একটি ভালো নির্বাচন

ছবি সংগৃহীত

 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম :  ঈদ মুবারক। আর দুই দিন পর মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ। কোটি কোটি মানুষ আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করবে। অথচ পশু কোরবানিটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। কোরবানি করা উচিত  প্রতিটি মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে। আমরা খুব বেশি মানুষ নিজের পশুত্বকে কোরবানি না করে জীবজন্তু কোরবানি করি। তাতে মহান স্রষ্টা রব্বুল আলামিন কতটা খুশি হন আমরা কেউ জানি না। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেকের দেহমনের পশুত্বকে কোরবানি করা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে কোরবানির তৌফিক দান করুন, কায়মনে সেটাই কামনা করছি।

 

বেশ কয়েক বছর পর একটা পৌর নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে আমরা অংশগ্রহণ করিনি। বাসাইলে আমাদের প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু খুবই অল্প বয়সী সাধারণ একজন মানুষ। এক অর্থে ভদ্রতার প্রতীক, নির্বিবাদী একজন ভালো মানুষ। এর আগেও দুবার পৌর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। ভোট কারচুপির কারণে সে বারবার মাত্র কয়েক ভোটে পরাজিত হয়েছে। তাই এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর তার প্রবল ইচ্ছা ছিল। তার সঙ্গে তার সহকর্মীদেরও খুবই আগ্রহ ছিল। সে আগ্রহরই প্রতিফলন ২১ জুন বাসাইল পৌর নির্বাচনে গামছার বিজয়। আগের বারও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম। প্রচার-প্রচারণা খুবই ভালো হয়েছিল। কিন্তু একেবারে দিনদুপুরে ডাকাতির মতো চুরি করায় কয়েক শ ভোটে রাহাত হাসান টিপু পরাজিত হয়েছিল। এর মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়িল প্রাইমারি স্কুল এবং বাসাইল গার্লস স্কুলে মারাত্মক ভোট ডাকাতি হয়েছিল। বিকাল ৩টায় গার্লস স্কুল এবং ব্রাহ্মণপাড়িলে ভোট কাস্ট হয়েছিল সব মিলিয়ে ৮০০। ব্রাহ্মণপাড়িল আর সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সর্বমোট ভোট কাস্ট হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ ভোট। ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে সেখানে ভোট দেখানো হয় ৩ হাজার ৩০০; যা কাস্ট করা ছিল একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। ৩টায় আমাদের লোকজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দিয়ে কাস্টিং ভোট লিখিয়ে এনেছিল। তবে যা হোক, এবার ভোটে কারচুপি হয়নি। সরকারি দল সরকারি প্রভাব খাটায়নি বা খাটাতে পারেনি। মানুষ তার ইচ্ছামতো ভোট দিয়েছে। শুনেছি সরকারি দল ভোটের আগের রাতেও অনেক টাকা খরচ করেছে। তা যাদের টাকা আছে তারা খরচ করবে। আমরা বাধা হব কেন? তবে বহুদিন পর বাসাইলের পৌর নির্বাচন একটা মনে রাখার মতো ঘটনা। নির্বাচনের দুই দিন আগে বাসাইল শহীদ মিনারে গামছার সভা করেছিলাম। বেশ ভালো লোকজন হয়েছিল। মহিলা ভোটারের উপস্থিতি ছিল অসাধারণ। আবার নির্বাচন শেষে বিজয়ী প্রার্থীকে শুভকামনা জানাতে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে একটি সভা করা হয়েছিল। তাতে অসম্ভব লোকসমাগম হয়েছে। সব কজন মহিলাকে বসার আসন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি