সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘আমরা আমাদের জীবন কোনো পরিবারের কাছে বর্গা দিতে চাই না। পরিবারের কাছে বর্গা দিয়ে আমরা আবার কারও দাস হতে চাই না।’
রাজধানীর বাংলামোটরে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই সনদ: কৃষক বঞ্চনা ও ন্যায্যতার প্রশ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমাদের যারা আসল বাপ, আমাদের যারা জন্ম দিয়েছে—তারা হলো কৃষক। সত্যিকার অর্থে আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের রাজনীতি করতে চাই। আমরা আমাদের জীবন কোনো পরিবারের কাছে বর্গা দিতে চাই না। পরিবারের কাছে বর্গা দিয়ে আমরা আবার কারও দাস হতে চাই না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রনায়ক—যিনি ভবিষ্যতে হতে যাচ্ছেন—উনি বলেছেন, গণভোটের চেয়ে আলুর দামটা বেশি প্রাসঙ্গিক। উনার হয়তো অজ্ঞতা রয়েছে। উনি যদি বুঝতেন যে, উনি যাকে এমপি নমিনেশন দিচ্ছেন, সেই লোকটাই কৃষকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আলুর দামটা বাড়াচ্ছে।’
সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘আমাদের এখানে গত ৫৩ বছরে যে ফ্যামিলিগুলোর রাজত্ব কায়েম হয়েছিল, সেই জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করার জন্যই ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছিল। জমিদারির দলিল এখানে রয়েছে—আমাদের সংবিধান। জমিদারদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষাপটে আমাদের এই সংবিধান বানানো হয়েছিল। এখানে রাজনৈতিক জমিদারি রয়েছে, ব্যবসায়িক জমিদারি রয়েছে—সর্বক্ষেত্রে জমিদারি রয়েছে। এই জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করার জন্য আমাদের সংবিধানকে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে।’
এ সময় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমাদের একদিকে হলো জামায়াতের ভাইয়েরা, আরেক দিকে হলো বিএনপির ভাইয়েরা। একজন আজকে কর্মসূচি দেয়, আরেকজন কালকে কর্মসূচি দেয় এবং নিজেদের এই তর্কযুদ্ধে পড়ে মাঝখানে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ঢোকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য আমরা বলি, আমরা যদি সংবিধান ঠিক না করতে পারি, সংস্কার না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার যে রেজিমটা ছিল, সেটা বারবার ফেরত আসার চেষ্টা করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নৈতিক ভিত্তি নেই’ উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান থেকে যখন সরকার গঠন হয়েছিল, যখন ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আগের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করে—এটা আইনিভাবে সঠিক কাজ হলেও এই সরকারের নৈতিক ভিত্তি বলে কিছু নেই। আপনি যদি বলেন, এই সরকারের নৈতিক ভিত্তি কী? এই সরকারের নৈতিক ভিত্তি ছিল গণ-অভ্যুত্থান। এই সরকারের নৈতিক ভিত্তি ছিল বিপ্লব। এই সরকারকে যদি গণ-অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের কথা বলতে হয়, তাহলে সরকারের জনগণের সম্মুখে থেকেই শপথ পাঠ করা উচিত ছিল।’
আলোচনা সভায় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, বর্তমান সংবিধানে যে পদ্ধতিগুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রতিটি শাখাকে কুক্ষিগত ও রাজনীতিকীকরণ করতে পারেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি আছেন, ক্ষমতায় আছেন—শুধু তাঁদেরই সুবিধা দেয়। যাঁরা ক্ষমতার বলয়ের বাইরে আছেন, তাঁদের দেয় না।
সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ, কৃষক উইংয়ের যুগ্ম সমন্বয়কারী হাফসা জাহান প্রমুখ।







