পুতিনকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দিয়ে‌ ‌‘কিছুই’ পায়নি ভারত?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফর কেন্দ্র করে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কে নতুন আড়ম্বর লক্ষ্য করা গেছে। ঘটা করেই হয়েছে সব আয়োজন। কেবল প্রাপ্তি নয় দেখানোর একটা ব্যাপার ছিলো পুরো ঘটনাজুড়ে। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো বাণিজ্য। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলির কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে থাকা পুতিনের জন্য ভারতের এই লাল গালিচা অভ্যর্থনা শক্তিশালী বার্তা। অন্যদিকে, মার্কিন শুল্কের চাপে থাকা ভারতের কাছেও রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা ছিল সময়ের দাবি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রোটোকল ভেঙে পুতিনকে বিমানবন্দর থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। দুই নেতার ব্যক্তিগত বোঝাপড়া এবং ভারতের কাছে এই সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতেই এই কাণ্ড।

বৈঠক শেষে মোদি ও পুতিনের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। উভয় দেশই স্বীকার করেছে যে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনও পূর্ণ সম্ভাবনাকে ছুঁতে পারেনি। ২০২২ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৮.৭২ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যার সিংহভাগই জুড়েই ছিলো তেল বেচাকেনা।

আমেরিকার চাপ সত্ত্বেও পুতিন ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ক কেনো চুক্তির প্রকাশ্য ঘোষণা আসেনি। এই আশ্বাস ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও একইসাথে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের যে চাপ রয়েছে, তা মোদিকে কঠিন কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করবে।

খনিজ, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং ওষুধ শিল্পে সহযোগিতার জন্য বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কালুগা অঞ্চলে একটি রুশ-ভারতীয় ওষুধ কারখানা তৈরির ঘোষণা রয়েছে।

মোদি ইউরেশীয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (যার সদস্য রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং আর্মেনিয়া) এর সাথে ভারতের সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে দুই দেশের বাজার পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত হবে।

যদিও কোনো বিগ টিকেট প্রতিরক্ষা চুক্তি (যেমন সু-৫৭ যুদ্ধবিমান বা এস-৫০০) ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাশিয়া ভারতের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবেই থাকছে। ভারত সম্ভবত তাদের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বাকি ইউনিটগুলির সময়মতো সরবরাহের ওপর জোর দিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা চলছে। তাই ভারতের মতো একটি বিশ্বশক্তি থেকে এই জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা পাওয়া পশ্চিমা দেশগুলির প্রতি কড়া বার্তা। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই বিশাল রাজকীয় অভ্যর্থনা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে।

মার্কিন শুল্কারোপের পর ভারতে রুশ তেলের আমদানি কমেছে। পুতিন ভারতের বাজারে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের কথা বলে ভারতকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মৃদু চাপ দিয়েছেন, যা মস্কোর নিষেধাজ্ঞা কবলিত অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।

পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাশিয়া এখন এশীয় বাজার বিশেষত ভারতের দিকে ঝুঁকছে। দুই দেশের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো। এ জন্য তারা কেবল তেলের ওপর নির্ভর করতে চায় না।

দিল্লি বৈঠকে আড়ম্বর ছিল কিন্তু ব্লকবাস্টার চুক্তির অভাবও ছিল চোখে পড়ার মতো। দৃশ্যত, ভারত ও রাশিয়া উভয়েই তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে চাইছে। ভারত তার পুরনো বন্ধু রাশিয়া ও নতুন কৌশলগত মিত্র আমেরিকার মধ্যে এক কঠিন ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে। তবে, পুতিন-মোদি তাদের অনানুষ্ঠানিক নৈশভোজে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা যায়; যার ফল হয়তো আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে।  সূত্র: বিবিসি