বলে এসেছি, ভোটের দিন পর্যন্ত রাহাত হাসান টিপু ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গামছার প্রার্থী। বিজয়ী ঘোষণার পর থেকে টিপু হচ্ছে বাসাইলের সবার মেয়র। যে ভোট দিয়েছে তার যেমন, যে ভোট দেয়নি তারও তেমন। সবার জন্য তাকে কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, রাহাত হাসান টিপু খুব সহজেই বাসাইলবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবে। কারণ নয়ছয় রাহাত হাসান টিপুর জানা নেই। শুধু একটু যত্নশীল হলেই বাসাইলের মানুষ খুশি হবে। কারণ অনেক দিন তারা জ্বলেছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। জুতা পরে কেউ মেয়রের ঘরে ঢুকতে পারেনি। আরও নানা অসুবিধা, নানা রকমের বাহানা বাসাইলের মানুষ সহ্য করেছে। নির্বাচনী প্রচারে একদিন মাইজখাড়া গিয়েছিলাম। বাসাইল মেইন শহর থেকে বড়জোর তিন কিলোমিটার হবে। মোটামুটি দেড়-দুই কিলোমিটার পাকা, বাকিটা একেবারে চলার অযোগ্য। কাঁচা, ভাঙা মাটির রাস্তা। লোকজনকে কথা দিয়ে এসেছি, আমি নিজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করব রাস্তাটি করে দিতে। যদি আমার অনুরোধে কাজ না হয় প্রিয় বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলব। কথা শুনে লোকজন খুব খুশি হয়েছে। তাই শুধু খুশি করার জন্য নয়, মাইজখাড়ার রাস্তাটা যাতে এই অর্থবছরেই ধরা হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা করব। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কি না? আমরা সন্তুষ্ট কি না? নির্বাচনী পরিবেশ ছিল অসাধারণ। ভোট পর্যন্ত শেষ হয়েছে খুবই ভালোভাবে কোনো জোরজুলুম ছাড়া। কোনো কেন্দ্রে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। আমরা তো কোনো অনিয়মের অভিযোগ করিইনি, অন্যদিকে বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী এনায়েত করীম অটলেরও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এসব দিক থেকে ভোট প্রক্রিয়া যথাযথ শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত হয়েছে। মোট ১০টি কেন্দ্রের আটটির ফল অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। বাকি দুটির একটি কিছুক্ষণ পরে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ফলাফল প্রায় দু-তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। এতে সবদিকে গুঞ্জন ওঠে। খবর পেয়ে আমি বাসাইল যাই। কন্ট্রোল রুমে গিয়ে বসি। যেখান থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছিল আমি যাওয়ার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে সব কটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তাতে গামছার প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু বিজয়ী হয়। বিজয়ের কাগজপত্র নিয়ে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা চলে আসি। সেদিনসহ পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মিটিং মিছিল এমনকি বিজয় মিছিল বন্ধ রাখায় পরদিন শুক্রবার সংবর্ধনা সভা ডাকা হয়। শুনেছিলাম বিকাল ৩টায় সভা হবে। আমি গিয়েছিলাম সাড়ে ৩টায়। তেমন লোকজন ছিল না। মাত্র দু-তিন শ কর্র্মী ছিল। কিন্তু ৪টার দিকে ধীরে ধীরে সভাস্থল ভরে যায়। মাঝে কয়েকটি মিছিল আসে। মিছিলগুলো বিরাট ব্যাপক কিছু না হলেও