সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টকে দূষণমুক্ত করতে পর্বতারোহীদের জন্য চালু করা ‘বর্জ্য জমা’ বা ডিপোজিট স্কিমটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল সরকার। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে কার্যকর থাকা এই নিয়মটি কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভারেস্টের আবর্জনা কমাতে ২০১৪ সালে এই ডিপোজিট স্কিম চালু করে নেপাল। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক পর্বতারোহীকে ৪ হাজার মার্কিন ডলার জামানত দিতে হতো। শর্ত ছিল, অভিযান শেষে অন্তত ৮ কেজি আবর্জনা সঙ্গে নিয়ে ফিরলে তবেই ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তবে এক দশকের বেশি সময় পার হলেও এভারেস্টে আবর্জনার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি।
কেন ব্যর্থ হলো স্কিমটি
নেপালের পর্যটন বিভাগের পরিচালক হিমালা গৌতম বলেন, এই প্রকল্পটি শুধু পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ হয়নি, বরং এটি প্রশাসনিক জটিলতা বাড়িয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অধিকাংশ আরোহীই জামানতের অর্থ ফেরত পেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা আবর্জনা নিচে নামিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যাটি অন্য জায়গায় রয়ে গেছে।
সাগরমাথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান নির্বাহী শেরিং শেরপা জানান, আরোহীরা সাধারণত নিচের দিকের ক্যাম্প থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে আনতেন। কিন্তু যেখানে আবর্জনার সমস্যা সবচেয়ে গুরুতর—এভারেস্টের ওপরের ক্যাম্পগুলোতে—সেখানে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ওপরের ক্যাম্পগুলোতে তাবু, প্লাস্টিকের ক্যান, খাবারের প্যাকেট এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেলে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পর্বতারোহী অভিযানের সময় গড়ে প্রায় ১২ কেজি বর্জ্য তৈরি করেন। সেখানে মাত্র ৮ কেজি আবর্জনা ফেরত আনার শর্ত থাকায় নিয়মটির ফাঁকফোকর থেকেই গেছে। পর্যাপ্ত তদারকির অভাবও প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।
আসছে নতুন ও কঠোর ব্যবস্থা
ডিপোজিট স্কিম বাতিলের পর নেপাল সরকার এখন ‘অফেরতযোগ্য’ (নন-রিফান্ডেবল) পরিচ্ছন্নতা ফি চালুর পরিকল্পনা করছে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যবস্থার আওতায়—
প্রত্যেক পর্বতারোহীকে ৪ হাজার মার্কিন ডলার অফেরতযোগ্য ফি দিতে হবে।
এই অর্থ দিয়ে একটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা তহবিল গঠন করা হবে।
ক্যাম্প–২ এলাকায় স্থায়ী চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হবে।
ওপরের ক্যাম্পগুলোতে নজরদারির জন্য বিশেষ ‘মাউন্টেন রেঞ্জার’ নিয়োগ দেওয়া হবে।
এই রেঞ্জাররা সরাসরি তদারকি করবেন, যাতে কোনো আরোহী ওপরের ক্যাম্পে আবর্জনা ফেলে যেতে না পারেন।
বিপন্ন এভারেস্টের পরিবেশ
পরিবেশবিদদের মতে, বর্তমানে এভারেস্টের বিভিন্ন অংশে প্রায় ৫০ টন আবর্জনা জমে আছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা থাকার কারণে আরোহীদের ফেলে যাওয়া মানববর্জ্যও সেখানে পচে না। ফলে পাহাড়ের নাজুক বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪০০ পর্বতারোহী ও তাদের সহকারীরা এভারেস্টে অভিযান চালান। নিয়ন্ত্রণ না হলে এই চাপ ভবিষ্যতে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন নিয়মটি সংসদে পাস হলে তা দ্রুত কার্যকর করা হবে। সূত্র: বিবিসি