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ

» একটি মহল নির্বাচন বানচাল করে দেশে এক-এগারো ঘটাতে চায় : রাশেদ খান

» দেশের প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন: বাবর

» শনিবার যেসব এলাকায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না

» নতুন বাংলাদেশ গড়তে খালেদা জিয়ার সুস্থতা অপরিহার্য: আমানউল্লাহ আমান

» জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ১২ দলীয় জোট

» ছাত্রশক্তির নেত্রীকে বিয়ে করলেন এনসিপির হান্নান মাসউদ

» ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি: জামায়াত আমির

» খালেদা জিয়াকে দেখতে আবারও হাসপাতালে জুবাইদা রহমান

» ঐতিহাসিকভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু: তারেক রহমান

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

পুতিনকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দিয়ে‌ ‌‘কিছুই’ পায়নি ভারত?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক :  প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিল্লি সফর কেন্দ্র করে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কে নতুন আড়ম্বর লক্ষ্য করা গেছে। ঘটা করেই হয়েছে সব আয়োজন। কেবল প্রাপ্তি নয় দেখানোর একটা ব্যাপার ছিলো পুরো ঘটনাজুড়ে। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো বাণিজ্য। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলির কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে থাকা পুতিনের জন্য ভারতের এই লাল গালিচা অভ্যর্থনা শক্তিশালী বার্তা। অন্যদিকে, মার্কিন শুল্কের চাপে থাকা ভারতের কাছেও রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা ছিল সময়ের দাবি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রোটোকল ভেঙে পুতিনকে বিমানবন্দর থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। দুই নেতার ব্যক্তিগত বোঝাপড়া এবং ভারতের কাছে এই সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতেই এই কাণ্ড।

বৈঠক শেষে মোদি ও পুতিনের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। উভয় দেশই স্বীকার করেছে যে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনও পূর্ণ সম্ভাবনাকে ছুঁতে পারেনি। ২০২২ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৮.৭২ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যার সিংহভাগই জুড়েই ছিলো তেল বেচাকেনা।

আমেরিকার চাপ সত্ত্বেও পুতিন ভারতকে নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ক কেনো চুক্তির প্রকাশ্য ঘোষণা আসেনি। এই আশ্বাস ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও একইসাথে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের যে চাপ রয়েছে, তা মোদিকে কঠিন কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধ্য করবে।

খনিজ, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং ওষুধ শিল্পে সহযোগিতার জন্য বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কালুগা অঞ্চলে একটি রুশ-ভারতীয় ওষুধ কারখানা তৈরির ঘোষণা রয়েছে।

মোদি ইউরেশীয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন (যার সদস্য রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং আর্মেনিয়া) এর সাথে ভারতের সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে দুই দেশের বাজার পরস্পরের কাছে উন্মুক্ত হবে।

যদিও কোনো বিগ টিকেট প্রতিরক্ষা চুক্তি (যেমন সু-৫৭ যুদ্ধবিমান বা এস-৫০০) ঘোষণা করা হয়নি। তবে রাশিয়া ভারতের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবেই থাকছে। ভারত সম্ভবত তাদের এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বাকি ইউনিটগুলির সময়মতো সরবরাহের ওপর জোর দিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়াকে একঘরে করার চেষ্টা চলছে। তাই ভারতের মতো একটি বিশ্বশক্তি থেকে এই জাঁকজমকপূর্ণ অভ্যর্থনা পাওয়া পশ্চিমা দেশগুলির প্রতি কড়া বার্তা। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই বিশাল রাজকীয় অভ্যর্থনা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে।

মার্কিন শুল্কারোপের পর ভারতে রুশ তেলের আমদানি কমেছে। পুতিন ভারতের বাজারে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের কথা বলে ভারতকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মৃদু চাপ দিয়েছেন, যা মস্কোর নিষেধাজ্ঞা কবলিত অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।

পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার জন্য রাশিয়া এখন এশীয় বাজার বিশেষত ভারতের দিকে ঝুঁকছে। দুই দেশের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো। এ জন্য তারা কেবল তেলের ওপর নির্ভর করতে চায় না।

দিল্লি বৈঠকে আড়ম্বর ছিল কিন্তু ব্লকবাস্টার চুক্তির অভাবও ছিল চোখে পড়ার মতো। দৃশ্যত, ভারত ও রাশিয়া উভয়েই তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে চাইছে। ভারত তার পুরনো বন্ধু রাশিয়া ও নতুন কৌশলগত মিত্র আমেরিকার মধ্যে এক কঠিন ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে। তবে, পুতিন-মোদি তাদের অনানুষ্ঠানিক নৈশভোজে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা যায়; যার ফল হয়তো আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে।  সূত্র: বিবিসি

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com