বেশ বড়সড় লোকসমাগম ছিল। আমাদের এক দলীয় সদস্য নবীন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছে। তার মিছিল যখন সভাস্থলে আসে তখন পুরো জায়গাটা ভরে যায়। চমৎকার সংবর্ধনা সভা। সভায় কিছু বলতে গিয়ে আমার বারবার মনে পড়ছিল ’৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ল জারির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাসাইলের আন্ধারীপাড়া আবদুস সাত্তার মিয়ার বাড়িতে চার দিন লুকিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ যদিও এ কথাটি মনে রাখেনি। আর এসব কথা আওয়ামী লীগ মনেও রাখে না। কিন্তু এবার বাসাইলের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে আশ্রয় দেওয়া সাত্তার মিয়ার নাতিকে পৌর নির্বাচনে জয়ী করেছে। লোকজন বড় হলে অনেকেই ভালো হয় আবার অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ হয়ে যায়। তেমনটা রাহাত হাসান টিপুর পরিবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। টিপুর এক চাচা ভেবল কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়ে ছিল। খুব একটা ভোট পায়নি। আমাকে অনেক মানুষ অনুরোধ করেছিলেন ভেবলকে বসিয়ে দিতে। কারণ এক বাড়ির দুই প্রার্থী ভালো দেখায় না। আমিও চিন্তা করছিলাম। কিন্তু বলতে সাহস হয়নি। সাত্তার মিয়ার বড় ছেলে ইলিয়াস ছিল আমাদের কর্মী। ’৭৫ সালে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে গণবাহিনীর সদস্যরা ইলিয়াসকে আক্রমণ করেছিল। ইলিয়াসের দেহে ২০-২৫টি আঘাত করেছিল। তখন বাসাইল-করটিয়া, বাসাইল-ভাতকুড়া কোনো ভালো রাস্তা ছিল না। পুরোটাই ছিল কাঁচা এবং ভাঙা। তার মধ্যেই রাত আড়াইটা-তিনটার দিকে অনেককে নিয়ে আমি বাসাইল গিয়েছিলাম। ইলিয়াসের ক্ষতবিক্ষত দেহ টাঙ্গাইল হসপিটালে আনা হয়েছিল। সেই প্রথম আমি অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে আহত ইলিয়াসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ডাক্তাররা অনেক যত্ন নিয়েছিলেন। ভালো চিকিৎসার জন্য মির্জাপুর এবং পরে ঢাকা নেওয়া হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ দয়ায় ইলিয়াস বেঁচে গিয়েছিল এবং আমার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থেকে কাজ করেছে। সেই পরিবারের ওপর এবার বাসাইল উন্নয়নের দায়িত্ব পড়েছে। ভোটের আগের দিন সাত্তার মিয়ার বাড়ি গিয়েছিলাম। এখন আর আগের মতো খোলামেলা বাড়ি নেই। ভাগাভাগি হয়ে বিরাট বাড়ি টুকরো টুকরো হয়েছে। টিপুর মা বেশ কিছুদিন প্যারালাইসিসে ভুগছে। তাঁর বাঁ পাশ পুরোটাই অবশ হয়ে গেছে। তবে কথাবার্তা ওঠাবসায় খুব একটা অসুবিধা নেই। তাই টিপুর মাকে দেখতে গিয়েছিলাম। একদিন আগে বলে এসেছিলাম, দোয়া করো তোমার ছেলে এবার জয়ী হবে। মা হিসেবে সে দোয়া করেছে। মা-বাবার দোয়া আল্লাহতায়ালা নিজে বিবেচনা করেন। পৃথিবীর সব মানুষ এমনকি ওলি-আবদেল সবার দোয়া প্রথমত যায় রসুল (সা.)-এর কাছে। রসুল (সা.) রাজিখুশি হলে তারপর সে দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছে। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ কথা দিয়েছেন, মা-বাবার ন্যায্য দোয়া তিনি কবুল করবেন। বাসাইলের ভোটে এবার তাই হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রচুর খুশি হয়েছে। এখন বাকিটা দেখা যাবে সামনের দিনে।

