একজন বিচারক যদি তার মননে-চলনে ও বিশ্বাসে নিজেকে স্বাধীন মনে না করেন তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুদূরপরাহত। বিচারক ‘বিচারকাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই বিচার করবেন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিদায় নেওয়ার আগে এসব কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।
বৃহস্পতিবার তাকে বিদায়ী সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের তৃতীয় নারী বিচারপতি।
অবসরে যাওয়া এই বিচারপতি বলেন, আজকের এই শেষদিনে এই আশা নিয়ে বিচার অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে চাই যে, বিচারক বিচারকাজে সম্পূর্ণ স্বাধীন এই মূলমন্ত্র ধারণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। আর আপনারা (আইনজীবী) সহযোগিতা করবেন এই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই।
এর আগে সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ থেকে প্রথমে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, পরে বিচারপতি জিনাত আরা অবসরে যান।
কৃষ্ণা দেবনাথের জন্ম
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পুড্ডায় দীনেশ চন্দ্র দেবনাথের গ্রামের বাড়ি। তবে বাবার কর্মস্থল রাজবাড়ী মুনসেফ কোয়ার্টারে ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্ম নেন কৃষ্ণা দেবনাথ। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। রাজবাড়ীতে ভাইবোনের সঙ্গে কাটে শৈশব। বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় যেতে হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
শিক্ষা
১৯৭০ সালে সিলেট গার্লস স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করেন কৃষ্ণা দেবনাথ। লক্ষ্য যেহেতু বিচারক হওয়া, তাই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি জুর (আইনে স্নাতক) ও এম জুর (আইনে স্নাতকোত্তর) পাস করেন। পরে রাজশাহী জেলা আইন সমিতিতে শুরু করেন আইন পেশা।
২৬ বছর বয়সেই বিচারক
মাত্র ২৬ বছর বয়সে মুনসেফ (সহকারী জজ) হয়ে স্বপ্নের প্রথম ধাপটিতে পা রাখেন তিনি। বছরখানেক আইন পেশায় নিয়োজিত থাকার পর ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুনসেফ (বর্তমান সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পান কৃষ্ণা দেবনাথ। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের হস্তক্ষেপে ওই বছরই কৃষ্ণা দেবনাথকে অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক
বিভিন্ন জেলায় জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকার জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পান কৃষ্ণা দেবনাথ। তিনিই ঢাকা জেলার প্রথম নারী জজ। এই দায়িত্ব পালনকালে ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল তার নিয়োগ স্থায়ী হয়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন কৃষ্ণা দেবনাথ। আপিল বিভাগের তৃতীয় নারী বিচারপতি ছিলেন তিনি।
বিয়ে
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী স্বপন দত্তের সঙ্গে ১৯৮১ সালে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন কৃষ্ণা দেবনাথ। তার দুই মেয়েই শিক্ষকতা করছেন। বড় মেয়ে ড. আনন্দী কল্যাণ ও ছোট মেয়ে ড. ইন্দিরা কল্যাণ এবং তাদের স্বামীরা আমেরিকার পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
কৃষ্ণা দেবনাথের পছন্দ
কৃষ্ণা দেবনাথ মানুষকে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন এবং অবসরে গান শুনতে পছন্দ করেন। ২০০০ সালে তিনি কন্যা তোমার ঠিকানা কী? নামে প্রচারিত একটি নাটকের কাহিনী লেখেন।