সত্যিই কি পাকিস্তানের চালে ‘ব্যর্থ’ হচ্ছে মোদির রুশ কূটনীতি?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : তবে কি ভারতের রক্তচাপ বাড়িয়ে এবার পাকিস্তানের সঙ্গে খনিজ তেলের চুক্তি করতে যাচ্ছে রাশিয়া? মস্কোর এমন ইসলামাবাদ-প্রেম প্রকাশ্যে আসতেই নয়াদিল্লির বিদেশনীতি নিয়ে ফের উঠল প্রশ্ন। সম্প্রতি ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার’ বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড)। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৃপাদৃষ্টির বদৌলতে পাকিস্তানে ডলার-বৃষ্টি চলছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে প্রকট হচ্ছে ভারতের চরম ব্যর্থতা।

এমনই তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাশিয়া-পাকিস্তানের সম্ভাব্য খনিজ তেলের চুক্তি নিয়ে সংবাদ সংস্থা আরআইএ’র কাছে মুখ খোলেন ইসলামাবাদের অর্থমন্ত্রী মুহম্মদ আওরঙ্গজেব। তার কথায়, ‘‘তরল খনিজ তেলের ভান্ডারের নিরিখে মস্কোকে বিশ্বশক্তি বলা যেতে পারে। ক্রেমলিন যদি আমাদের সঙ্গে এই খাতে সমঝোতা করে তা হলে আমরা খুশিই হব।”

বর্তমানে এ ব্যাপারে দু’পক্ষের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী।

সংবাদসংস্থা আরআইএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, ক্রেমলিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেল অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং পরিশোধনের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতা পেতে চাইছে ইসলামাবাদ। এ বছরের নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রুশ জ্বালানিমন্ত্রী সের্গেই সিভিলেভ। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান একটি খনিজ তেল পরিশোধনাগারকে উন্নত করার ব্যাপারে ক্রেমলিনের একাধিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। যদিও তাতে লগ্নির মাত্রা কেমন হবে, তা অবশ্য জানা যায়নি।

খনিজ তেলকে নিয়ে রাশিয়া-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতাকে ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে নারাজ বিশ্লেষকদের একাংশ। তাদের দাবি, গত পৌনে চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মস্কোর ‘তরল স্বর্ণের’র উপর যেভাবে আমেরিকা-সহ পশ্চিম দুনিয়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে, তাতে বিকল্প বাজার খোঁজা ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোনও রাস্তা নেই। অন্যদিকে, বর্তমানে ৮৫ শতাংশের বেশি খনিজ তেল আমদানি করে থাকে ইসলামাবাদ। এই খাতে খরচ কমানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিজেদের স্বার্থেই কাছাকাছি এসেছে রাশিয়া এবং পাকিস্তান। ২০২৩ সাল থেকে মস্কোর অপরিশোধিত তেল কেনা শুরু করে ইসলামাবাদ। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চিনে হওয়া ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিও-র (সাংহাই কো-অপারেটিভ অরগানাইজেশন) সম্মেলন চলাকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি পার্শ্ববৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সেখানে দিল্লি-মস্কো ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘‘তারপরেও ক্রেমলিনের সঙ্গে বাণিজ্যবৃদ্ধিতে কোনও সমস্যা নেই ইসলামাবাদের।”

তবে জ্বালানি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-পাকিস্তানের ‘কৌশলগত অংশীদারি’ কতটা মজবুত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আর্থিক দিক থেকে ‘সীমাহীন’ মার্কিন প্রভাব এড়িয়ে যাওয়া ইসলামাবাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে ২০২২ সালের কথা বলা যেতে পারে। ওই বছর জ্বালানি চুক্তি করতে ক্রেমলিন সফরে যান তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দেখা করেন পুতিনের সঙ্গে।

ওই ঘটনার কয়েক মাসের মাথাতেই কুর্সি হারান ইমরান খান। এ বছরের মে মাসে ভারতের সঙ্গে বাঁধে পাকিস্তানের। এই যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের সেনা সর্বাধিনায়ক বা সিডিএফ (চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘন ঘন সাক্ষাৎ করতে দেখা যায় তাকে। বর্তমানে তার নির্দেশমতোই পরিচালিত হচ্ছে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্রনীতি। ফলে মস্কোর সঙ্গে বড় কোনও চুক্তি করে নিশ্চয়ই সমস্যা বাড়াতে চাইবেন না মুনির, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা বা ডিএসসিএ-র (ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি) একটি চিঠিকে উদ্ধৃত করে বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করে করাচির জনপ্রিয় পাকিস্তান গণমাধ্যম ‘দ্য ডন’। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে অত্যাধুনিক করে তুলতে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাওয়ালপিন্ডিকে বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিমানের সংস্কারের পাশাপাশি ক্রিপ্টোগ্রাফিক-সহ বিপুল সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানা গেছে।

‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত ডিএসসিএ-র চিঠি অনুযায়ী, আগামী দিনে রাওয়ালপিন্ডির বিমানবাহিনীর জেট পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেবে মার্কিন বিমানবাহিনী। এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটিকে বাদ দিলে আমদানি-রফতানি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামাবাদকে ১২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অর্থ দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের খনিসমৃদ্ধ রেকো-ডিক এলাকায় লগ্নির নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তামা ও স্বর্ণের পাশাপাশি সেখানকার বিরল খনিজ দীর্ঘ দিন ধরেই কব্জা করতে চাইছেন তিনি।

গত ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের কার্যনির্বাহী বোর্ড। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় ওই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বলা হয়েছে, অনিশ্চিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় করতে ইসলামাবাদকে সঠিকনীতি বজায় রাখতে হবে। এর জন্য শেহবাজ শরিফ সরকারকে বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রকে মজবুত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে খনিজ তেল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ‘মেগা ডিল’ সেরে নিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে ইসলামাবাদ। বিরক্ত ওয়াশিংটন কোনও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপালে সেটা সহ্য করা দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে অন্ধকারে রেখে মস্কোর সঙ্গে শেহবাজ সরকার কোনও চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবেন বলে মনে করেন না কেউই।

তাছাড়া কয়েক মাস আগে পাকিস্তানের কাছে বিরাট খনিজ তেলের ভান্ডার আছে বলে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখান থেকে এই ‘তরল স্বর্ণ’ উত্তোলনের জন্য বিপুল লগ্নির কথাও বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ‘কুমিরছানা’র মতো একই কথা বলে রাশিয়ার থেকে ইসলামাবাদে বিনিয়োগ টানার ছক কষা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেহবাজ শরিফ সরকারের সেই চালাকি ক্রেমলিনের সামনে ধোপে টিকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তবে পুতিন মুখে যা-ই বলুন না কেন, নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে রুশ খনিজ তেল আমদানি কিছুটা কমিয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেই ঘাটতি পূরণ করতেই ইসলামাবাদের দিকে নজর ঘোরাতে বাধ্য হয়েছে ক্রেমলিন। মস্কোর এই মনোভাব আগামী দিনে ভারতের জাতীয় স্বার্থের আদৌ কোনও ক্ষতি করবে কি না, সেটাই এখন দেখার। সূত্র: আনন্দবাজার

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধান হলেন শামছুল ইসলাম

» ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছে সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর মরদেহ

» ভারতের হাইকমিশনারকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়া উচিত ছিল: হাসনাত

» ডামি নির্বাচনের প্রার্থীরা যেন আগামী নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন: রিফাত রশিদ

» লন্ডনের পথে জামায়াত আমির

» আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র গ্রেপ্তার, না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» ফ্যাসিবাদী দেশ হিসেবে বিশ্বে আবারও পরিচিত হতে চাই না : মঈন খান

» খালেদা জিয়ার শরীর ওষুধ গ্রহণে ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে: ডা. জাহিদ

» ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ কারবারি গ্রেফতার

» ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সত্যিই কি পাকিস্তানের চালে ‘ব্যর্থ’ হচ্ছে মোদির রুশ কূটনীতি?

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : তবে কি ভারতের রক্তচাপ বাড়িয়ে এবার পাকিস্তানের সঙ্গে খনিজ তেলের চুক্তি করতে যাচ্ছে রাশিয়া? মস্কোর এমন ইসলামাবাদ-প্রেম প্রকাশ্যে আসতেই নয়াদিল্লির বিদেশনীতি নিয়ে ফের উঠল প্রশ্ন। সম্প্রতি ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার’ বা আইএমএফ (ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড)। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৃপাদৃষ্টির বদৌলতে পাকিস্তানে ডলার-বৃষ্টি চলছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে প্রকট হচ্ছে ভারতের চরম ব্যর্থতা।

এমনই তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাশিয়া-পাকিস্তানের সম্ভাব্য খনিজ তেলের চুক্তি নিয়ে সংবাদ সংস্থা আরআইএ’র কাছে মুখ খোলেন ইসলামাবাদের অর্থমন্ত্রী মুহম্মদ আওরঙ্গজেব। তার কথায়, ‘‘তরল খনিজ তেলের ভান্ডারের নিরিখে মস্কোকে বিশ্বশক্তি বলা যেতে পারে। ক্রেমলিন যদি আমাদের সঙ্গে এই খাতে সমঝোতা করে তা হলে আমরা খুশিই হব।”

বর্তমানে এ ব্যাপারে দু’পক্ষের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী।

সংবাদসংস্থা আরআইএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, ক্রেমলিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তেল অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং পরিশোধনের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতা পেতে চাইছে ইসলামাবাদ। এ বছরের নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন রুশ জ্বালানিমন্ত্রী সের্গেই সিভিলেভ। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান একটি খনিজ তেল পরিশোধনাগারকে উন্নত করার ব্যাপারে ক্রেমলিনের একাধিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। যদিও তাতে লগ্নির মাত্রা কেমন হবে, তা অবশ্য জানা যায়নি।