 

গত ১৬ মে আমরা দলগতভাবে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল কথা দিয়েছিলেন প্রভাবমুক্ত অবাধ নির্বাচন হবে। হয়েছেও তাই। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনাও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেজন্য আমরা সত্যিই খুশি হয়েছি, সাধারণ মানুষও খুশি হয়েছে। হ্যাঁ এটা সত্য, ছোট্ট একটা স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরিপূরক নয়। এমনকি উদাহরণ দেওয়ার মতোও নয়। কিন্তু যদি সত্যিই জাতীয় নির্বাচন স্বতঃস্ফূর্ত হয় তাহলে দেশের সম্মান যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বর্তমান সরকার বিশেষ করে বোন শেখ হাসিনার সরকারেরও মর্যাদা বাড়বে। আশা করি বিষয়গুলো সরকার গভীরভাবে ভেবে দেখবে।

 

জানি না দেশের মানুষ এবার কতটা কি ঈদের বাজার করতে পারবে। কারণ সবকিছুতেই আগুন। নুন-তেল-চিনি-মরিচ-পিঁয়াজ-আদা-রসুন কোনো কিছুই ছোঁয়া যায় না। বাজারের কি যে দুরবস্থা একেবারেই বলার মতো নয়। এ অবস্থায়ও মানুষ টিকে আছে, কোনো না কোনোভাবে জীবন চলছে। এক বছর আগে হাজার টাকায় যা পাওয়া যেত এখন দুই হাজারেও তা পাওয়া যায় না। সব দিকেই মানুষের কষ্ট। অন্যদিকে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের ছাড়া অন্যকে বোঝেন না। অন্যদের অসুবিধা, দুঃখ-বেদনা ভাবার কোনো শক্তি নেই তাদের। তাদের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার অনেক কিছুই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে। ধনীকে আরও ধনী বানিয়েছে, গরিব আরও গরিব ও অসহায় হয়েছে। যেসব প্রজেক্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে চালাতে পারেন না সেগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলেই হয়। বেসরকারি খাতে থাকলে তবু কিছু বলা যাবে। সাধারণ মানুষ চিৎকার ফাৎকার করতে পারবে।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com         সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম

» সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের ঐক্য এবং শক্তির প্রতিক-ধর্মমন্ত্রী

» বাংলাদেশ ‘বিশ্ব ব্যাংক ভূমি সম্মেলন ২০২৪’-এ স্মার্ট ভূমিসেবা কার্যক্রম তুলে ধরেছে

» বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

» বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ইজারা দিয়ে আশানুরূপ ফলাফল মেলেনি: পাটমন্ত্রী

» ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের বিকল্প নেই’

» হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

» হারাম শরিফে কি তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার নিয়ম নেই?

» ধান কাটা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত

» ‘নারী স্পিকারদের সম্মেলন বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর অনবদ্য প্লাটফর্ম’

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

একটি ভালো নির্বাচন

ছবি সংগৃহীত

 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম :  ঈদ মুবারক। আর দুই দিন পর মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ। কোটি কোটি মানুষ আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করবে। অথচ পশু কোরবানিটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। কোরবানি করা উচিত  প্রতিটি মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পশুত্বকে। আমরা খুব বেশি মানুষ নিজের পশুত্বকে কোরবানি না করে জীবজন্তু কোরবানি করি। তাতে মহান স্রষ্টা রব্বুল আলামিন কতটা খুশি হন আমরা কেউ জানি না। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেকের দেহমনের পশুত্বকে কোরবানি করা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে কোরবানির তৌফিক দান করুন, কায়মনে সেটাই কামনা করছি।

 

