অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীতে নির্বিচারে চলছে জাটকা ইলিশ নিধন। মার্চ ও এপ্রিল—এই দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জাল ফেলে জাটকা শিকার করছে জেলেরা। এতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু আড়তদার ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রামগতি কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করছে। এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে হাটবাজার ও আড়তে। সংরক্ষণ করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
উত্তর চরবংশী এলাকার কয়েকজন জেলে জানান, আড়ৎ থেকে নেওয়া অগ্রিম ঋণ টাকা পরিশোধ করতেই তারা বাধ্য হয়ে মাছ ধরছেন। তবে এবছর জাটকা নিধনের মাত্রা বেড়েছে বলেও স্বীকার করেন তারা।
ওই উপজেলার সেলিম বকাউল ও বারেক নামে দুই মাঝি বলেন, ২/৩ দিন ধরে মেঘনা নদীর গজারিয়া এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করছেন। সন্ধ্যার পর গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জাটকাগুলো বিক্রি করা হয়।
রামগতির বড়খেরী এলাকার জেলে মান্নান এ প্রতিবেদককে জানায়-‘নদীতে এখন জাটকা ইলিশ ধরা পড়ে বেশি। প্রশাসনের লোকজন ধরলে তদবির করে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। না হলে চালান করে দেয়। নৌপুলিশ ও কোষ্টগার্ড আমাদের বাক্স থেকে বিকাশ নেয়।’
রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ-উজ-জামান জানিয়েছেন- আমরা গভীর রাতেও অভিজান করি। স্পীডবোট নেই তবুও ট্রলারে রাতের অন্ধকারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়াই অভিজানে যেতে হয়। নৌপুলিশকে জানিয়েও পুলিশ পাওয়া যায় না। আমরা নিজেরাই পুলিশ ছাড়া অভিজান করি।
রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে, নিয়মিত অভিযানও চলছে। তবে কিছু অসাধু জেলে এখনো জাটকা শিকারের চেষ্টা করছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মৎস্য অফিসারকে অভিজানে নৌপুলিশ না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বড়খেরী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সাংবাদিক দেখে বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে বলেন -আপনারা নদীতে যান,দেখবেন পুরো নদী ফাঁকা। কাউকে পাবেন না।
এসময় সংবাদকর্মীরা সফিকুর রহমানকে মাছ ও গলদা চিংড়ি রেণু আহরণের ভিডিও চিত্র দেখাতে চাইলে তিনি সেটাও দেখতে চাননি। বাহিরে চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে মোবাইলে ফেসবুক দেখছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনার একটি নির্দিষ্ট অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ্মীপুরের রামগতি মেঘেনা শেষ সীমানা থেকে চাঁদপুরের মতলবের ষাটনল ও পদ্মার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে।