শবেকদরের তাৎপর্য ও করণীয়

ফারসি ‘শব’ মানে রাত আর আরবি ‘কদর’ মানে মাহাত্ম্য ও সম্মান। তাই শবেকদর হলো ‘মহিমান্বিত রজনী’। কদরের আরেক অর্থ তকদির বা ভাগ্য। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। সুরা আদ দুখানে আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরীকৃত হয়’। আয়াত ৪। অর্থাৎ এতে বোঝা গেল এখানে বরকতের রাত বলতে গেলে শবেকদরকেই বোঝানো হয়েছে। এ রাতকে ‘মুবারক’ বলার কারণ এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়।

 

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পয়গম্ব^রদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন তা সবই রমজানের বিভিন্ন তারিখে নাজিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফাসমুহ রমজানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, জবুর ১২ তারিখে, ইনজিল ১৮ তারিখে এবং কোরআন ২৫ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

 

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘রমজানে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ আয়াত ১৮৫। অর্থাৎ রসুল (সা.)-এর কাছে হেরা গুহায় যে রাতে জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি রমজানের একটি রাত। আর সে রাতটি হলো শবেকদর। সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে ধীরে ধীরে ২৩ বছর ধরে রসুল (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়। লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারি)।

 

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। এর চেয়ে একজন মুমিনের জীবনে আর কী বড় পুরস্কার হতে পারে? ‘লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার বুকে এত বেশি ফেরেশতা আগমন করেন যে তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো শেষ দশকে ইতিকাফ করা।

 

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন তুমি বল, “আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি)।

 

শবেকদর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান কদরের রাতটি কী? কদরের এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সুরা কদর, আয়াত ২-৩। এর চেয়ে আর বড় নিয়ামত মুসলমানদের জন্য কী হতে পারে? রমজানের এ রাতে আমরা বেশি করে যেন নফল ইবাদত করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসা এবং বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর তালাশ, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলওয়াত, দরুদ পাঠ, ইসতিগফার ও তওবা, বেশি বেশি দান-সদকা করা।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার  ।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যুদ্ধবিরতির পরও অমৃতসরে বিস্ফোরণ, জারি রেড অ্যালার্ট

» বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

» আজ রবিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ থাকবে

» প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা

» যারা আ.লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী: হাসনাত আবদুল্লাহ

» বর্তমান সরকারকে আমরা সফল দেখতে চাই : তারেক রহমান

» আমরা কোনও দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই: জিএম কাদের

» ‘আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’

» ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে : প্রেস সচিব

» একটা একটা লীগ ধর- স্লোগানে আ.লীগ নিষিদ্ধ চাইলেন রফিকুল ইসলাম মাদানী

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শবেকদরের তাৎপর্য ও করণীয়

ফারসি ‘শব’ মানে রাত আর আরবি ‘কদর’ মানে মাহাত্ম্য ও সম্মান। তাই শবেকদর হলো ‘মহিমান্বিত রজনী’। কদরের আরেক অর্থ তকদির বা ভাগ্য। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। সুরা আদ দুখানে আল্লাহ বলেন, ‘সে রাতে প্রত্যেক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরীকৃত হয়’। আয়াত ৪। অর্থাৎ এতে বোঝা গেল এখানে বরকতের রাত বলতে গেলে শবেকদরকেই বোঝানো হয়েছে। এ রাতকে ‘মুবারক’ বলার কারণ এ রাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাজিল হয়।

 

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পয়গম্ব^রদের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন তা সবই রমজানের বিভিন্ন তারিখে নাজিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফাসমুহ রমজানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ৬ তারিখে, জবুর ১২ তারিখে, ইনজিল ১৮ তারিখে এবং কোরআন ২৫ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

 

সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘রমজানে কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ আয়াত ১৮৫। অর্থাৎ রসুল (সা.)-এর কাছে হেরা গুহায় যে রাতে জিবরাইল (আ.) ওহি নিয়ে এসেছিলেন সেটি রমজানের একটি রাত। আর সে রাতটি হলো শবেকদর। সমগ্র কোরআন লওহে মাহফুজ থেকে ধীরে ধীরে ২৩ বছর ধরে রসুল (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়। লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রসুল (সা.) বলেন, ‘রমাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ (বুখারি)।

 

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কেউ ইমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম)। এর চেয়ে একজন মুমিনের জীবনে আর কী বড় পুরস্কার হতে পারে? ‘লাইলাতুল কদরে দুনিয়ার বুকে এত বেশি ফেরেশতা আগমন করেন যে তাদের সংখ্যা পাথরকুচির চেয়েও বেশি।’ (মুসনাদে আহমাদ)। লাইলাতুল কদর লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হলো শেষ দশকে ইতিকাফ করা।

 

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি জানতে পারি কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন তুমি বল, “আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি)।

 

শবেকদর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি কি জান কদরের রাতটি কী? কদরের এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সুরা কদর, আয়াত ২-৩। এর চেয়ে আর বড় নিয়ামত মুসলমানদের জন্য কী হতে পারে? রমজানের এ রাতে আমরা বেশি করে যেন নফল ইবাদত করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসা এবং বিজোড় রাতগুলোয় শবেকদর তালাশ, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলওয়াত, দরুদ পাঠ, ইসতিগফার ও তওবা, বেশি বেশি দান-সদকা করা।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার  ।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com