বেশ কয়েক বছর পর একটা পৌর নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর আর কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে আমরা অংশগ্রহণ করিনি। বাসাইলে আমাদের প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু খুবই অল্প বয়সী সাধারণ একজন মানুষ। এক অর্থে ভদ্রতার প্রতীক, নির্বিবাদী একজন ভালো মানুষ। এর আগেও দুবার পৌর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। ভোট কারচুপির কারণে সে বারবার মাত্র কয়েক ভোটে পরাজিত হয়েছে। তাই এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর তার প্রবল ইচ্ছা ছিল। তার সঙ্গে তার সহকর্মীদেরও খুবই আগ্রহ ছিল। সে আগ্রহরই প্রতিফলন ২১ জুন বাসাইল পৌর নির্বাচনে গামছার বিজয়। আগের বারও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম। প্রচার-প্রচারণা খুবই ভালো হয়েছিল। কিন্তু একেবারে দিনদুপুরে ডাকাতির মতো চুরি করায় কয়েক শ ভোটে রাহাত হাসান টিপু পরাজিত হয়েছিল। এর মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়িল প্রাইমারি স্কুল এবং বাসাইল গার্লস স্কুলে মারাত্মক ভোট ডাকাতি হয়েছিল। বিকাল ৩টায় গার্লস স্কুল এবং ব্রাহ্মণপাড়িলে ভোট কাস্ট হয়েছিল সব মিলিয়ে ৮০০। ব্রাহ্মণপাড়িল আর সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সর্বমোট ভোট কাস্ট হয়েছিল ১ হাজার ৬০০ ভোট। ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে সেখানে ভোট দেখানো হয় ৩ হাজার ৩০০; যা কাস্ট করা ছিল একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। ৩টায় আমাদের লোকজন প্রিসাইডিং অফিসারকে দিয়ে কাস্টিং ভোট লিখিয়ে এনেছিল। তবে যা হোক, এবার ভোটে কারচুপি হয়নি। সরকারি দল সরকারি প্রভাব খাটায়নি বা খাটাতে পারেনি। মানুষ তার ইচ্ছামতো ভোট দিয়েছে। শুনেছি সরকারি দল ভোটের আগের রাতেও অনেক টাকা খরচ করেছে। তা যাদের টাকা আছে তারা খরচ করবে। আমরা বাধা হব কেন? তবে বহুদিন পর বাসাইলের পৌর নির্বাচন একটা মনে রাখার মতো ঘটনা। নির্বাচনের দুই দিন আগে বাসাইল শহীদ মিনারে গামছার সভা করেছিলাম। বেশ ভালো লোকজন হয়েছিল। মহিলা ভোটারের উপস্থিতি ছিল অসাধারণ। আবার নির্বাচন শেষে বিজয়ী প্রার্থীকে শুভকামনা জানাতে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে একটি সভা করা হয়েছিল। তাতে অসম্ভব লোকসমাগম হয়েছে। সব কজন মহিলাকে বসার আসন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি বলে এসেছি, ভোটের দিন পর্যন্ত রাহাত হাসান টিপু ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গামছার প্রার্থী। বিজয়ী ঘোষণার পর থেকে টিপু হচ্ছে বাসাইলের সবার মেয়র। যে ভোট দিয়েছে তার যেমন, যে ভোট দেয়নি তারও তেমন। সবার জন্য তাকে কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, রাহাত হাসান টিপু খুব সহজেই বাসাইলবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবে। কারণ নয়ছয় রাহাত হাসান টিপুর জানা নেই। শুধু একটু যত্নশীল হলেই বাসাইলের মানুষ খুশি হবে। কারণ অনেক দিন তারা জ্বলেছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। জুতা পরে কেউ মেয়রের ঘরে ঢুকতে পারেনি। আরও নানা অসুবিধা, নানা রকমের বাহানা বাসাইলের মানুষ সহ্য করেছে। নির্বাচনী প্রচারে একদিন মাইজখাড়া গিয়েছিলাম। বাসাইল মেইন শহর থেকে বড়জোর তিন কিলোমিটার হবে। মোটামুটি দেড়-দুই কিলোমিটার পাকা, বাকিটা একেবারে চলার অযোগ্য। কাঁচা, ভাঙা মাটির রাস্তা। লোকজনকে কথা দিয়ে এসেছি, আমি নিজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করব রাস্তাটি করে দিতে। যদি আমার অনুরোধে কাজ না হয় প্রিয় বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলব। কথা শুনে লোকজন খুব খুশি হয়েছে। তাই শুধু খুশি করার জন্য নয়, মাইজখাড়ার রাস্তাটা যাতে এই অর্থবছরেই ধরা হয় তার আপ্রাণ চেষ্টা করব। