ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : মাজার হলো মিলন মেলা। গণতন্ত্রের আরেক নাম মিলন মেলা। যদি মিলনই না হয়, গণতন্ত্র কিভাবে হবে। যখন হাসিনাকে তাড়ানো হয়, তখনো মিলন মেলা হয়েছিল।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর ১-নম্বর শাহ আলীর মাজারে শতবর্ষী বটগাছ কাটা এবং সারাদেশে মাজারে হামলার প্রতিবাদে সেই আহত গাছের গোড়ায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মাজারের ভক্ত, আসিক, যে মাজারে আসলেই বরকত আছে, যে স্থানে আল্লাহর রহমত নেমে আসে। আজ এখানে যে গাছ কাটা হয়েছে, এটা মারাত্মক অপরাধ। এটা শুধু একটি গাছ নয়—এটা আশ্রয় ছিল বহু পাখি, প্রাণী, এমনকি আমাদের সাধনা ও স্মৃতিচারণার।
এই গাছের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাজারের স্মৃতি, আমাদের ভক্তি ও সাধনার ইতিহাস, পাগলের আশ্রয়, প্রকৃতির পাখি ও প্রাণী।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই গাছ কেটে আপনারা অপরাধ করেছেন। এটা ফৌজদারি অপরাধ, এর বিচার হবে। সরকারকেও আমরা জানিয়েছি।
বাংলাদেশের বহু প্রাণী ইতিমধ্যেই লাল তালিকাভুক্ত (বিলুপ্তির ঝুঁকিতে)। এই গাছ কাটার মধ্য দিয়ে আপনারা সেই প্রাণীদের আশ্রয় ধ্বংস করেছেন। আমাদের পরিবেশ মন্ত্রী, আমাদের সবার প্রিয় রেজা আপা—তিনি জানেন এই গাছ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হাজার বছর ধরে এখানে মানুষ জিকির করেছে, আল্লাহর নাম নিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টি—গাছ, পাখি, বাতাস—এসব যারা বোঝে না, তারা ইসলামের ধারার বাইরে চলে যায়।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা কোন সাহসে এই গাছ কাটলেন? আমরা তো এখানেই অনুষ্ঠান করেছি, সরকারের তিনজন উপদেষ্টা এসে এখানে বক্তব্য দিয়েছেন। আপনারা সেই উপদেষ্টাদেরও অসম্মান করেছেন, তাঁদের আসাকে অপমান করেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুও এখানে এসে শুনেছিলেন, বিস্মিত হয়েছিলেন—কীভাবে গান-সঙ্গীত বন্ধ করা হলো। অথচ আমরা আবার সেই গান-সাধনা শুরু করেছিলাম। আপনারা কেন তা বন্ধ করলেন? এটার উত্তর আপনাদের (মাজার কর্তৃপক্ষকে) দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কবি ও ফিল্মমেকার মোহাম্মদ রোমেল বলেন, ‘পীর মুর্শিদ, ফকির, দরবেশ, সাধু সন্তদের মাজার, দরগা, দরবার, আখড়া ইত্যাদি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভক্তি ও অপরকে ভালবাসা এবং অপরের সঙ্গে সম্বন্ধ তৈরির তরিকা খোঁজার আকুতির ওপর মাজার গড়ে ওঠে। মাজার তাই দীনতা প্রকাশের জায়গা, অহংকারের নয়। মাজার ভক্তি ও সাধনার ক্ষেত্র। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জুড়ে এই গণপরিসরগুলো একের পর এক ভাঙা হচ্ছে। মাজার ভাঙার এই মহোৎসব বাংলাদেশকে যেমন অস্থিতিশীল করে তুলছে, একই সঙ্গে বাংলার ভক্তি ও সাধনা, স্মৃতি ও ইতিহাসের ক্ষেত্রগুলোকেও ধ্বংস করবার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করছে।’