পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে চলে গেল গ্রহাণু

পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে চলে গেছে একটি গ্রহাণু। এটি বিপজ্জনক রকম আকারের না হলেও যেসব ক্ষুদ্র গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে জ্বলে যায় সে তুলনায় কিছুটা বড়।

 

‘২০২৩ বিইউ’ নাম দেওয়া গ্রহাণুটি বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার ঠিক আগ দিয়ে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে। এর আকার একটি মাইক্রোবাসের সমান।

 

গ্রহাণুটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত বরাবর পৃথিবীর তিন হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করে। অনেক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ এর চেয়ে অনেক দূর দিয়ে চলে। টেলিযোগাযোগ উপগ্রহগুলোর অনেকগুলোর কক্ষপথ ৩৬ হাজার কিমি দূরে।

 

বড় গ্রহাণু সাধারণত বিজ্ঞানীদের চোখে আগে ধরা পড়ে। ‘২০২৩ বিইউ’ শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেন্নাদি বোরিসভের টেলিস্কোপে ধরা পড়ে মাত্র গত সপ্তাহান্তে। তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা উপদ্বীপ ক্রিমিয়ার বাসিন্দা। এখনো যে পৃথিবীর কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য আকারের গ্রহাণু আমাদের চোখে না পড়ে লুকিয়ে আছে, তাই এ ঘটনায় আবার প্রমাণিত হলো।

 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘২০২৩ বিইউ’ পৃথিবীতে আঘাত করবে না। এটির আকাশে থাকা কোনো স্যাটেলাইটকে আঘাত করার সম্ভাবনাও ছিল খুবই কম। এমনকি সরাসরি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের পথে এলেও তেমন কোনো ক্ষতি করার সক্ষমতা এর ছিল না।

 

তবে মহাকাশের হিসাবে তিন হাজার ৬০০ কিলোমিটার কোনো দূরত্বই নয়। কাজেই বিজ্ঞানীরা একে একেবারে ‘কানের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া’ হিসেবেই গণ্য করছেন।

 

আনুমানিক মাত্র সাড়ে তিন মিটার থেকে সাড়ে আট মিটার আকারের শিলাটি পৃথিবীর দিকে চলে এলেও অনেক উঁচুতে থাকতেই বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে এর ফলে একটি চোখে পড়ার মতো উজ্জ্বল আগুনের গোলাও তৈরি হতে পারত।

 

তুলনা করার জন্য বলা যায়, বিখ্যাত চেলিয়াবিনস্ক উল্কা ২০১৩ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার ওপরের আকাশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল। সেটির বিস্তার ছিল ২০ মিটার। উল্কাপিণ্ডটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করায় তীব্র শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, যাতে নিচে পৃথিবীর বুকে কিছু বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহাণু ২০২৩ বিইউ পৃথিবীর কাছে চলে আসার কারণে সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবই তার কারণ।

 

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কাছের বেশি বড় গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আগে থেকে সাবধান হওয়া যায়। সেগুলো পৃথিবীতে আঘাত করলে সত্যিই ক্ষতি হতে পারে। যেমন ছয় কোটি বছর আগে ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি শিলার আঘাতেই পৃথিবী থেকে অতিকায় প্রাণী ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এইসব বড় গ্রহাণুর মধ্যে সম্ভবত সবগুলোই শনাক্ত করা হয়েছে। এ কারণে তা উদ্বেগের কারণ নয়। তবে আকারে অনেক ছোট (যেমন ১৫০ মিটার) গ্রহাণুর ক্ষেত্রে মাত্র ৪০ শতাংশের মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এগুলোর কোনটি পৃথিবীকে আঘাত করলে একটি গোটা শহরের সমান স্থান ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হবে।

 

যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডন পোলাকো বলেন, ‘এখনো পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রমকারী এমন কিছু গ্রহাণু আছে, যেগুলো আবিষ্কৃত হয়নি। ২০২৩ বিইউ একটি অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত বস্তু। এটি অবশ্যই পৃথিবীর কক্ষপথ আগেও হাজার হাজারবার অতিক্রম করেছে। তবে ঘুরতে ঘুরতে এবারই এত কাছে এলো। অতিক্রমের সময় চাঁদের তুলনায় মাত্র ১% দূরত্বে থাকবে এটি।

সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বন্দনা করা ছাড়া জাপার কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

» বাংলাদেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিরোধী দল দেখে না: কাদের

» থাই পিএমও-তে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা

» দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার মৃত্যু

» আজকের খেলা

» অধিকার আদায়ে শেরে বাংলার অবদান কখনোই ভুলবার নয়: ফখরুল

» বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে বিক্রি ও সেবনের অপরাধে ৩৯ জন গ্রেপ্তার

