ফিতরা কখন দেওয়া উচিত?

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক:সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এর দুটি তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ১. অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হলো তা পূরণের জন্য। ২. নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির: ২/২৮১) এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৯২)

ইসলামি শরিয়তমতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। সদকাতুল ফিতর নির্ধারণের মাপকাঠি দুটি। ১. ‘এক সা’ ২.‘অর্ধ সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’ (তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি)। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’ (এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি) (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠ- ১৮) আমাদের দেশে সতর্কতামূলক এক সা = তিন কেজি ৩০০ গ্রাম, আর আধা সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম হিসাব করা হয়। এ বছর (২০২৫ সালের) সদকাতুল ফিতরের সর্বনিম্ন পরিমাণ (আটার দামে) ১১০ টাকা। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের দামে (প্রত্যেকটি ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের টাকা) ফিতরা দেওয়া সুন্নত।

 

সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) লোকজনকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)

অবশ্য জাকাতের মতো রমজান মাসেও তা আদায় করা যায়। কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েকদিন আগেই ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে (রহ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দুয়েকদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)

 

তবে, ঈদের পরে ফিতরা দিলে সেটা সাধারণ দানের মতো সওয়াব হবে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদকা গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। (আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম হলো- অবস্থানরত দেশের বাজারমূল্য হিসেবে ফিতরা দেওয়া। এটা জরুরি। অর্থাৎ কেউ যদি সৌদি আরবে ঈদ করেন, তবে তাকে সৌদি আরবের বাজারমূল্য হিসাবে ফিতরা আদায় করতে হবে এবং তার নাবালক সন্তানদের ফিতরা যেহেতু তার ওপর ওয়াজিব সেহেতু তাদের ফিতরাও সৌদি আরবের বাজারমূল্য হিসেবে দিতে হবে, যদিও নাবালক সন্তানরা বাংলাদেশে অবস্থান করে। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত সাবালক সন্তান ও স্ত্রীদের ফিতরা বাংলাদেশের বাজারমূল্য হিসেবে দেবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৫৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৯০)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» হত্যাসহ ১৮ মামলার আসামি কেরানীগঞ্জে গ্রেপ্তার

» আমরা কখনোই বলিনি নির্বাচনের পরে সংস্কার : মির্জা ফখরুল

» বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

» ১২ ঘণ্টা গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকবে যেসব এলাকায়

» চরমপন্থার সুযোগ কাউকে নিতে দেওয়া হবে না : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» স্মার্টফোনে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা পাবেন যেভাবে

» শরীরে ‘ভিটামিন ডি’ যোগ করার পন্থা

» মাইগ্রেন একটি ঝুঁকিপূর্ণ স্নায়বিক অবস্থা

» কফিতে মশগুল ব্রিটেনে পলাতক সাবেক মন্ত্রীরা!

» পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হাসপাতালে ভর্তি, আছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ফিতরা কখন দেওয়া উচিত?

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক:সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এর দুটি তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ১. অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হলো তা পূরণের জন্য। ২. নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির: ২/২৮১) এমনকি পবিত্র রমজানের শেষ দিনেও যে নবজাতক দুনিয়ায় এসেছে কিংবা কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার পক্ষ থেকেও সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৯২)

ইসলামি শরিয়তমতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। সদকাতুল ফিতর নির্ধারণের মাপকাঠি দুটি। ১. ‘এক সা’ ২.‘অর্ধ সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’ (তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি)। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’ (এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি) (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠ- ১৮) আমাদের দেশে সতর্কতামূলক এক সা = তিন কেজি ৩০০ গ্রাম, আর আধা সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম হিসাব করা হয়। এ বছর (২০২৫ সালের) সদকাতুল ফিতরের সর্বনিম্ন পরিমাণ (আটার দামে) ১১০ টাকা। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনিরের দামে (প্রত্যেকটি ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের টাকা) ফিতরা দেওয়া সুন্নত।

 

সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) লোকজনকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)

অবশ্য জাকাতের মতো রমজান মাসেও তা আদায় করা যায়। কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েকদিন আগেই ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে (রহ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দুয়েকদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)

 

তবে, ঈদের পরে ফিতরা দিলে সেটা সাধারণ দানের মতো সওয়াব হবে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাজের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদকা গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। (আবু দাউদ: ১৬০৯)

 

প্রবাসীদের ফিতরা দেওয়ার নিয়ম হলো- অবস্থানরত দেশের বাজারমূল্য হিসেবে ফিতরা দেওয়া। এটা জরুরি। অর্থাৎ কেউ যদি সৌদি আরবে ঈদ করেন, তবে তাকে সৌদি আরবের বাজারমূল্য হিসাবে ফিতরা আদায় করতে হবে এবং তার নাবালক সন্তানদের ফিতরা যেহেতু তার ওপর ওয়াজিব সেহেতু তাদের ফিতরাও সৌদি আরবের বাজারমূল্য হিসেবে দিতে হবে, যদিও নাবালক সন্তানরা বাংলাদেশে অবস্থান করে। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত সাবালক সন্তান ও স্ত্রীদের ফিতরা বাংলাদেশের বাজারমূল্য হিসেবে দেবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৫৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৯০)

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com