ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল সেই দিনগুলোতে যেসব নাম প্রেরণা জুগিয়েছিল তার মধ্যে মীর মুগ্ধ অন্যতম। ‘পানি লাগবে পানি’ বলতে বলতে গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন মুগ্ধ। পরে আর ফেরেননি। সেই মুগ্ধর জন্মদিন আজ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মীর মুগ্ধের জন্মদিন স্মরণ করে আবেগে ভাসলেন ভাই মীর স্নিগ্ধ। আজ দুজনেরই জন্মদিন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে মীর স্নিগ্ধ লেখেন, ৯ অক্টোবর— এই দিনটিতেই আমি আর মুগ্ধ একসাথে পৃথিবীতে এসেছিলাম। এই দিনটিতে আমি জন্ম ও মৃত্যুকে একসাথে দেখতে পাই। আজকের দিনে যে দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি চোখের সামনে ভাসে, সেটি হলো— মুগ্ধকে কবরের মাটিতে শুইয়ে দিয়ে প্রথম মাটি ফেলার মুহূর্তটি। এখনো মনে হয়, এই তো সেদিনই তাকে কবর দিয়ে এসেছি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ফ্রিজিং ভ্যানে থাকার পরও যখন তাকে দাফন করা হয়, তার মাথা থেকে বের হওয়া রক্তে তার কাফনের কাপড় লাল হয়ে গিয়েছিল, সঙ্গে আমার পাঞ্জাবিটাও রক্তে ভিজে গিয়েছিল।
তিনি লিখেছেন, গত এক বছরে যে দায়িত্বগুলো পালন করেছি, সেগুলো করার চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণ সততা ও সর্বোচ্চ নিষ্ঠা দিয়ে। আমার কাছে প্রতিদিনই মনে হয়, আমাদের শহীদ ভাইয়েরা ওপার থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা যে স্বপ্নের বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, আমরা সেই স্বপ্নপূরণের জন্য কতটা কাজ করেছি— আল্লাহ সেই হিসাব তাদের মাধ্যমেই আমাদের থেকে নেবেন। অন্তত ওর (মুগ্ধর) কাছে গিয়ে বলতে পারবো…
স্নিগ্ধ লিখেছেন, আমি আমার সাধ্যমতো সততা আর মর্যাদার সাথে কাজ করেছি। গত এক বছরে অনেক তদবির, প্রস্তাব, সুযোগ এসেছে— অনেক কিছু করার সুযোগও পেয়েছি, কিন্তু কখনোই এসবের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ জন্মায়নি। অন্ততপক্ষে যেদিন মারা যাব, সেদিন এতটুকু শান্তি নিয়ে মরতে পারব যে আমি এক টাকা হারাম বা অবৈধভাবে ছুঁয়েও দেখিনি এবং ইনশাআল্লাহ সামনেও হবে না। এইটুকুই শান্তি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
তিনি লিখেছেন, কোথায় যেন দেখেছিলাম— মৃত্যুর পর সবার সাথে দেখা হলেও ভাইবোনদের নাকি কখনো দেখা হয় না। জানি না কতটুকু সত্যি, কখনো এই তথ্যটি যাচাই করার সাহসও হয়নি। তবে আমার আল্লাহ এতটা নিষ্ঠুর হবেন না। আমার বিশ্বাস, যার সাথে মায়ের পেট ভাগ করেছি, জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ভাগ করেছি, অন্তত একবার হলেও আমার সাথে তার (মুগ্ধর) দেখা করাবেন।
স্নিগ্ধ লিখেছেন, সেদিন আমি তাকে বলবো— ‘তুমিতো একটা নতুন বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়ে দিলে, কিন্তু আমি তোমার স্বপ্নের বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, কীভাবে মানুষ তোমার অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিতে চেয়েছে। এটা বলে যে স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ একজনই।’ আমি যতটুকু জানি, একটি কবরের উপর এক বছর পর আরেকটি কবর দেওয়া যায়। আমিও বলি— স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ একজনই; আমরা জন্মেছি একসাথে, আর আল্লাহ নসিবে রাখলে আমার মৃত্যুর পর আমাকেও যেন মুগ্ধর কবরেই শায়িত করা হয়।
শেষে স্নিগ্ধ লিখেছেন, শুভ জন্মদিন দেশের সকল মুগ্ধদের, যারা মুগ্ধদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার মিশন মনে-প্রাণে ধারণ করে এগিয়ে চলছে।