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা তাদের কোর্ট মার্শাল হবে। সেখানে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। নিকট প্রতিবেশী অশান্তিতে থাকলে কখনো শান্তিতে থাকা যায় না। মিয়ানমার নিয়ে আমাদের তেমনটাই হয়েছে। আরাকানের সমস্যা হাজার বছরের পুরনো। আরাকান প্রায় সময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল। আরাকানের রাজদরবারের মহাকবি আলাউল বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল। চর্যাপদের আলোচনা হয়েছে আরাকান রাজদরবারে। সেই আরাকানের রোহিঙ্গারা আজ নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, উদ্বাস্তু, অন্যের দেশে বিভুঁইয়ে আশ্রিত। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সে যে কী অবর্ণনীয় কষ্ট। আজ আরাকানের আশ্রয় প্রার্থীরা সেই একই রকম কষ্ট ভোগ করছে। মাথা গোঁজার ভালো আশ্রয় নেই, ঘর-দুয়ার নেই, পেট পুরে খাবার নেই, এক অভাবনীয় নোংরা পরিবেশে দিন কাটছে। শুনে অবাক হই, প্রতি বছর লাখের মতো জনসংখ্যা বাড়ছে। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায়? ১৫-২০ বছরে কক্সবাজার রোহিঙ্গাময় হয়ে যাবে। কিছুই বুঝতে পারি না। যদি ৩৩০ জনকে ফেরত নেওয়া যায় বা ফেরত দেওয়া যায় তাহলে যারা অনেক বছর আগে এসেছে তাদের কেন ফেরত দেওয়া যায় না? কেন মিয়ানমার ফেরত নিতে পারে না? অসুবিধা কোথায়? এসবের কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।

বহু বছর বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখালেখি করি। বলতে গেলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্মলগ্ন থেকেই আমার লেখা শুরু। কিন্তু কেন যেন যে স্বস্তি পাওয়ার কথা কখনো পাই না। কাঁচি ছুরি হাতে প্রতিদিনে যারা বসে আছে তারা আমাদের বয়সের লেহাজ করার চিন্তা করে না। সেদিন লিখেছিলাম ১৯৬০ সালে বার্মার বা বর্তমান মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি করে নে উইনকে উৎখাত করা হয়েছিল। যিনি লেখা দেখাশোনা করেন তিনি ’৫৮ সাল করে দিয়েছেন। আমি ’৫৮ সালকে উল্লেখ করে নে উইনের কথা বলিনি। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছিলেন ’৫৮ সালে। ইস্কান্দার মির্জাকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন এক হোটেলের ম্যানেজারের চাকরি দিয়ে। আমার ’৬০ সালকে সংশোধন করে ’৫৮ সাল করে দিয়েছেন। এমন অনেক ক্ষেত্রেই করেন। দুই-একটা যে ভালো হয় না, সঠিক সংশোধন হয় না তা নয়। কিন্তু আমি যাদের তুমি বলি তাদেরকে সংশোধন করে আপনি বানিয়ে দেয়। এতে লেখার গতি কমে, গভীরতাও কমে। কিন্তু কী করব, কালি কলম তাদের হাতে, ছাপার রূপ পায় তাদের হাত দিয়ে। দুই-একবার বলেছি। কিন্তু মিয়ানমার উত্তেজনা নিয়ে, মিয়ানমার ৩৩০ জনকে ফেরত পাঠানো নিয়ে কেন যেন কোনোমতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। সব সময় একটা শঙ্কা কাজ করছে। মিয়ানমার আরাকান খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি অঞ্চল। শুনেছি, অনেকের চোখ নাকি তাদের দিকে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কোনোখানে কোনো সম্পদ লুকায়িত থাকলে তা লুটেপুটে খাওয়ার লোকের কখনো অভাব হয় না। এখন আরও বেশি লুটেরা পাওয়ার সম্ভাবনা। কারণ পৃথিবীতে লুটেরা কমেনি, বরং বেড়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ লুটেরাদের সম্পদ লুটের টানাটানিতে একেবারে দিশাহারা জেরবার। কোথায় গিয়ে তারা মাথা গুঁজবে তাই খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

