জুলাই আন্দোলনের সময় মামার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ডিজিএফআই: হাসনাত

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে সমন্বয়ক আমাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও মামার বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ডিজিএফআই।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জবানবন্দিতে তিনি এ কথা বলেন।

১৭ জুলাই রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান হাসনাত।

গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২২তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনি তার মামার বাসায় যান। হল বন্ধ করায় সমন্বয়ক সারজিস আলমও (এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) তার মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে তার মামার বাসা থেকে তাকে ও সারজিসকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিজিএফআই। তারা যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ১৭ জুলাই রাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হয়। আমাদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পদ্মায় ঢোকেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সভা করতে চাপ দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ দিয়ে শুধু সভা করতে বলেন।

তিনি বলেন, অন্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা না বলে তারা কোনো ধরনের বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই পীড়াপিড়ি করে তাদের বৈঠকে বসাতে ব্যর্থ হলে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান।

বৈঠক না করায় আমাদের ওপর ডিজিএফআই ক্ষুব্ধ হয় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ডিজিএফআই আমাদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় সেফ হাউস নামে একটি গোপন স্থানে নেওয়া হয়। আমাদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত।

তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই ভোরে (ফজরের আজানের সময়) ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা আমাকে বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপির লাখো জনতার সমাবেশ ১০ মিনিটে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তাদের আন্দোলনও একইভাবে নষ্ট করতে তার সময় লাগবে না।

জবানবন্দিতে হাসনাত বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা আমাদের মুঠোফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের (সমন্বয়ক) অবস্থা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমার ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মুঠোফোনে তিনি হাসিবের অবস্থান জানতে চান। হাসিব জানান, তিনি চানখাঁরপুল এলাকা আন্দোলনে আছেন। ডিজিএফআই তাকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে আনে এবং আমাদের সঙ্গে আটকে রাখে। সেখানে আমাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদ্রাসাছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তার বোন মাদ্রাসার ছাত্রী হওয়ায় তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। আমার ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করায় আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।

প্রসঙ্গত, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন- রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘হাদির হত্যাকারীর সবশেষ অবস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই’

» ইসির নিবন্ধন সনদ পেল তারেকের আমজনতার দল

» ওসমান হাদিকে হত্যা করে জুলাইকে পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না: শিবির সভাপতি

» কোনো সরকার সমালোচনামূলক সংবাদ নিতে পারে না: মাহফুজ আনাম

» তারেক রহমান আরও আগে ফিরলে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারতো: প্রথম আলো সম্পাদক

» অতীতে ধ্বংসের কিনারা থেকে দেশকে রক্ষা করেছে বিএনপি: তারেক রহমান

» হাদির জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে জাতি হতাশ: গোলাম পরওয়ার

» ভিন্নমত থাকতে পারে, সবকিছু মিলেই গণতান্ত্রিক সমাজ : রিজভী

» ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

» কোনো ষড়যন্ত্রে নির্বাচন বন্ধ হবে না : আমানউল্লাহ আমান

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জুলাই আন্দোলনের সময় মামার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ডিজিএফআই: হাসনাত

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে সমন্বয়ক আমাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও মামার বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ডিজিএফআই।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জবানবন্দিতে তিনি এ কথা বলেন।

১৭ জুলাই রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান হাসনাত।

গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২২তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনি তার মামার বাসায় যান। হল বন্ধ করায় সমন্বয়ক সারজিস আলমও (এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) তার মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে তার মামার বাসা থেকে তাকে ও সারজিসকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিজিএফআই। তারা যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ১৭ জুলাই রাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হয়। আমাদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পদ্মায় ঢোকেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সভা করতে চাপ দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ দিয়ে শুধু সভা করতে বলেন।

তিনি বলেন, অন্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা না বলে তারা কোনো ধরনের বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই পীড়াপিড়ি করে তাদের বৈঠকে বসাতে ব্যর্থ হলে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান।

বৈঠক না করায় আমাদের ওপর ডিজিএফআই ক্ষুব্ধ হয় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ডিজিএফআই আমাদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় সেফ হাউস নামে একটি গোপন স্থানে নেওয়া হয়। আমাদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত।

তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই ভোরে (ফজরের আজানের সময়) ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা আমাকে বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপির লাখো জনতার সমাবেশ ১০ মিনিটে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তাদের আন্দোলনও একইভাবে নষ্ট করতে তার সময় লাগবে না।

জবানবন্দিতে হাসনাত বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা আমাদের মুঠোফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের (সমন্বয়ক) অবস্থা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আমার ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মুঠোফোনে তিনি হাসিবের অবস্থান জানতে চান। হাসিব জানান, তিনি চানখাঁরপুল এলাকা আন্দোলনে আছেন। ডিজিএফআই তাকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে আনে এবং আমাদের সঙ্গে আটকে রাখে। সেখানে আমাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদ্রাসাছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তার বোন মাদ্রাসার ছাত্রী হওয়ায় তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। আমার ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করায় আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।

প্রসঙ্গত, আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন- রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com