ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা, নারী-শিশু, কৃষক-শ্রমিক সব শ্রেণি পেশার মানুষ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে জনগণ বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে রাজি, তবু স্বৈরশাসন মেনে নিতে রাজি নয়। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, অন্যায়-অনিয়ম আর অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাদের শাসন-শোষণের অবসান ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক দেশ গড়ার পথে প্রধান বাধা দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর হয়নি।
জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন, মাফিয়া চক্রের বেনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে হওয়া গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের ব্যর্থতা হবে সবার ব্যর্থতা। গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
দেশ-বিদেশ থেকে নানা রকমের উস্কানিতেও জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না বলে মনে করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কোনো এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতাও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তবে, বিএনপি মনে করে সরকার এজেন্ডা সেটিংয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে না পারলে অভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী চক্র নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এর কিছু আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্ম একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। ভোট দিয়ে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি।
দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী এবং তারুণ্যের এই বৃহৎ অংশকে রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারেক রহমান।
রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি সবক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির আরও পরিবর্তন-পরিমার্জনকেও বিএনপি স্বাগত জানায়।
নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য নতুন দলের প্রয়োজন রয়েছে
উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরো নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এতে দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে। এ কারণে বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান কিংবা সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানা রকম কথা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য রীতি। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন, এটিই স্বাভাবিক। আমি বিশ্বাস করি, ফৌজদারি অপরাধের বিচার যেমন বিচারিক আদালতে হয় ঠিক তেমনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক আচরণের বিচার হয় জনগণের আদালতে।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি।
সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে দেশ নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, আসুন, আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা অর্জন করি।