খনিজ তেলকে নিয়ে রাশিয়া-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতাকে ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে নারাজ বিশ্লেষকদের একাংশ। তাদের দাবি, গত পৌনে চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে মস্কোর ‘তরল স্বর্ণের’র উপর যেভাবে আমেরিকা-সহ পশ্চিম দুনিয়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে, তাতে বিকল্প বাজার খোঁজা ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোনও রাস্তা নেই। অন্যদিকে, বর্তমানে ৮৫ শতাংশের বেশি খনিজ তেল আমদানি করে থাকে ইসলামাবাদ। এই খাতে খরচ কমানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নিজেদের স্বার্থেই কাছাকাছি এসেছে রাশিয়া এবং পাকিস্তান। ২০২৩ সাল থেকে মস্কোর অপরিশোধিত তেল কেনা শুরু করে ইসলামাবাদ। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চিনে হওয়া ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ বা এসসিও-র (সাংহাই কো-অপারেটিভ অরগানাইজেশন) সম্মেলন চলাকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি পার্শ্ববৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সেখানে দিল্লি-মস্কো ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘‘তারপরেও ক্রেমলিনের সঙ্গে বাণিজ্যবৃদ্ধিতে কোনও সমস্যা নেই ইসলামাবাদের।”

তবে জ্বালানি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-পাকিস্তানের ‘কৌশলগত অংশীদারি’ কতটা মজবুত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, আর্থিক দিক থেকে ‘সীমাহীন’ মার্কিন প্রভাব এড়িয়ে যাওয়া ইসলামাবাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে ২০২২ সালের কথা বলা যেতে পারে। ওই বছর জ্বালানি চুক্তি করতে ক্রেমলিন সফরে যান তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দেখা করেন পুতিনের সঙ্গে।

ওই ঘটনার কয়েক মাসের মাথাতেই কুর্সি হারান ইমরান খান। এ বছরের মে মাসে ভারতের সঙ্গে বাঁধে পাকিস্তানের। এই যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের সেনা সর্বাধিনায়ক বা সিডিএফ (চিফ অব ডিফেন্স ফোর্স) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘন ঘন সাক্ষাৎ করতে দেখা যায় তাকে। বর্তমানে তার নির্দেশমতোই পরিচালিত হচ্ছে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্রনীতি। ফলে মস্কোর সঙ্গে বড় কোনও চুক্তি করে নিশ্চয়ই সমস্যা বাড়াতে চাইবেন না মুনির, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা বা ডিএসসিএ-র (ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি) একটি চিঠিকে উদ্ধৃত করে বিস্ফোরক রিপোর্ট প্রকাশ করে করাচির জনপ্রিয় পাকিস্তান গণমাধ্যম ‘দ্য ডন’। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদের বিমানবাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে অত্যাধুনিক করে তুলতে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাওয়ালপিন্ডিকে বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিমানের সংস্কারের পাশাপাশি ক্রিপ্টোগ্রাফিক-সহ বিপুল সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানা গেছে।

‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত ডিএসসিএ-র চিঠি অনুযায়ী, আগামী দিনে রাওয়ালপিন্ডির বিমানবাহিনীর জেট পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেবে মার্কিন বিমানবাহিনী। এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটিকে বাদ দিলে আমদানি-রফতানি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামাবাদকে ১২৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অর্থ দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের খনিসমৃদ্ধ রেকো-ডিক এলাকায় লগ্নির নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তামা ও স্বর্ণের পাশাপাশি সেখানকার বিরল খনিজ দীর্ঘ দিন ধরেই কব্জা করতে চাইছেন তিনি।

গত ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানের জন্য ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের কার্যনির্বাহী বোর্ড। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দেয় ওই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বলা হয়েছে, অনিশ্চিত ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা আরও দৃঢ় করতে ইসলামাবাদকে সঠিকনীতি বজায় রাখতে হবে। এর জন্য শেহবাজ শরিফ সরকারকে বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রকে মজবুত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে খনিজ তেল নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ‘মেগা ডিল’ সেরে নিলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে ইসলামাবাদ। বিরক্ত ওয়াশিংটন কোনও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপালে সেটা সহ্য করা দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে অন্ধকারে রেখে মস্কোর সঙ্গে শেহবাজ সরকার কোনও চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবেন বলে মনে করেন না কেউই।

তাছাড়া কয়েক মাস আগে পাকিস্তানের কাছে বিরাট খনিজ তেলের ভান্ডার আছে বলে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখান থেকে এই ‘তরল স্বর্ণ’ উত্তোলনের জন্য বিপুল লগ্নির কথাও বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু, এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ‘কুমিরছানা’র মতো একই কথা বলে রাশিয়ার থেকে ইসলামাবাদে বিনিয়োগ টানার ছক কষা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেহবাজ শরিফ সরকারের সেই চালাকি ক্রেমলিনের সামনে ধোপে টিকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তবে পুতিন মুখে যা-ই বলুন না কেন, নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে রুশ খনিজ তেল আমদানি কিছুটা কমিয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেই ঘাটতি পূরণ করতেই ইসলামাবাদের দিকে নজর ঘোরাতে বাধ্য হয়েছে ক্রেমলিন। মস্কোর এই মনোভাব আগামী দিনে ভারতের জাতীয় স্বার্থের আদৌ কোনও ক্ষতি করবে কি না, সেটাই এখন দেখার। সূত্র: আনন্দবাজার

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com