নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন

নওগাঁর মান্দায় যৌতুকের টাকা না পাওযায় ববিতা বানু (২২) নামে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

 

শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গগণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে।

নির্যাতিত ববিতা বানু সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের জালম গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। তার স্বামীর নাম জাহিদ আলী। তিনি মান্দা উপজেলার গগণপুর এলাকার শামীম উদ্দীন মোল্লার ছেলে। বর্তমানে ববিতা বানু নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 

গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭ মাস আগে জাহিদ আলীর সঙ্গে ববিতা বানুর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। বিয়ের তিন মাস পর আবারও যৌতুকের দাবিতে ববিতা বানুকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় জাহিদ আলী। পরিবার অসহায় হওয়ায় তিন মাসে ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে মেয়েকে পুনরায় স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার। এরপরও বিভিন্ন সময় ওই গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিক নির্যাতন। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, স্বামী জাহিদ আলী স্ত্রী ববিতা বানুকে মাটিতে ফেলে চুলের মুটি ধরে পেটের মধ্যে জোরে জোরে লাথি মারছে। ভিডিও শেষে দেখা যায়, স্থানীয়রা অনেক কষ্টে জাহিদ আলীকে আটকায়। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ওই রাতেই তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।

এ বিষয়ে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ ববিতা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু আমার পরিবার গরীব হওয়ায় দাবি করা যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারে না। এর ফলে অধিকাংশ সময় তাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমার পরিবার ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে শুক্রবার বিকেলে আরও টাকা দাবি করে স্বামী আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

 

ববিতা আরও বলেন, ‘থানা পুলিশকে জানাইনি। আর আমার পরিবারকেও বলেছি আপাতত যেন থানায় অভিযোগ বা মামলা না করা হয়। কারণ তাতে তাকে জেলে যেতে হতে পারে। আমি শান্তি চাই। জাহিদের সঙ্গেই ঘর করতে চাই। সবাই মিলে শালিশের মাধ্যমে বিষয়টা সুরাহা করা হোক। তবে সবার সামনে যে আমাকে এত আঘাত দিয়ে মেরেছে সেই ভুল যেন সে স্বীকার করে। আমি মেয়ে, আমার বাবা গরীব। আমি তো স্বামীর ঘর ছাড়তে পারবো না।

 

ববিতার মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। যৌতুকের সব টাকা দিতে না পারায় নির্যাতন করলো এভাবে আমার মেয়েটাকে। সবার সামনে মারছে মেয়েটাকে। মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। আমার মেয়ে থানায় অভিযোগ করতে দেয়নি। কিন্তু জাহিদের যেন শাস্তি হয়, এটা চাই। সে যে ভুল করেছে, অন্যায় করেছে, সেটা মাথা নিচু করে স্বীকার করতে হবে। এমন একটা পশুর সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি ভাবতে খারাপ লাগছে।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই গৃহবধূর স্বামী জাহিদ আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

চিকিৎসক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, ‘গৃহবধূ ববিতার শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাতের দাগ আছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি তবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ হতে আরও বেশ কয়েক দিন লাগবে।

 

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে থানায় অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে এখনই থানা থেকে খোঁজ নেওয়া হবে। ওই গৃহবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি সহয়তা চাইলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

» আজ শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকা-মার্কেট বন্ধ

» জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ মানবিক দেশ গড়তে চান তারেক রহমান

» ‘আর কারও যেন মাগুরার শিশুটির মতো করুণ পরিণতি না হয়’

» শেখ হাসিনার ৫৭ বার ফাঁসি হওয়া উচিৎ: আমান

» ‘সৌদি অর্থ দেয়নি, দ্বিগুণের বেশি টাকা ব্যয় প্রতিটি মডেল মসজিদে’

» হাসিনাকে ফেরত চাওয়া চিঠির জবাব এখনো দেয়নি ভারত : মুখপাত্র

» জামায়াত শাপলাকে, আওয়ামী লীগ শাহবাগকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করেছে: মাহফুজ আলম

» সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মতামত দেবে বিএনপি : সালাহউদ্দিন

» ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : প্রিন্স

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন

নওগাঁর মান্দায় যৌতুকের টাকা না পাওযায় ববিতা বানু (২২) নামে এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

 

শুক্রবার দুপুরে উপজেলার গগণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার (৯ এপ্রিল) রাতে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে।

নির্যাতিত ববিতা বানু সদর উপজেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের জালম গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। তার স্বামীর নাম জাহিদ আলী। তিনি মান্দা উপজেলার গগণপুর এলাকার শামীম উদ্দীন মোল্লার ছেলে। বর্তমানে ববিতা বানু নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 

গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭ মাস আগে জাহিদ আলীর সঙ্গে ববিতা বানুর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। বিয়ের তিন মাস পর আবারও যৌতুকের দাবিতে ববিতা বানুকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় জাহিদ আলী। পরিবার অসহায় হওয়ায় তিন মাসে ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে মেয়েকে পুনরায় স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার। এরপরও বিভিন্ন সময় ওই গৃহবধূর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিক নির্যাতন। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, স্বামী জাহিদ আলী স্ত্রী ববিতা বানুকে মাটিতে ফেলে চুলের মুটি ধরে পেটের মধ্যে জোরে জোরে লাথি মারছে। ভিডিও শেষে দেখা যায়, স্থানীয়রা অনেক কষ্টে জাহিদ আলীকে আটকায়। পরে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ওই রাতেই তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়।

এ বিষয়ে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ ববিতা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু আমার পরিবার গরীব হওয়ায় দাবি করা যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারে না। এর ফলে অধিকাংশ সময় তাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমার পরিবার ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে শুক্রবার বিকেলে আরও টাকা দাবি করে স্বামী আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেন। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

 

ববিতা আরও বলেন, ‘থানা পুলিশকে জানাইনি। আর আমার পরিবারকেও বলেছি আপাতত যেন থানায় অভিযোগ বা মামলা না করা হয়। কারণ তাতে তাকে জেলে যেতে হতে পারে। আমি শান্তি চাই। জাহিদের সঙ্গেই ঘর করতে চাই। সবাই মিলে শালিশের মাধ্যমে বিষয়টা সুরাহা করা হোক। তবে সবার সামনে যে আমাকে এত আঘাত দিয়ে মেরেছে সেই ভুল যেন সে স্বীকার করে। আমি মেয়ে, আমার বাবা গরীব। আমি তো স্বামীর ঘর ছাড়তে পারবো না।

 

ববিতার মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। যৌতুকের সব টাকা দিতে না পারায় নির্যাতন করলো এভাবে আমার মেয়েটাকে। সবার সামনে মারছে মেয়েটাকে। মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। আমার মেয়ে থানায় অভিযোগ করতে দেয়নি। কিন্তু জাহিদের যেন শাস্তি হয়, এটা চাই। সে যে ভুল করেছে, অন্যায় করেছে, সেটা মাথা নিচু করে স্বীকার করতে হবে। এমন একটা পশুর সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি ভাবতে খারাপ লাগছে।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই গৃহবধূর স্বামী জাহিদ আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

চিকিৎসক জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, ‘গৃহবধূ ববিতার শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাতের দাগ আছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি তবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ হতে আরও বেশ কয়েক দিন লাগবে।

 

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে থানায় অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে এখনই থানা থেকে খোঁজ নেওয়া হবে। ওই গৃহবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি সহয়তা চাইলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com