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নির্বাচন যথাযথ হয়েছে কি না? আমরা সন্তুষ্ট কি না? নির্বাচনী পরিবেশ ছিল অসাধারণ। ভোট পর্যন্ত শেষ হয়েছে খুবই ভালোভাবে কোনো জোরজুলুম ছাড়া। কোনো কেন্দ্রে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। আমরা তো কোনো অনিয়মের অভিযোগ করিইনি, অন্যদিকে বিএনপির বহিষ্কৃত প্রার্থী এনায়েত করীম অটলেরও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এসব দিক থেকে ভোট প্রক্রিয়া যথাযথ শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত হয়েছে। মোট ১০টি কেন্দ্রের আটটির ফল অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। বাকি দুটির একটি কিছুক্ষণ পরে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ফলাফল প্রায় দু-তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। এতে সবদিকে গুঞ্জন ওঠে। খবর পেয়ে আমি বাসাইল যাই। কন্ট্রোল রুমে গিয়ে বসি। যেখান থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছিল আমি যাওয়ার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে সব কটি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তাতে গামছার প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু বিজয়ী হয়। বিজয়ের কাগজপত্র নিয়ে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা চলে আসি। সেদিনসহ পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মিটিং মিছিল এমনকি বিজয় মিছিল বন্ধ রাখায় পরদিন শুক্রবার সংবর্ধনা সভা ডাকা হয়। শুনেছিলাম বিকাল ৩টায় সভা হবে। আমি গিয়েছিলাম সাড়ে ৩টায়। তেমন লোকজন ছিল না। মাত্র দু-তিন শ কর্র্মী ছিল। কিন্তু ৪টার দিকে ধীরে ধীরে সভাস্থল ভরে যায়। মাঝে কয়েকটি মিছিল আসে। মিছিলগুলো বিরাট ব্যাপক কিছু না হলেও বেশ বড়সড় লোকসমাগম ছিল। আমাদের এক দলীয় সদস্য নবীন কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছে। তার মিছিল যখন সভাস্থলে আসে তখন পুরো জায়গাটা ভরে যায়। চমৎকার সংবর্ধনা সভা। সভায় কিছু বলতে গিয়ে আমার বারবার মনে পড়ছিল ’৫৮ সালে আইয়ুব খানের মার্শাল ল জারির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাসাইলের আন্ধারীপাড়া আবদুস সাত্তার মিয়ার বাড়িতে চার দিন লুকিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগ যদিও এ কথাটি মনে রাখেনি। আর এসব কথা আওয়ামী লীগ মনেও রাখে না। কিন্তু এবার বাসাইলের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে আশ্রয় দেওয়া সাত্তার মিয়ার নাতিকে পৌর নির্বাচনে জয়ী করেছে। লোকজন বড় হলে অনেকেই ভালো হয় আবার অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ হয়ে যায়। তেমনটা রাহাত হাসান টিপুর পরিবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। টিপুর এক চাচা ভেবল কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়ে ছিল। খুব একটা ভোট পায়নি। আমাকে অনেক মানুষ অনুরোধ করেছিলেন ভেবলকে বসিয়ে দিতে। কারণ এক বাড়ির দুই প্রার্থী ভালো দেখায় না। আমিও চিন্তা করছিলাম। কিন্তু বলতে সাহস হয়নি। সাত্তার মিয়ার বড় ছেলে ইলিয়াস ছিল আমাদের কর্মী। ’৭৫ সালে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে গণবাহিনীর সদস্যরা ইলিয়াসকে আক্রমণ করেছিল। ইলিয়াসের দেহে ২০-২৫টি আঘাত করেছিল। তখন বাসাইল-করটিয়া, বাসাইল-ভাতকুড়া কোনো ভালো রাস্তা ছিল না। পুরোটাই ছিল কাঁচা এবং ভাঙা। তার মধ্যেই রাত আড়াইটা-তিনটার দিকে অনেককে নিয়ে আমি বাসাইল গিয়েছিলাম। ইলিয়াসের ক্ষতবিক্ষত দেহ টাঙ্গাইল হসপিটালে আনা হয়েছিল। সেই প্রথম আমি অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে আহত ইলিয়াসের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ডাক্তাররা অনেক যত্ন নিয়েছিলেন। ভালো চিকিৎসার জন্য মির্জাপুর এবং পরে ঢাকা নেওয়া হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ দয়ায় ইলিয়াস বেঁচে গিয়েছিল এবং আমার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থেকে কাজ করেছে। সেই পরিবারের ওপর এবার বাসাইল উন্নয়নের দায়িত্ব পড়েছে। ভোটের আগের দিন সাত্তার মিয়ার বাড়ি গিয়েছিলাম। এখন আর আগের মতো খোলামেলা বাড়ি নেই। ভাগাভাগি হয়ে বিরাট বাড়ি টুকরো টুকরো হয়েছে। টিপুর মা বেশ কিছুদিন প্যারালাইসিসে ভুগছে। তাঁর বাঁ পাশ পুরোটাই অবশ হয়ে গেছে। তবে কথাবার্তা ওঠাবসায় খুব একটা অসুবিধা নেই। তাই টিপুর মাকে দেখতে গিয়েছিলাম। একদিন আগে বলে এসেছিলাম, দোয়া করো তোমার ছেলে এবার জয়ী হবে। মা হিসেবে সে দোয়া করেছে। মা-বাবার দোয়া আল্লাহতায়ালা নিজে বিবেচনা করেন। পৃথিবীর সব মানুষ এমনকি ওলি-আবদেল সবার দোয়া প্রথমত যায় রসুল (সা.)-এর কাছে। রসুল (সা.) রাজিখুশি হলে তারপর সে দোয়া আল্লাহর দরবারে পৌঁছে। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ কথা দিয়েছেন, মা-বাবার ন্যায্য দোয়া তিনি কবুল করবেন। বাসাইলের ভোটে এবার তাই হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রচুর খুশি হয়েছে। এখন বাকিটা দেখা যাবে সামনের দিনে।

