শীতে পা ফাটা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা

শীত মৌসুমে পা ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু এই সাধারণ বিষয়ই অনেক সময় কপালে ফেলে চিন্তার ভাঁজ। মূলত শীত মৌসুমে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। ফলাফল- পা ফাটা, ফ্রস্ট বাইট, নখ ওঠার মতো সমস্যা। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির (এএডি) একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শীত মৌসুমে পায়ের সুরক্ষায় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।

 

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির (এএডি) চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক ব্লেক বলেছেন, ঠাণ্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া, খালি পায়ে হাঁটা, এবং দীর্ঘ সময় গরম পানিতে গোসল ইত্যাদি পা ফাটা, গোড়ালির সমস্যা এমনকি নখ ওঠার মতো সমস্যার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমন প্রদাহের কারণে পায়ের গোড়ালি ফাটা, চুলকানি এবং ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় অবহেলা কিংবা অযন্তে তা ভয়ানক ইনফেকশনের সৃষ্টি করতে পারে।

 

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পায়ের গোড়ালির ত্বক অনেক শক্ত। আর শীতের শুষ্কতা ও ধুলাবালির প্রকোপে গোড়ালি আরও শক্ত হয়ে যায়। ফলে পা ফাটার সমস্যা শুরু হয়। নিয়মিত যত্ন ও পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, থাইরয়েডের সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, ভিটামিনের অভাব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও পায়ের গোড়ালি ফাটতে পারে। এমনকি তা অনেক সময় পায়ে গভীর ক্ষত (গ্যাংগ্রিন) সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া, সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা বা চর্মরোগে ভোগা ব্যক্তিদের পায়ের সমস্যা বেশি হয়। মূলত বয়স্ক ব্যক্তিদের পা ফাটার সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পায়ের সুরক্ষা নিশ্চিন্ত করতে কীভাবে পায়ের যত্ন নিতে হবে জেনে নিন…

 

♦ শীত মৌসুমে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে গোসল করুন। বেশিক্ষণ গোসল করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, পা ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

♦ বাইরে থেকে ঘরে ফিরে পা ধুয়ে ফেলতে হবে। পা ধোয়ার জন্য সুগন্ধমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা পায়ের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখবে।

 

♦ গোসলের সময় পায়ের মরা কোষগুলো নরম হয়ে যায়, তখন পিউমিস স্টোন বা ফুট স্ক্রবার দিয়ে ঘষে মরা কোষ উঠিয়ে ফেলুন।

 

♦ গোসলের পর ৫ মিনিটের মধ্যে পায়ে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। এতে পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকবে।

 

♦ এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যাতে ১০% থেকে ২৫% ইউরিয়া, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে।

 

♦ ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ, রাতে অবশ্যই মোজা পরুন, যেন বিছানায় গ্লিসারিন কিংবা পেট্রোলিয়াম জেলি না লাগে।

 

♦ বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বা উলের মোজা ব্যবহার করা উচিত। আর এমন মোজা বেছে নিতে হবে যা পা উষ্ণ ও শুষ্ক রাখবে। মোজার পাশাপাশি জুতাও হওয়া চাই আরামদায়ক।

 

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ব্লেক আরও বলেন, শীতের সময় প্রচুর পানি পান করা উচিত। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শীতকালীন ফল, শাক-সবজি, বাদাম, স্নেহজাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। এর পরও পা ফাটার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ইতিহাসের বিশেষ সময় অতিবাহিত করছি: জামায়াত সেক্রেটারি

» আমাদের আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে : নাহিদ ইসলাম

» সাফে শ্রীলঙ্কাকে ৯ গোলে বিধ্বস্ত করলো বাংলাদেশ

» বিএনপি দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় : গয়েশ্বর

» আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদকে অপবিত্র করেছে : আলাল

» কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলা, স্যাটেলাইট চিত্রে যা দেখা গেলো