 

বার্মার নাম শুনেছিলাম সেই ছোটকালে। কেবলই পাকিস্তান হয়েছে। টাঙ্গাইলের বড় ধনী আরফান খান, আজগর খান, মটু মিয়া- এরা সবাই বিশাল সম্পত্তির মালিক। সবাই ছিলেন বার্মার রেঙ্গুনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেখান থেকে চলে আসেন। তাদের বিপুল সম্পত্তি। আরফান খান, আজগর খান ব্যবসা করতেন। একসময় পানি বিক্রি করেও নাকি কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন। পাকিস্তানের শুরুর দিকে আজগর খান, আরফান খান, মটু মিয়ার চেয়ে বেশি সম্পত্তি টাঙ্গাইলে আর কারও ছিল না। আরফান খানের ছেলে শওকত আলী বার অ্যাট ল, আজগর খানের ছেলে আজম খান টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের একসময় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। দেলদুয়ারের লাউহাটিতে কয়েক একর জায়গার ওপর তাদের বিশাল বাড়ি। আমাদের অঞ্চলের লোকজন বার্মা চিনত আরফান খান, আজগর খানের কারণে। অন্যদিকে মটু মিয়া, তিনি এক মারাত্মক লোক। শুনেছি ব্রিটিশ আর্মির তিনি ছিলেন হিসাবরক্ষক। যুদ্ধ শেষে অনেক জিনিসপত্রই ব্রিটিশদের হিসাবে না দিয়ে তার হিসাবে নিয়েছিলেন। যাতে করে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। আমরা যারা রাজনীতি করতাম আমাদের ভীষণ বকাঝকা ধমকাধমকি করতেন। কিন্তু কখনো খালি হাতে ফেরাতেন না, ২-৪ টাকা সব সময় দিতেন। এক মজার মানুষ ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ড ছিল না যাতে তিনি আমাদের সহযোগিতা করেননি। শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তার সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। ছেলেবেলায় বুঝতাম না। দুই-চারবার বলেছি, টাকা আছে বলে লোকটা এত আজেবাজে কথা বলে কেন। কিন্তু পরে দেখেছি লোকটি যথার্থই ভালো মানুষ। মনে হয় ’৭৪ সালের ঘটনা। আমাদের সবার বিরুদ্ধে মটু মিয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছিলেন। সেও প্রায় ৫-৬ কোটি টাকা। গণভবনে গিয়ে প্রথম প্রথম অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে পড়েছিলাম। কী বলে! মটু মিয়ার কাছ থেকে আমরা টাকা নিয়েছি, তাও আবার ৫-৬ কোটি। এটা কীভাবে সম্ভব! আমরা ৪০ জনের কম ছিলাম না। প্রত্যেকের নামে টাকার এক মস্তবড় ফিরিস্তি। মান্নান ভাই আর লতিফ ভাইয়ের টাকার পরিমাণ সব থেকে বেশি। তারপরেই হাতেম আলী তালুকদার, শামসুর রহমান খান শাজাহান, বদিউজ্জামান খান, মীর্জা তোফাজ্জল হোসেন, ফজলুর রহমান খান ফারুক কে নাই সেখানে। সবার নামে বিপুল অঙ্কের টাকা। আমার নামেও ৫০-৬০ হাজার। আমি তো অবাক! কারণ মটু মিয়া আমাকে কখনো ৫০ টাকার বেশি দেয়নি। তাতে ৫০-৬০ হাজার হয় কী করে। ২-৩ হাজার হলে হতে পারে। মিটিং শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই বলেছিলেন, আচ্ছা, এভাবে তোমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিলে চলে? আর একদিকে লতিফ, আরেকদিকে মান্নান। তোমরাই তো অর্ধেক টাকা নিয়েছ। মনে হয় মান্নান ভাই আর লতিফ ভাই দুজনেই দেড়-দুই কোটি। মান্নান ভাই তীক্ষè বুদ্ধির মানুষ। তিনি এক পর্যায়ে বলে বসলেন, মটু মিয়া আমাদের টাকা-পয়সা দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কখনো একবারে অত টাকা দেয়নি। হিসাব করে দেখা গেল যা দিয়েছেন গত ৩০ বছরে দিয়েছেন। সেখানে সবার নামে কবে কত টাকা নিয়েছেন, কী উপলক্ষে নিয়েছেন তার এক অসাধারণ নিখুঁত বর্ণনা বা হিসাব। আমি যখন আমার নামের হিসাব পেলাম তখন দেখলাম ৩-৪ টাকা থেকে ২০-৩০ টাকা যখন দিয়েছেন তারও একটি নিখুঁত হিসাব আছে। কিন্তু কোনোমতেই ৬০ হাজার মেলাতে পারছিলাম না। ১৫-২০ হাজারের বেশি কিছুতেই হবার নয়। হঠাৎ চোখ পড়ল স্বাধীনতার পরপর ৬০-৭০ জনের একটি দল নিয়ে সিলেটে বন্যার্তদের সহযোগিতায় গিয়েছিলাম। সেই সময় যাতায়াত খরচ হিসেবে লতিফ ভাইয়ের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। তখন বুঝলাম, জাত ব্যবসায়ীদের কোনো হিসাব ভুল হয় না। তারা সবকিছু কড়ায়-গন্ডায় হিসাব রাখে। যেমনটা মটু মিয়া রেখেছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা মিটিং চলছিল। মটু মিয়ার হিসাবে কোনো ভুল ছিল না। একটা সিদ্ধান্তে যাওয়ার অবস্থায় মান্নান ভাই বলেছিলেন, নেতা, আমাদের সবার নাম দেখছি, কিন্তু আপনার নাম দেখছি না। এই হিসাবটা যদি পাকিস্তান সরকারের কাছে দেওয়া হতো, দেওয়া যে হয় নাই তাইবা বলি কী করে, তখন আপনার নাম সবার ওপরে থাকত। হুজুর মওলানা ভাসানী কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে দেওয়া হলে আপনার নাম এক নম্বরে থাকত। এখানে যে আপনার নাম দেখছি না। আপনি কি তাহলে মটু মিয়ার কাছ থেকে কখনো কোনোদিন কোনো টাকা-পয়সা নেননি? সবাই হো হো করে হেসে উঠেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও হাসছিলেন। হিসাব-কিতাব সব সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওইভাবে ওইদিনের আলোচনা বা সভা শেষ না হলে তেমন কী হতো বলতে পারি না। তবে ওভাবে সভাটা শেষ হওয়াই ভালো ছিল।

