মহামারীতে রূপ নিতে পারে ফ্লু ভাইরাস

প্রতীকী ছবি

আগামীতে মহামারীতে রূপ নিতে পারে ফ্লু ভাইরাস, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী, অভিজ্ঞ রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রায় ৫৭ শতাংশই মনে করছেন ফ্লু ভাইরাসের একটি স্ট্রেইন আগামীতে বিশ্বজুড়ে মহামারীর কারণ হতে পারে।

 

কলোগনি ইউনিভার্সিটির সালম্যানটন গার্সিয়া দীর্ঘ সময় ধরে তার করা সমীক্ষায় দেখান যে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ভাইরাসের ধরনে নানা পরিবর্তন আসছে।

 

তিনি বলেন, “প্রতি শীতেই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ দেখা দেয়। এটাকে ছোটখাটো মহামারীই বলা চলে। ইনফ্লুয়েঞ্জা কম-বেশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, কারণ বেশিরভাগ ধরন তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক। তবে আগামীতেও যে এটি এমনই থাকবে তা তো নিশ্চিত নয়।” 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ফ্লু’র পরে বড় মহামারীটি ডিজিজ এক্স নামক ভাইরাস থেকে আসতে পারে। তবে ভাইরাসটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ২১ শতাংশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন পরবর্তী মহামারী একটি নতুন অণুজীবের কারণে ঘটবে, যা এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। এটা সেভাবেই পৃথিবীকে আক্রমণ করবে, যেভাবে হুট করেই ঠিক সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ২০১৯ সালে আক্রমণ করেছিল।

 

অন্যদিকে, প্রায় ১৫ শতাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন কোভিড-১৯ ভাইরাসই এখন পর্যন্ত আগামী মহামারীর হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।

 

গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইনফ্লুয়েঞ্জার এইচফাইভএনওয়ান (H5N1) স্ট্রেইনের উদ্বেগজনক বিস্তার সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এভিয়ান ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এ প্রাদুর্ভাবে এরই মধ্যে লাখ লাখ হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে এবং লাখ লাখ বন্যপাখি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্যে ভাইরাসটি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে গৃহপালিত গবাদিপশুও রয়েছে। এটি মানুষকেও আক্রান্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

 

হ্যাটফিল্ডের রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজের ড্যানিয়েল গোল্ডহিল গত সপ্তাহে নেচার জার্নালে বলেন, “ভাইরাসটি যত বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতিকে সংক্রমিত করে, ততই এটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক স্ট্রেইনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়।”

 

গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট এড হাচিনসন বলেন, “এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাসের উপস্থিতি বিস্ময়কর ছিল। এর আগে প্রাণীদের মধ্যে শূকর এতে আক্রান্ত হলেও গবাদিপশুর ওপর এভিয়ান ফ্লুর আক্রমণ একেবারেই নতুন ছিল। তারা এ রোগের নিজস্ব স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছিল। তাই গরুতে এইচফাইভএনওয়ানের উপস্থিতি একটি বিরাট ধাক্কা হিসেবে এসেছে।”

 

এর মানে হলো- ভাইরাসটি আরও বেশিসংখ্যক খামারের প্রাণীতে এবং তারপর খামারের প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে প্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। ভাইরাসটি যত বেশি ছড়াবে, ততই এটির পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

তবে এইচফাইভএনওয়ান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কিন্তু যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এর প্রভাব মারাত্মক হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ দুই দশকে শত শত ক্ষেত্রে মানুষ প্রাণীদের সংস্পর্শে এসে এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী জেরেমি ফারার বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বেশি, কারণ মানুষের এই ভাইরাস প্রতিরোধ করার প্রাকৃতিক ক্ষমতা নেই। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন: প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান

» রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় এক ব্যক্তি নিহত

» খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কল্যাণেও বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার- ধর্মমন্ত্রী

» দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লক্ষ্মীপুরে বৃষ্টি নামলো

» যেকোনো মূল্যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জেলা প্রশাসক ড.বদিউর আলম

» বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের উদ্দ্যোগে কর্মশালা

» ফোনের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করার উপায়

» নুসরাতের বুকে কার নামের ট্যাটু?