» ১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা উপদেষ্টা আসিফের

» তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জয়পুরহাটে বিএনপি নেতা ফয়সল আলীমের গণসংযোগ  

» বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলের বসতবাড়ি থেকে ৬ ফুট লম্বা পদ্মগোখরা উদ্ধার, এলাকায় চাঞ্চল্য

» মোরেলগঞ্জে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় শতভাগ ফেল

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শীতে পা ফাটা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা

শীত মৌসুমে পা ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা। কিন্তু এই সাধারণ বিষয়ই অনেক সময় কপালে ফেলে চিন্তার ভাঁজ। মূলত শীত মৌসুমে অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে ত্বক দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। ফলাফল- পা ফাটা, ফ্রস্ট বাইট, নখ ওঠার মতো সমস্যা। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির (এএডি) একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শীত মৌসুমে পায়ের সুরক্ষায় কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন।

 

আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির (এএডি) চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক ব্লেক বলেছেন, ঠাণ্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া, খালি পায়ে হাঁটা, এবং দীর্ঘ সময় গরম পানিতে গোসল ইত্যাদি পা ফাটা, গোড়ালির সমস্যা এমনকি নখ ওঠার মতো সমস্যার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমন প্রদাহের কারণে পায়ের গোড়ালি ফাটা, চুলকানি এবং ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় অবহেলা কিংবা অযন্তে তা ভয়ানক ইনফেকশনের সৃষ্টি করতে পারে।

 

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পায়ের গোড়ালির ত্বক অনেক শক্ত। আর শীতের শুষ্কতা ও ধুলাবালির প্রকোপে গোড়ালি আরও শক্ত হয়ে যায়। ফলে পা ফাটার সমস্যা শুরু হয়। নিয়মিত যত্ন ও পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, থাইরয়েডের সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, ভিটামিনের অভাব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণেও পায়ের গোড়ালি ফাটতে পারে। এমনকি তা অনেক সময় পায়ে গভীর ক্ষত (গ্যাংগ্রিন) সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া, সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা বা চর্মরোগে ভোগা ব্যক্তিদের পায়ের সমস্যা বেশি হয়। মূলত বয়স্ক ব্যক্তিদের পা ফাটার সমস্যা বেশি দেখা যায়।
পায়ের সুরক্ষা নিশ্চিন্ত করতে কীভাবে পায়ের যত্ন নিতে হবে জেনে নিন…

 

♦ শীত মৌসুমে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় নিয়ে গোসল করুন। বেশিক্ষণ গোসল করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, পা ফাটার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

♦ বাইরে থেকে ঘরে ফিরে পা ধুয়ে ফেলতে হবে। পা ধোয়ার জন্য সুগন্ধমুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করুন, যা পায়ের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখবে।

 

♦ গোসলের সময় পায়ের মরা কোষগুলো নরম হয়ে যায়, তখন পিউমিস স্টোন বা ফুট স্ক্রবার দিয়ে ঘষে মরা কোষ উঠিয়ে ফেলুন।

 

♦ গোসলের পর ৫ মিনিটের মধ্যে পায়ে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। এতে পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকবে।

 

♦ এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যাতে ১০% থেকে ২৫% ইউরিয়া, আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড বা স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে।

 

♦ ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ, রাতে অবশ্যই মোজা পরুন, যেন বিছানায় গ্লিসারিন কিংবা পেট্রোলিয়াম জেলি না লাগে।

 

♦ বাতাস চলাচল করে এমন কাপড় বা উলের মোজা ব্যবহার করা উচিত। আর এমন মোজা বেছে নিতে হবে যা পা উষ্ণ ও শুষ্ক রাখবে। মোজার পাশাপাশি জুতাও হওয়া চাই আরামদায়ক।

 

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ব্লেক আরও বলেন, শীতের সময় প্রচুর পানি পান করা উচিত। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। শীতকালীন ফল, শাক-সবজি, বাদাম, স্নেহজাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। এর পরও পা ফাটার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com