 

আমাদের মটু মিয়া বুদ্ধিশুদ্ধির দিক থেকে ছিলেন অসাধারণ। ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় তা তিনি ছিলেন। বিয়ে করেছিলেন মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর বোন। তিনি আরেক উপমা। মানুষ মানুষকে এত ভালোবাসতে পারে তা একমাত্র তাকে দেখলেই বোঝা যায়। এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি। পরে যখন জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করা হয় তখন মটু চাচার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া সেই অভিযোগের সব কাগজপত্র নিয়েছিলাম। না হলেও এক থেকে দেড় মাস লেগেছিল সেই কাগজপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে। যত দেখছিলাম ভালো ব্যবসায়ীদের প্রতি তত শ্রদ্ধা বাড়ছিল। কবে কোন সময় আমাকে ২ টাকা দিয়েছিলেন, কী কাজের জন্য দিয়েছিলেন, আমরা কজন তার কাছে গিয়েছিলাম, আমাদের কিছু খেতে দিয়েছিলেন নাকি দেননি তার এক নিখুঁত বিবরণ। কাগজপত্র দেখে বারবার মনে হয়েছে একজন মানুষ কীভাবে অত বড় ব্যবসা-বাণিজ্য চালায়। যেভাবে আমাদের নিয়ে তার লেখালেখি দেখেছি তাতে মনে হয়েছে সারা দুনিয়া চালাতেও তাদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না। যতদিন তিনি ছিলেন তার ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ভালো ছিল। তবে তারপর তার সন্তান-সন্ততিরা আর তেমন কিছু করতে পারেনি। আস্তে আস্তে সবই শেষ হয়ে গেছে। এখন তেমন কিছু আছে কি না জানি না। এলিফ্যান্ট রোডে বিশাল বাড়ি ছিল। সেটাও এখন আর দেখি না। হয়তো অন্যরূপ নিয়েছে। এই তো দুনিয়া! ঘাট অঘাট হবে, অঘাট ঘাট হবে।