 

গত ১৬ মে আমরা দলগতভাবে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল কথা দিয়েছিলেন প্রভাবমুক্ত অবাধ নির্বাচন হবে। হয়েছেও তাই। এমনকি প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনাও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেজন্য আমরা সত্যিই খুশি হয়েছি, সাধারণ মানুষও খুশি হয়েছে। হ্যাঁ এটা সত্য, ছোট্ট একটা স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পরিপূরক নয়। এমনকি উদাহরণ দেওয়ার মতোও নয়। কিন্তু যদি সত্যিই জাতীয় নির্বাচন স্বতঃস্ফূর্ত হয় তাহলে দেশের সম্মান যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বর্তমান সরকার বিশেষ করে বোন শেখ হাসিনার সরকারেরও মর্যাদা বাড়বে। আশা করি বিষয়গুলো সরকার গভীরভাবে ভেবে দেখবে।

 

জানি না দেশের মানুষ এবার কতটা কি ঈদের বাজার করতে পারবে। কারণ সবকিছুতেই আগুন। নুন-তেল-চিনি-মরিচ-পিঁয়াজ-আদা-রসুন কোনো কিছুই ছোঁয়া যায় না। বাজারের কি যে দুরবস্থা একেবারেই বলার মতো নয়। এ অবস্থায়ও মানুষ টিকে আছে, কোনো না কোনোভাবে জীবন চলছে। এক বছর আগে হাজার টাকায় যা পাওয়া যেত এখন দুই হাজারেও তা পাওয়া যায় না। সব দিকেই মানুষের কষ্ট। অন্যদিকে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের ছাড়া অন্যকে বোঝেন না। অন্যদের অসুবিধা, দুঃখ-বেদনা ভাবার কোনো শক্তি নেই তাদের। তাদের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার অনেক কিছুই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে। ধনীকে আরও ধনী বানিয়েছে, গরিব আরও গরিব ও অসহায় হয়েছে। যেসব প্রজেক্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে চালাতে পারেন না সেগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিলেই হয়। বেসরকারি খাতে থাকলে তবু কিছু বলা যাবে। সাধারণ মানুষ চিৎকার ফাৎকার করতে পারবে।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com         সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com