ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা লুটের চেষ্টা, ডাচ-বাংলার কর্মকর্তাসহ আটক ১০

ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) রাখা ওয়ালটন গ্রুপের সাড়ে ছয় কোটি ও ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তবে এই চেষ্টায় তারা ব্যর্থ। চক্রের মূল হোতা নিজেই একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডেরই কর্মকর্তা। পুলিশ এই ঘটনায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

 

পুলিশ জানিয়েছে, অনলাইনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তরের (টাকা ট্রান্সফার) বিশেষায়িত পদ্ধতি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবহার করে দুই ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি।

 

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন (৩৫)। তিনি ডাচ বাংলার কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছিলেন। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভুইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)।

 

পুলিশের দাবি, ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির হোসেন। যে সকল ব্যাংক হিসেবে (অ্যাকাউন্টে) টাকার পরিমাণ বেশি থাকতো তাদের ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তরের (ট্রান্সফারের) পরিকল্পনা করতেন তিনি।

 

ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা আরটিজিএস ফরমে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে ২৫ জানুয়ারি সকালে। বিডি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের আবেদনটি করা হয়।

 

আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হয় ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে। তিনি তখন ওয়ালটন গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন এখানে প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। এরপর টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।

 

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেপ্তার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।

 

আসাদুজ্জামান বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।

 

এটিই এই চক্রের প্রথম জালিয়াতি চেষ্টা কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেপ্তারের আগে এরা ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে এরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি না বোঝা যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা থাকে।  সূএ:ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে : শিক্ষামন্ত্রী

» মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে ১০ বাংলাদেশি আটক

» কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে আগুন

» সাত বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে আজ

» বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ২য় টি-টোয়েন্টি আজ

» রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে গলা কেটে হত্যা

» শাহ আলম হত্যায় ঘটনায় ৩ জন গ্রেফতার

» উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের

» অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ গাড়িতে মামলা

» সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা লুটের চেষ্টা, ডাচ-বাংলার কর্মকর্তাসহ আটক ১০

ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) রাখা ওয়ালটন গ্রুপের সাড়ে ছয় কোটি ও ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তবে এই চেষ্টায় তারা ব্যর্থ। চক্রের মূল হোতা নিজেই একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডেরই কর্মকর্তা। পুলিশ এই ঘটনায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

 

পুলিশ জানিয়েছে, অনলাইনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তরের (টাকা ট্রান্সফার) বিশেষায়িত পদ্ধতি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবহার করে দুই ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল চক্রটি।

 

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন (৩৫)। তিনি ডাচ বাংলার কারওয়ান বাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছিলেন। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভুইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)।

 

পুলিশের দাবি, ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির হোসেন। যে সকল ব্যাংক হিসেবে (অ্যাকাউন্টে) টাকার পরিমাণ বেশি থাকতো তাদের ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তরের (ট্রান্সফারের) পরিকল্পনা করতেন তিনি।

 

ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা আরটিজিএস ফরমে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে ২৫ জানুয়ারি সকালে। বিডি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের আবেদনটি করা হয়।

 

আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হয় ডাচ বাংলার বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে। তিনি তখন ওয়ালটন গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন এখানে প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। এরপর টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।

 

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেপ্তার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।

 

আসাদুজ্জামান বলেন, চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।

 

এটিই এই চক্রের প্রথম জালিয়াতি চেষ্টা কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়ালটন গ্রুপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেপ্তারের আগে এরা ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে এরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি না বোঝা যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা থাকে।  সূএ:ঢাকাটাইমস

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com