কীভাবে কীভাবে যেন মটু মিয়ার প্রসঙ্গ এসেছিল। আজগর খান, আরফান খানের প্রসঙ্গও মিয়ানমারের কারণে এসেছিল। আজগর খান, আরফান খান সম্পদশালী ধনী মানুষ হলেও মানুষ হিসেবে বেশ ভালো ছিলেন। আরফান খান, আজগর খান ঠিক জানি না কাকে যেন ইঁদুরে কামড়ে ছিল। সেফটিক হয়ে তিনি মারা গেছেন। কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগেনি। একসময় আমরা দেখতাম, আজম খান ছোট একটি ছেলেকে নিয়ে ঘুরতেন। ১২-১৪ বছরের হালকা পাতলা জোকারের মতো ছেলেটি মাঝেসাজে বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঢাকাই পট্টি খান সাহেবদের দোকানে যেত, বসত। ওই সময় আমরা ঠিক বুঝতে পারতাম না অত ধনী মানুষ দোকান করে কেন? মনে হয় ঢাকাইয়া পট্টিতে তাদেরই ছিল সব থেকে বড় দোকান। সে যাক, মিয়ানমার উত্তেজনা আমাদের নানাভাবে শঙ্কিত করে রেখেছে। শুধু আমাদের এলাকার আজগর খান, আরফান খান, মটু মিয়া এ ধরনের মানুষের সঙ্গে বার্মার যোগাযোগ ছিল না, যোগাযোগ ছিল আরও গভীরে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লবের সমাপ্তিতে বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল বার্মার রেঙ্গুনে। একসময় মুঘল বাদশাহ শানশওকতে যার ছিল জীবন ভরা, সেই বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফর একেবারে মিসকিনের মতো হতদরিদ্রের মতো নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। বাহাদুর শাহ জাফরের অন্তিম ইচ্ছা ছিল তার কবর দেশের মাটিতে হোক। কিন্তু তা হয়নি।

 

ইংরেজরা সে ইচ্ছা পূরণ করেনি। এখনো বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি অবহেলা অনাদরে পড়ে আছে মিয়ানমারের রেঙ্গুনে। আরও একজন মুঘল যুবরাজ সুজা মিয়ানমার পালিয়ে গিয়েছিলেন। সম্রাট শাজাহানকে বন্দি করে আওরঙ্গজেব যখন মুঘল সিংহাসন দখল করেন তখন তিনি প্রথমেই হত্যা করেন বড় ভাই দারাকে। তারপর মুরাদ। সুজা তখন বাংলার সুবেদার। আওরঙ্গজেবের আক্রমণে ধীরে ধীরে তিনি চট্টগ্রামের দিকে সরে যান। সেখান থেকে আরাকান। আবার সেই আরাকান বা মিয়ানমার সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মেনে নিলাম সেদিন ৩৩০ জনকে পাঠানো হয়েছে। আবার যে ৬৬০ জন আসবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? এর তো কোনো গ্যারান্টি নেই।

 

মন্ত্রণালয়ে জিজ্ঞেস করে জানলাম বার্মার সঙ্গে আমাদের সীমানা ২৫০ কিলোমিটার। শোনা যাচ্ছে আমরা নাকি সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা ভাবছি। কাঁটাতারের বেড়াই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান না। সরকারের কাছ থেকে শুনলাম, এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রতি বছর ৭০-৮০ হাজার নতুন রোহিঙ্গার জন্ম হচ্ছে। এভাবে যদি আরও কয়েক বছর চলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনই জানেন। তাই এসব ব্যাপারে এখনই আরও যত্নশীল না হলে ভবিষ্যতে আমরা কেঁদেও কূল পাব না।

লেখক : রাজনীতিক [www.ksjleague.com]  সূএ: বাংলদেশ প্রতিদদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com