মৃত ব্যক্তির সমালোচনা যে কারণে ইসলামে নিষিদ্ধ

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ইসলামে মানুষের মর্যাদা আলাদা। মৃতব্যক্তিকে নিয়ে অশোভনীয় আচরণ করা যাবে না। একজন মুসলমান মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়। যার অর্থ, ‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।’ বন্ধু হোক বা শত্রু—কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। কারণ, সব মুসলমান ভাই ভাই।

 

মৃতব্যক্তির দোষ-ত্রুটি থাকলেও মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে আমার-আপনারও দোষ-ত্রুটি আছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই মৃত ব্যক্তির সমালোচনা নয়। বরং সম্মানের সঙ্গে মৃত ব্যক্তির জানাজা, কবর জেয়ারত করতে বলা হয়েছে হাদিসে। যাতে আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করে নেক কাজ করতে পারি।

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সবার উচিত—মৃত ব্যক্তির নেক কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করা। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের নেক কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, তোমরা মৃতদেরকে গালমন্দ করবে না, কারণ তারা যে কর্ম করেছিল সেগুলোর কাছে তারা পৌঁছে গেছে। (বুখারি: ১৩৯৩)

 

মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া করা এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করা একজন মুমিনের কর্তব্য। হাদিস অনুযায়ী, যে তার ভাইয়ের দোষ আড়াল করবে, কেয়ামতের কঠিনতম পরিস্থিতিতে আল্লাহ তার দোষও গোপন রাখবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম: ২৫১০, আহমদ: ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫)

 

অন্যদিকে যারা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং ফাঁস করে, তাদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি, ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের করো না। যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও প্রকাশ করে দেয়, স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেন তাকে নিজের বাড়িতেই লাঞ্ছিত করেন।’ (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

 

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের দোষ-ত্রুটিগুলো খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আর এই সুযোগটি অনেকে গ্রহণ করে কারো মৃত্যুর পর তার দোষ-ত্রুটি প্রচার করার জন্য। কত জঘন্য আচরণ চিন্তা করুন! তারা মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। তাদের জানা উচিত, ইসলামি শরিয়তে মানুষ হলো এমন অনন্য সৃষ্টি, জীবিত হোক বা মৃত—একই সম্মান ও মর্যাদা লাভ করবে। এটি তার অধিকার। ‘মানবসন্তান জীবিত বা মৃত হোক সম্মানের পাত্র বলে গণ্য হবে।’ (আল মাবসুত: ৫৯/২)

 

অতএব, মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। উপরন্তু তার দাফন-কাফন, গোসল, জানাজা ইত্যাদি মর্যাদার সঙ্গে করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির প্রতি উত্তম আচরণ করা, তার নেক কাজের আলোচনা করা, তার অধিকার নিশ্চিত করা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» চাঁদাবাজ-দখলদারদের বিএনপি বরদাশত করে না: রিজভী

» সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ফের পেছালো

» ৯০ বছর পূর্তিতে কুসুম হয়ে আসছেন জয়া

» যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না: অর্থ উপদেষ্টা

» অন্তরঙ্গ দৃশ্যে রাজি না হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন যারা

» নগদ টাকা, ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফসহ পাখি জসিম গ্রেফতার

» পৃথক অভিযান চালিয়ে বিদেশি মদ উদ্ধার ও ৩ মাদক কারবারি গ্রেফতার

» ডাকাত দলের মারধরে বাড়ির মালিকের মৃত্যু

» এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেখা যাবে যেভাবে

» সিলেটে চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মৃত ব্যক্তির সমালোচনা যে কারণে ইসলামে নিষিদ্ধ

ছবি সংগৃহীত

 

ধর্ম ডেস্ক : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ইসলামে মানুষের মর্যাদা আলাদা। মৃতব্যক্তিকে নিয়ে অশোভনীয় আচরণ করা যাবে না। একজন মুসলমান মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়। যার অর্থ, ‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।’ বন্ধু হোক বা শত্রু—কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। কারণ, সব মুসলমান ভাই ভাই।

 

মৃতব্যক্তির দোষ-ত্রুটি থাকলেও মনে রাখতে হবে, মানুষ হিসেবে আমার-আপনারও দোষ-ত্রুটি আছে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই মৃত ব্যক্তির সমালোচনা নয়। বরং সম্মানের সঙ্গে মৃত ব্যক্তির জানাজা, কবর জেয়ারত করতে বলা হয়েছে হাদিসে। যাতে আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করে নেক কাজ করতে পারি।

হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, সবার উচিত—মৃত ব্যক্তির নেক কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করা। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের নেক কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, তোমরা মৃতদেরকে গালমন্দ করবে না, কারণ তারা যে কর্ম করেছিল সেগুলোর কাছে তারা পৌঁছে গেছে। (বুখারি: ১৩৯৩)

 

মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া করা এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করা একজন মুমিনের কর্তব্য। হাদিস অনুযায়ী, যে তার ভাইয়ের দোষ আড়াল করবে, কেয়ামতের কঠিনতম পরিস্থিতিতে আল্লাহ তার দোষও গোপন রাখবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম: ২৫১০, আহমদ: ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫)

 

অন্যদিকে যারা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং ফাঁস করে, তাদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি, ভুলভ্রান্তি খুঁজে বের করো না। যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় ও প্রকাশ করে দেয়, স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেন। আর আল্লাহ যার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেন তাকে নিজের বাড়িতেই লাঞ্ছিত করেন।’ (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

 

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের দোষ-ত্রুটিগুলো খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আর এই সুযোগটি অনেকে গ্রহণ করে কারো মৃত্যুর পর তার দোষ-ত্রুটি প্রচার করার জন্য। কত জঘন্য আচরণ চিন্তা করুন! তারা মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। তাদের জানা উচিত, ইসলামি শরিয়তে মানুষ হলো এমন অনন্য সৃষ্টি, জীবিত হোক বা মৃত—একই সম্মান ও মর্যাদা লাভ করবে। এটি তার অধিকার। ‘মানবসন্তান জীবিত বা মৃত হোক সম্মানের পাত্র বলে গণ্য হবে।’ (আল মাবসুত: ৫৯/২)

 

অতএব, মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। উপরন্তু তার দাফন-কাফন, গোসল, জানাজা ইত্যাদি মর্যাদার সঙ্গে করতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির প্রতি উত্তম আচরণ করা, তার নেক কাজের আলোচনা করা, তার অধিকার নিশ্চিত করা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।  সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com