» সড়ক দুর্ঘটনায় দুই হেলপার নিহত

» আগামীকাল থেকে ২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মহামারীতে রূপ নিতে পারে ফ্লু ভাইরাস

প্রতীকী ছবি

আগামীতে মহামারীতে রূপ নিতে পারে ফ্লু ভাইরাস, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী, অভিজ্ঞ রোগ বিশেষজ্ঞদের প্রায় ৫৭ শতাংশই মনে করছেন ফ্লু ভাইরাসের একটি স্ট্রেইন আগামীতে বিশ্বজুড়ে মহামারীর কারণ হতে পারে।

 

কলোগনি ইউনিভার্সিটির সালম্যানটন গার্সিয়া দীর্ঘ সময় ধরে তার করা সমীক্ষায় দেখান যে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিনিয়ত বিবর্তিত হচ্ছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ভাইরাসের ধরনে নানা পরিবর্তন আসছে।

 

তিনি বলেন, “প্রতি শীতেই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ দেখা দেয়। এটাকে ছোটখাটো মহামারীই বলা চলে। ইনফ্লুয়েঞ্জা কম-বেশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়, কারণ বেশিরভাগ ধরন তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক। তবে আগামীতেও যে এটি এমনই থাকবে তা তো নিশ্চিত নয়।” 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ফ্লু’র পরে বড় মহামারীটি ডিজিজ এক্স নামক ভাইরাস থেকে আসতে পারে। তবে ভাইরাসটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও অজানা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ২১ শতাংশ বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন পরবর্তী মহামারী একটি নতুন অণুজীবের কারণে ঘটবে, যা এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। এটা সেভাবেই পৃথিবীকে আক্রমণ করবে, যেভাবে হুট করেই ঠিক সার্স-কোভ-২ ভাইরাস ২০১৯ সালে আক্রমণ করেছিল।

 

অন্যদিকে, প্রায় ১৫ শতাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন কোভিড-১৯ ভাইরাসই এখন পর্যন্ত আগামী মহামারীর হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।

 

গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইনফ্লুয়েঞ্জার এইচফাইভএনওয়ান (H5N1) স্ট্রেইনের উদ্বেগজনক বিস্তার সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ এভিয়ান ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২০ সালে শুরু হওয়া এ প্রাদুর্ভাবে এরই মধ্যে লাখ লাখ হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে এবং লাখ লাখ বন্যপাখি নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্যে ভাইরাসটি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে গৃহপালিত গবাদিপশুও রয়েছে। এটি মানুষকেও আক্রান্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

 

হ্যাটফিল্ডের রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজের ড্যানিয়েল গোল্ডহিল গত সপ্তাহে নেচার জার্নালে বলেন, “ভাইরাসটি যত বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতিকে সংক্রমিত করে, ততই এটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক স্ট্রেইনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়।”

 

গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট এড হাচিনসন বলেন, “এইচফাইভএনওয়ান ভাইরাসের উপস্থিতি বিস্ময়কর ছিল। এর আগে প্রাণীদের মধ্যে শূকর এতে আক্রান্ত হলেও গবাদিপশুর ওপর এভিয়ান ফ্লুর আক্রমণ একেবারেই নতুন ছিল। তারা এ রোগের নিজস্ব স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছিল। তাই গরুতে এইচফাইভএনওয়ানের উপস্থিতি একটি বিরাট ধাক্কা হিসেবে এসেছে।”

 

এর মানে হলো- ভাইরাসটি আরও বেশিসংখ্যক খামারের প্রাণীতে এবং তারপর খামারের প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে প্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। ভাইরাসটি যত বেশি ছড়াবে, ততই এটির পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ফলে এটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

তবে এইচফাইভএনওয়ান মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার এমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। কিন্তু যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এর প্রভাব মারাত্মক হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ দুই দশকে শত শত ক্ষেত্রে মানুষ প্রাণীদের সংস্পর্শে এসে এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী জেরেমি ফারার বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক বেশি, কারণ মানুষের এই ভাইরাস প্রতিরোধ করার প্রাকৃতিক ক্ষমতা নেই। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com