» সরবরাহ থাকলেও কমছে না সবজির দাম, অস্বস্তি মাছ-মাংসের বাজারে

» ভারী বৃষ্টিপাতের পর তানজানিয়ায় বন্যা-ভূমিধস, নিহত অন্তত ১৫৫

» ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে চলে গেল গ্রহাণু

পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে চলে গেছে একটি গ্রহাণু। এটি বিপজ্জনক রকম আকারের না হলেও যেসব ক্ষুদ্র গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে জ্বলে যায় সে তুলনায় কিছুটা বড়।

 

‘২০২৩ বিইউ’ নাম দেওয়া গ্রহাণুটি বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার ঠিক আগ দিয়ে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে। এর আকার একটি মাইক্রোবাসের সমান।

 

গ্রহাণুটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত বরাবর পৃথিবীর তিন হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করে। অনেক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ এর চেয়ে অনেক দূর দিয়ে চলে। টেলিযোগাযোগ উপগ্রহগুলোর অনেকগুলোর কক্ষপথ ৩৬ হাজার কিমি দূরে।

 

বড় গ্রহাণু সাধারণত বিজ্ঞানীদের চোখে আগে ধরা পড়ে। ‘২০২৩ বিইউ’ শখের জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেন্নাদি বোরিসভের টেলিস্কোপে ধরা পড়ে মাত্র গত সপ্তাহান্তে। তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা উপদ্বীপ ক্রিমিয়ার বাসিন্দা। এখনো যে পৃথিবীর কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য আকারের গ্রহাণু আমাদের চোখে না পড়ে লুকিয়ে আছে, তাই এ ঘটনায় আবার প্রমাণিত হলো।

 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘২০২৩ বিইউ’ পৃথিবীতে আঘাত করবে না। এটির আকাশে থাকা কোনো স্যাটেলাইটকে আঘাত করার সম্ভাবনাও ছিল খুবই কম। এমনকি সরাসরি পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের পথে এলেও তেমন কোনো ক্ষতি করার সক্ষমতা এর ছিল না।

 

তবে মহাকাশের হিসাবে তিন হাজার ৬০০ কিলোমিটার কোনো দূরত্বই নয়। কাজেই বিজ্ঞানীরা একে একেবারে ‘কানের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া’ হিসেবেই গণ্য করছেন।

 

আনুমানিক মাত্র সাড়ে তিন মিটার থেকে সাড়ে আট মিটার আকারের শিলাটি পৃথিবীর দিকে চলে এলেও অনেক উঁচুতে থাকতেই বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে এর ফলে একটি চোখে পড়ার মতো উজ্জ্বল আগুনের গোলাও তৈরি হতে পারত।

 

তুলনা করার জন্য বলা যায়, বিখ্যাত চেলিয়াবিনস্ক উল্কা ২০১৩ সালে দক্ষিণ রাশিয়ার ওপরের আকাশে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল। সেটির বিস্তার ছিল ২০ মিটার। উল্কাপিণ্ডটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করায় তীব্র শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, যাতে নিচে পৃথিবীর বুকে কিছু বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়।

 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহাণু ২০২৩ বিইউ পৃথিবীর কাছে চলে আসার কারণে সূর্যের চারপাশে এর কক্ষপথ কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। আমাদের গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবই তার কারণ।

 

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর কাছের বেশি বড় গ্রহাণুগুলো খুঁজে বের করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আগে থেকে সাবধান হওয়া যায়। সেগুলো পৃথিবীতে আঘাত করলে সত্যিই ক্ষতি হতে পারে। যেমন ছয় কোটি বছর আগে ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি শিলার আঘাতেই পৃথিবী থেকে অতিকায় প্রাণী ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। এইসব বড় গ্রহাণুর মধ্যে সম্ভবত সবগুলোই শনাক্ত করা হয়েছে। এ কারণে তা উদ্বেগের কারণ নয়। তবে আকারে অনেক ছোট (যেমন ১৫০ মিটার) গ্রহাণুর ক্ষেত্রে মাত্র ৪০ শতাংশের মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এগুলোর কোনটি পৃথিবীকে আঘাত করলে একটি গোটা শহরের সমান স্থান ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হবে।

 

যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডন পোলাকো বলেন, ‘এখনো পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রমকারী এমন কিছু গ্রহাণু আছে, যেগুলো আবিষ্কৃত হয়নি। ২০২৩ বিইউ একটি অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত বস্তু। এটি অবশ্যই পৃথিবীর কক্ষপথ আগেও হাজার হাজারবার অতিক্রম করেছে। তবে ঘুরতে ঘুরতে এবারই এত কাছে এলো। অতিক্রমের সময় চাঁদের তুলনায় মাত্র ১% দূরত্বে থাকবে এটি।

সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com