পল্লীকবি জসিম উদদীনের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালে ১৪ মার্চের এই দিনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আবহমান গ্রাম-বাংলার এই কবি। জন্মস্থান ফরিদপুরে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে কবির মৃতু্বাষির্কী।
১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি কবি জসীম উদদীন ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে কবির নিজ বাড়ি। কবির পিতার নাম মৌলভী আনছার উদ্দিন মোল্লা। মাতার নাম আমেনা খাতুন। গোবিন্দপুর হালে অম্বিকাপুর গ্রামের কুমার নদীর তীরে কবি ছেলেবেলা কাটিয়েছেন।
১৯২১ সালে কবির লেখা ‘মিলন গান’ নামে একটি কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’ প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে কবির প্রতিভা প্রভাব বিস্তার লাভ করে। তার চিন্তা-চেতনায় ছিল দিনমজুর খেটে খাওয়া সংগ্রামী মানুষের কথা।
ছাত্রাবস্থায় তার ১৮টি কবিতা, পাঁচটি গ্রামের গান প্রকাশ পায়। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ ও ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থ। তিনি এই দুটি বই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপহার হিসেবে দেন।
১৯২৪ সালে আইএ পাস করেন কবি জসীম উদদীন। তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৩ সালে ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে লাহিড়ী রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে যোগদানের পরই তার কাব্যগ্রন্থ ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ প্রকাশিত হয়।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সালে দশম শ্রেণির ছাত্রী মমতাজ-এর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের চার ছেলে-দুই মেয়ে আছে।
লোকসংস্কৃতির সুগভীর অনুরাগী ও গবেষক ও শ্রেষ্ঠতম গীতিকার হলেন কবি জসীমউদ্দীন। ১৯৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তার ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’ নামে তার রাখালী গানের গ্রন্থ। এতে ‘নিশিতে যাইও ফুল বনে’, ‘আরে ও রঙিলা নায়ের মাঝি’, ‘ও তুই ঘরে রইতে দিলি না আমারে’-সহ ৪৭টি গান স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে আরও রয়েছে- ‘নদীর কূল নাই কিনার নাইরে’, ‘আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না’, ‘উজান গাঙের নাইয়া’, ইত্যাদি গান।
১৯৬৮ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি প্রদান করে। এছাড়াও, ১৯৭৬ বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদকে পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
১৯৭৬ সালের ১৪ মৃত্যুর পর কবির অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাদির কবরের পাঁশে দাফন করা হয়েছে জসীম উদদীনকে।